Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোট কমলেও হতাশ নয় বিজেপি

জোরালো হাওয়াটা যে মুখ থুবড়ে পড়েছে, বোঝা গিয়েছিল সাত মাস আগেই। পুরভোটে খারাপ ফলের পরেও অবশ্য বিজেপি নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন, বিধানসভা ভোটে তাঁরা ভাল ফল করবেন। কোনও কেন্দ্রে না জিতলেও আসানসোল ও কুলটি শহরে ভাল ভোটপ্রাপ্তি খানিক স্বস্তি দিয়েছে তাঁদের। শিল্পাঞ্চলের অন্য নানা কেন্দ্রেও দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের তুলনায় অনেক ভোট কমেছে তাদের।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

জোরালো হাওয়াটা যে মুখ থুবড়ে পড়েছে, বোঝা গিয়েছিল সাত মাস আগেই। পুরভোটে খারাপ ফলের পরেও অবশ্য বিজেপি নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন, বিধানসভা ভোটে তাঁরা ভাল ফল করবেন। কোনও কেন্দ্রে না জিতলেও আসানসোল ও কুলটি শহরে ভাল ভোটপ্রাপ্তি খানিক স্বস্তি দিয়েছে তাঁদের। শিল্পাঞ্চলের অন্য নানা কেন্দ্রেও দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের তুলনায় অনেক ভোট কমেছে তাদের। তবে অস্তিত্ব বজায় রাখার পরে এ বার সংগঠন আরও দৃঢ় করার দিকেই নজর দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন বিজেপি নেতারা।

এ বারের ভোটে রাজ্য জুড়ে লড়াই ছিল মূলত তৃণমূল বনাম বাম-কংগ্রেস জোটের। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ৯টি আসনের ভোটেও মূলত তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। পাঁচটিতে তৃণমূল এবং চারটিতে জোট জয়ী হয়েছে। তবে আসানসোল উত্তর ও কুলটি কেন্দ্রে জোটকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। তবে দলীয় নেতৃত্বের দাবি, এ বার এই দু’টি আসনে তাঁরা জিতবেন বলে আশা করেছিলেন। তা না হওয়ায় ফল নিয়ে ইতিমধ্যে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে দলের অন্দরে।

গত লোকসভা ভোটে এই শিল্পাঞ্চলের সব ক’টি বিধানসভা আসনে ভাল ভোট পেয়েছিল বিজেপি। আসানসোল কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচটি আসনে তারাই এগিয়েছিল। কিন্তু সেই মোদী-হাওয়ার সেই রেশ যে ক্রমে কাটতে শুরু করেছে, আসানসোল পুরভোটে পরিষ্কার হয়ে যায়। ১০৬ ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টিতে জেতে বিজেপি। দলের নেতারা অবশ্য ভরাডুবির কথা মানতে চাননি। তাঁরা দাবি করেছিলেন, শাসক দলের সন্ত্রাসের জেরেই এমন ফল হয়েছে। তবে এ বার নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ির মধ্যে ভোটে ভাল ফলের আশা করছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব।

লোকসভা ভোটে শিল্পাঞ্চলে বিজেপি-র সবচেয়ে ভাল ফল হয়েছিল কুলটিতে। প্রায় ৮০ হাজার ভোট পেয়ে তৃণমূলের থেকে ৪০ হাজার ব্যবধানে এগিয়েছিল তারা। সেখানে এ বার এই কেন্দ্রে তারা প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে যা প্রায় ২০ হাজার কম। আসানসোল উত্তরে লোকসভায় তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি প্রায় ২৫ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিল। এ বার এই কেন্দ্রে তারা দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও তৃণমূলের চেয়ে প্রায় ২৪ হাজার ভোট কম পেয়েছে। আসানসোল দক্ষিণেও সে বার তৃণমূলের চেয়ে ২১ হাজার ভোট বেশি পায় গেরুয়া-বাহিনী। তবে এ বার সেখানে তাদের প্রাপ্ত ভোট ৭৬ হাজার থেকে কমে ৪৯ হাজার হয়েছে। ঠাঁই হয়েছে তৃতীয় স্থানে।

বিজেপির ভোট কমেছে বারাবনি, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর এবং দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্রেও। জামুড়িয়ায় প্রায় ৩৮ হাজার থেকে ২২ হাজার, বারাবনিতে প্রায় ৫০ হাজার থেকে এ বার মাত্র ২৫ হাজার, রানিগঞ্জে ৬২ হাজারের কাছাকাছি থেকে ৩২ হাজার, পাণ্ডবেশ্বরে প্রায় ৩৩ হাজার থেকে ১৩ হাজারে নেমে গিয়েছে তাদের ভোট। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে সাড়ে ৫৫ হাজার ভোট পেয়ে দু’নম্বরে ছিল বিজেপি। সেখানে এ বার পেয়েছে আঠারো হাজারের কিছু বেশি ভোট। দুর্গাপুর পূর্বেও তাদের ভোট ৪০ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ হাজারে।

দু’বছর আগের সেই সাফল্য ধরে রাখা গেল না কেন? বিজেপির জেলা সভাপতি (শিল্পাঞ্চল) তাপস রায় শুধু বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করেছি। তবে আশানুরূপ ফল না হলেও শিল্পাঞ্চলে বিজেপির অস্তিত্ব ফের প্রমাণ হয়েছে।’’ নেতাদের দাবি, এই ভোটপ্রাপ্তির উপরে ভর করেই আগামি দিনে শিল্পাঞ্চলে দলকে আরও মজবুত ভিতের উপরে দাঁড় করানো যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE