প্রতীকী ছবি।
প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হলুদ রঙের বৃষ্টি হয়েছে কিছুক্ষণের জন্য। এমনই দাবি করেছেন আউশগ্রামের দিগনগরের বাসিন্দারা।
স্থানীয় ভাটগোন্না এলাকার বাসিন্দা সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গদাধর চট্টোপাধায়েরা জানান, বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ হঠাৎই গোটা এলাকায় হলুদ রঙের বৃষ্টি পড়তে থাকে। মিনিট চারেক ধরে এটা চলতে থাকে। দিগনগর-১ পঞ্চায়েত প্রধান মিনতি কৈবর্ত্য জানান, দিগনগরের কিছুটা এলাকা জুড়ে এই ঘটনার কথা শোনা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ রকম হলুদ রঙের বৃষ্টি আগে কখনও দেখা যায়নি।
এ রাজ্যে হলুদ বৃষ্টির ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। একে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা হয়। বছর দুয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলঘাটা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া কিছু গ্রামে এই ধরনের হলুদ বৃষ্টি হয়েছিল। তবে সাধারণত, শিল্পাঞ্চল এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, অ্যাসিড মিশ্রিত থাকায় বৃষ্টির জলের রং হলুদ। সাধারণত, কলকারখানা থেকে বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়ায় সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। জলের সঙ্গে ওই অ্যাসিড মিশে বৃষ্টির মাধ্যমে নেমে এলে তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা হয়। অ্যাসিড বৃষ্টিতে ফসল, গাছপালার ক্ষতি হয়। ওই বৃষ্টির জল মানুষের গায়ে লাগলে চামড়া পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
আউশগ্রামের মতো কৃষিপ্রধান এলাকায় কেন এরকম হল, তা বুঝতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা মানুষ জন। তবে এ সময় বিভিন্ন জায়গাতেই ধান জমিতে নাড়া পোড়ানো চলছে। পরিবেশবিদদের ধারণা, তার প্রভাবেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান বিডিও (আউশগ্রাম-১) চিত্তজিৎ বসু। কৃষি দফতর অবশ্য জানিয়েছে, হলুদ বৃষ্টির কথা তাদের জানা নেই। আউশগ্রাম ১ ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবতনু মাইতি বলেন, ‘‘এই এলাকায় তো কল-কারখানা নেই। আছে শুধু একটি চালকল। তাই অ্যাসিড বৃষ্টি হয়েছে, তা বিশ্বাস হচ্ছে না। তবু ঠিক কী হয়েছে, খতিয়ে দেখব।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষকেরা জানান, শিল্পাঞ্চল এলাকা না হলেও হলুদ-বৃষ্টি হতে পারে। কারণ, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল খুব বেশি দূরে নয়। সেখানে সালফার, নাইট্রোজেন মিশ্রিত ধোঁয়া অবিরাম বেরোচ্ছে। ভূগোলের গবেষক সনৎকুমার গুছাইতের দাবি, ‘‘দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে যে দূষিত বায়ুপুঞ্জ তৈরি হয়, তা আউশগ্রামে এসে ঘনীভূত হতে পারে। তার জেরেও এই হলুদ বৃষ্টি হতে পারে। এটা শীতকালেই ঘটে।’’ রসায়নের শিক্ষক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘নাইট্রোজেন অক্সাইড মেশা বাতাস ধীরে ধীরে দুর্গাপুরের দিক থেকে আউশগ্রামে এসে থাকতে পারে। সেই বাতাস উপরের দিকে উঠতে গেলেই ফেটে গিয়ে এই ধরনের বৃষ্টি হয়। অনেক সময়ে এমন অ্যাসিড বৃষ্টির পরে সাধারণ বৃষ্টিও নামে।’’ অন্য মত হল, পরাগরেণু থেকে বা এক সঙ্গে উড়ে যাওয়ার সময়ে মৌমাছিরা মলত্যাগ করলে এমন ঘটে থাকতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy