পদত্যাগের পরে বসে সভাপতি ও কর্মাধ্যক্ষেরা। নিজস্ব চিত্র।
দলেরই ব্লক সভাপতির একাধিপত্যে অসম্মানিত হওয়ার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করলেন বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ ৬ কর্মাধ্যক্ষ। বুধবার জেলা সভাধিপতি ও বর্ধমান (সদর) মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তাঁরা। প্রতিলিপি পাঠানো হয় জেলাশাসক ও বর্ধমান ২-এর বিডিও-র কাছেও। তবে শুধু চিঠি দিয়েই ক্ষান্ত হননি তাঁরা, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মাধ্যক্ষের সামনে ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল দত্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগড়ে দেন। যদিও অভিযোগ পাত্তা দিতেই রাজি নন ব্লক সভাপতি শ্যামলবাবু।
তবে তৃণমূলের অন্দরের খবর, পদত্যাগের কারণ হিসেবে যাই লেখা থাকুক না, আসলে ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতার দখল নিয়েই সভাপতি অম্বিকা যশ ও শ্যামলবাবুর মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। এলাকার বিডিও শ্যামলবাবুর কথা মতো কাজ করায় দ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়ছে বলেও অভিযোগ। এতেই ‘অসম্মানিত’ হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অম্বিকা যশ-সহ ৬ জন কর্মাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন বলে খবর। পদত্যাগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্লকের জেলা পরিষদের সদস্য তথা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিস। তাঁর অভিযোগ, “শ্যামলবাবু একাই তিনটে পদ দখলে রেখেছেন। বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে এড়িয়ে শ্যামলবাবুকে নিয়ে কাজ করার ফলেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পুরো ঘটনা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। বিডিও নিরপেক্ষতা বজায় রাখছেন না বলে জেলাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানানো হবে।” তবে বিডিওকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অম্বিকা যশ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় সাহা, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বাসরী বেসরা, বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সুনীল মুর্মু, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ শক্তিপদ পাল এবং বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নরত্তম কর্মকারদের সই সম্বলিত মহকুমাশাসকের কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের দু’বছর হতে চললেও তাঁরা পঞ্চায়েত সমিতির কোনও কাজ জানতে পারেন না বা কাজ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন না। সভাপতির অনুমোদন ছাড়াই অনেক কাজ খাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। এই অবস্থায় তাঁদের দাবি, “জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগনের কাজ করতে পারছি না। সে ক্ষেত্রে পদ আঁকড়ে থেকে লাভ কী? সে জন্যই আমরা পদত্যাগ করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি।” তাঁদের আরও অভিযোগ, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হওয়ার সুবাদে শ্যামলবাবু পঞ্চায়েত সমিতিতে স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। আর তাঁকে মদত যোগাচ্ছেন স্বয়ং বিডিও। সে জন্য অর্থ উপ সমিতি কিংবা সাধারণ সভার বৈঠক ছাড়াই একের পর এক কাজের অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে, টেন্ডারও হচ্ছে না। গত তিন-চার মাস ধরে মাসিক সাধারণ সভা ডাকাই হয়নি বলেও তাঁদের দাবি। সভাপতি অম্বিকা যশ বলেন, “দুর্নীতি করার জন্যই সহ সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে জোট বেঁধে বিডিও আমাকে পঞ্চায়েত সমিতির কাজে আড়ালে করে রেখে দিয়েছেন।” তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় বহু পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য গাছ প্রতি রবিবার কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গত রবিবার একটি গাড়িকে আটকও করেছিল গ্রামবাসীরা। কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় সাহা বলেন, “আমরা তো কোনও কাজই করতে পারছি না এলাকায়। মানুষের কাছে মার খাওয়ার উপক্রম। তার চেয়ে পদে না থাকাই ভাল।” একই কথা বলেন শক্তিপদ পাল। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য ও কেন্দ্রের অর্থ কমিশনের টাকায় কোথায় কী কাজ হচ্ছে আমরা জানতে পারছি না। আমাদের এলাকাতেও কাজ হচ্ছে না। শ্যামলবাবুর খামখেয়ালীপনার জন্য পঞ্চায়েতগুলিতেও সমস্যা হচ্ছে।”
তবে অভিযোগ শুনে শ্যামলবাবু শুধু বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিতে বৈঠক ডাকার অধিকারী সভাপতি। আমি কে? সব ফালতু অভিযোগ। নির্দিষ্ট ভাবে কী কী অভিযোগ করা হয়েছে, জানার পরে বিস্তারিত ভাবে বলতে পারব।”
বর্ধমানের (সদর) মহকুমাশাসক অরুণ রায় বলেন, “আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy