তৈরি হয়েছে শুধু দেওয়াল। মেমারিতে। নিজস্ব চিত্র
মাথার উপরে পাকা ছাদের আশায় টাকা জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। মাটির ঘর ভেঙে পুকুরপাড়, বাগান, রাস্তার ধারে ত্রিপল টাঙিয়ে অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করেছেন। বছর ঘুরে যাওয়ার পরে কেউ পেয়েছেন শুধু বাড়ির ভিত, কেউ তিন দিকের দেওয়াল। ‘সবার জন্য গৃহ’ প্রকল্পের এমন পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে মেমারি শহরে।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে ওই প্রকল্পে মেমারি শহরে ৪০২টি বাড়ি অনুমোদন হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্র দেড় লক্ষ ও রাজ্য ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা অনুদান দেবে। উপভোক্তাকে দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। উপভোক্তারা জানান, এক বছর আগে ৩৪৬ বর্গফুটের বাড়ির জন্য তাঁরা পুরসভায় টাকা জমা দেন। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পর্যায়ক্রমে অনুদানের টাকাও আসে। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, টাকা আসার পরেই শাসকদলের কিছু কর্মী-সমর্থক ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে ইট-বালি সরবরাহের বরাত নিয়ে যান। বেশ কিছু ওয়ার্ডে বাড়ি তৈরির আশ্বাস দিয়ে তৃণমূল কর্মীরা টাকা নিয়ে গিয়েছেন বলে দাবি বাসিন্দাদের।
শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পের কোনও বাড়িরই ছাদ তৈরি হয়নি। কিছু বাড়ির তিন দিক ঘেরা হয়েছে তো কোথাও শুধু ভিতটাই গড়া হয়েছে। অনেকে পুকুরপাড় বা বাগানে ছাউনি টাঙিয়ে দিন গুজরান করছেন এখনও। হরেকৃষ্ণপল্লির যোগেন্দ্র চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ছেলেরা বাড়ি তৈরির জন্য সরকারের কাছে পাওয়া টাকা নিয়ে গিয়েছে। বছর ঘুরতে চললেও মাথার উপরে ছাদ পেলাম না।’’ কিছুটা দূরেই মন্দাকিনি মণ্ডলেরা বাস করছেন ত্রিপলের ছাউনিতে। তাঁরা বলেন, ‘‘দরমার বেড়া, টালির চালের ঘরে ছিলাম। বাড়ি তৈরির লোভে সেটা ভেঙে পুকুরপাড়ে এসেছি। এক বছরে শুধু ভিত তৈরি হয়েছে।’’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শঙ্করী রায়, শ্যামলী রায়, মহাদেব রায়দেরও অভিযোগ, ‘‘পার্টির ছেলেদের হাতে টাকা দিয়েছি। কিন্তু তারা এখনও ঘর তৈরি করে দিতে পারেনি।’’
প্রকল্পের বাড়ি তৈরি নিয়ে কয়েক মাস আগে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষও হয়। সিপিএমের মেমারি শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সনৎ সিংহের অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার ভাগের টাকা দিতে পারছে না বলেই গরিব মানুষেরা সমস্যায় পড়েছেন। এখন শোনা যাচ্ছে, মেমারি পুরসভা উপভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে কেন্দ্রের টাকাতেই বাড়ি তৈরি করে দেবে।’’ ‘পার্টির ছেলে’দের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করছেন তৃণমূলের একাংশই। দলের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রঞ্জিত বাগের কথায়, ‘‘আমার ওয়ার্ডে না হলেও, শহরের বেশ কিছু ওয়ার্ডে এই দৌরাত্ম্য রয়েছে।’’
মেমারির উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্তের অবশ্য যুক্তি, ‘‘উপভোক্তাদের জায়গার সমস্যা, টাকা আসতে দেরি, প্রতি মুহূর্তে নিয়ম পাল্টানোর মতো নানা কারণে প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে ফের টাকা এসে গেলে সমস্যা মিটে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy