Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ঘুষ-কাণ্ডে হাতেনাতে পাকড়াও আধিকারিক

শুক্রবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশালের বিশেষ আদালাতে পেশ করা হলে সরকারি কৌঁসুলি তমাল মুখোপাধ্যায় এবং শশী সিংহ দাবি করেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্বজিৎবাবুর অফিস এবং দুর্গাপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে ৫ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে সেল-কো-অপারেটিভ এলাকার এই বাড়ির নীচের তলায় ভাড়া থাকতেন ধৃত বিশ্বজিৎ সরকার।—নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে সেল-কো-অপারেটিভ এলাকার এই বাড়ির নীচের তলায় ভাড়া থাকতেন ধৃত বিশ্বজিৎ সরকার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

ঘুষ নিতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন বর্ধমানের মোটর ভেহিক্যালস ইনস্পেক্টর বিশ্বজিৎ সরকার দুর্নীতি দমন শাখার অফিসারেরা। একই সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর দুই সঙ্গীকেও। পুলিশ জানিয়েছে ধৃত ওই দুই সঙ্গীর নাম কমল প্রসাদ এবং শিশির রায়। ধৃত বিশ্বজিৎ সরকার ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পূর্ব বর্ধমানের উল্লাসমোড়ের কাছে পরিবহণ দফতরের শক্তিগড় চেক পোস্টের দায়িত্বে ছিলেন। কমল এবং শিশির ওই চেক পোস্টের পাশে পার্কিং লটের ম্যানেজার। অভিযুক্তেরা এক পরিবহণ ব্যবসায়ীর কাছ থাকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শুক্রবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশালের বিশেষ আদালাতে পেশ করা হলে সরকারি কৌঁসুলি তমাল মুখোপাধ্যায় এবং শশী সিংহ দাবি করেন, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্বজিৎবাবুর অফিস এবং দুর্গাপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে ৫ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ৪ লক্ষ টাকা বাদে বাকি টাকা বিশ্বজিৎবাবুর আফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে। পরে বিচারক ধৃত তিনজনকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন,চলতি সপ্তাহেই রামপুরহাটের পরিবহন ব্যবসায়ী আকবর হাসান দুর্নীতি দমন শাখায় অভিযোগ করেন, পরিবহন দফতরের ওই অফিসার গত মাসের ২১ তারিখ ফোন করে তাঁকে শক্তিগড়ের ওই অফিসে দেখা করতে বলেন। তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগকারীর দাবি, তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজিতবাবুর সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখা করলে তিনি এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দিলে অভিযোগকারীর সব ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, পরিবহণ দফতরের ওই চেক পোস্টের মাধ্যমে ট্রাকের ওভারলোডিং থেকে শুরু করে মোটর ভেহিক্যালস আইন মানা হচ্ছে কি না তা নজরদারি চালানো হয়। যার মূল দায়িত্বে ছিলন ওই অভিযুক্ত। অফিসে ডেকে নিয়ে ব্যবসা বন্ধের হুমকি মেলার পরেই আকবর গোয়েন্দারে কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

গোয়েন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মাফিক ওই টাকা নিয়ে আকবর পৌঁছন বিশ্বজিতের অফিসে। তবে দরাদরির পরে ৯০ হাজার টাকায় রফা হয়। এরপরেই বিশ্বজিৎ ওই টাকা তাঁর সঙ্গী কমল প্রসাদের হাতে তুলে দিতে নির্দেশ দেন। সেই মতো মোটর ভেহিক্যালস পার্কিং লটে আকবর টাকা কমল প্রসাদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় তাঁকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। ধরা হয় শিশিরকে। তদন্তকারীদের দাবি, ওই দু’জনকে নিয়ে বিশ্বজিতের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ভিতরে থাকা তিনটি আলমারি থেকে ৫ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

পরে ওই দিন রাতেই দুর্গাপুরের সেল কো-অপারেটিভ এলাকার সুকুমার রায় পথের ২০ নম্বর বাড়ির একতলার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় পরিবহণ দফতরের ওই অভিযুক্ত অফিসারকে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে বাকি টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই বাড়িটির মালিক দুর্গাপুর ইস্পাতের প্রাক্তন এক মহিলা কর্মী। তাঁদের বাড়িতে বিশ্বজিতবাবু ভাড়া থাকার কথা স্বীকার করে নিলেও তিনি শুক্রবার কিছু বলতে চাননি। প্রতিবেশীরাও কিছু জানাতে পারেননি ওই অফিসার সম্পর্কে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দার জানান, প্রায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে শক্তিগড়ের ওই চেক পোস্টে কর্মরত ছিলেন অভিযুক্ত। মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে লরি এবং ট্রাক মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজিৎবাবু বেআইনি ভাবে মোটা টাকার বিনিময়ে বালি ও পাথরের ওভারলোডিং লরি ও ট্রাকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে সেগুলিকে ছেড়ে দিতেন। বুধবার অভিযোগ মেলার পরেই সেখানে হানা দিয়ে অভিযুক্তদের পাকড়াও করা হয় হাতে নাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bribe Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE