Advertisement
১১ মে ২০২৪

মারের ভিডিও দেখে কালনায় ধৃত ৮

ধুন্ধুমার বেধেছিল সোশ্যাল মিডিয়া মারফত রটে যাওয়া গুজবের জেরে। গণপিটুনিতে মৃত্যু, পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ, গাড়ি ভাঙচুরে শুক্রবার অশান্ত হয়ে ওঠে কালনা।

বাঁ দিকে, গুজবে কান না দেওয়ার আর্জিতে মিছিল। ডান দিকে, ধৃতদের তোলা হচ্ছে আদালতে। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, গুজবে কান না দেওয়ার আর্জিতে মিছিল। ডান দিকে, ধৃতদের তোলা হচ্ছে আদালতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

ধুন্ধুমার বেধেছিল সোশ্যাল মিডিয়া মারফত রটে যাওয়া গুজবের জেরে। গণপিটুনিতে মৃত্যু, পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ, গাড়ি ভাঙচুরে শুক্রবার অশান্ত হয়ে ওঠে কালনা। সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিয়েই সেই ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করা হল। পুলিশ জানায়, বাকি অভিযুক্তদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহনিয়া জানান, মৃতের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এলাকায় ছেলেধরা, জঙ্গি ও ডাকাতেরা ঘোরাফেরা করছে, মাসখানেক ধরে ‘ফেসবুক’ ও হোয়াটসঅ্যাপ’-এ এমন ‘মেসেজ’ পাচ্ছিলেন কালনা ও আশপাশের মানুষজন। শুক্রবার কালনার বারুইপাড়ায় নদিয়ার হবিবপুরের পাঁচ জনকে ছেলেধরা সন্দেহে রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে জনতা। এক জনের মৃত্যু হয়। বাকিদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়াও নানা এলাকায় সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। ধাত্রীগ্রামে গৃহস্থালীর জিনিস বিক্রি করতে আসা জনা পাঁচেক মহিলাকে আটকে রাখে জনতা। উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের উপরে হামলা হয়।

পুলিশ জানায়, ঘটনায় জড়িতদের খোঁজ পেতে বারুইপাড়ায় ঘটনাস্থলে এক দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি ছিল অস্পষ্ট। এরই মধ্যে মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের কাছেও পৌঁছয় সেটি। তা দেখেই ঘটনায় জড়িতদের অনেককে চিহ্নিত করা হয় বলে পুলিশকর্তারা জানান। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দোষীদের শনাক্ত করা হয়ে গিয়েছে। পলাতকদের খোঁজ চলছে।’’

শুক্রবার সন্ধে থেকেই পুলিশের বড বাহিনী শহরে তল্লাশি শুরু করে। বারুইপাড়া, ধাত্রীগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২১ জনকে আটক করা হয়। পুলিশকর্তারা জানান, ভিডি়ও-তে ঘটনায় জড়িতদের দেখে তাঁরা বেশ অবাক। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেকেই শিক্ষিত যুবক। তাঁরাও গুজবে মেতে কিছু মানুষকে এমন নির্মম ভাবে মারধর করছেন, তা আমাদের অবাক করেছে।’’ ধৃত আট জনের মধ্যে সাত জন বারুইপাড়ার। তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। ধাত্রীগ্রামে পুলিশের উপরে হামলায় মদত দেওয়ায় স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতেই কালনা মহকুমার ৪৭টি পঞ্চায়েতের প্রধান, পাঁচ বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সদস্য, স্কুল পরিদর্শক-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকা হয়। ছিলেন এলাকার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজনারায়ণবাবু, মহকুমাশাসক, এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায়-সহ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। বৈঠকে জনপ্রতিনিধিরা জানান, গুজবের জেরে স্কুলে পড়ুয়া যাওয়া কমছে। প্রশাসনের কর্তারা সকলকে নিজেদের এলাকায় এই গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারের নির্দেশ দেন। কী ভাবে প্রচার করতে হবে তা-ও বোঝানো হয়। প্রশাসনের তরফে এলাকায় হাত-মাইকে করে প্রচার করা হয়, কোনও রকম গুজব ছড়ালেই শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

শুক্রবার এক বহুজাতিক সংস্থার জিনিস বিক্রি করতে ধাত্রীগ্রামে গিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা তপতী ভট্টাচার্য। ছেলেধরা সন্দেহে তাঁকে আটক করে জনতা। শনিবারও তিনি রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ জনা কুড়ি লোক ঘিরে ধরে শাসাতে শুরু করে। এলাকার এক পরিচিত সেখান থেকে বাঁচিয়ে বাজারে নিয়ে যান। এক টোটো চালকের সাহায্যে কালনা থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে।’’

তবে যে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যে ভাবে গুজব ছড়িয়েছে তাতে কারা জড়িত, সেই তদন্তে এখনও বিশেষ অগ্রগতি হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধ চিহ্নিত করার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আমাদের নেই।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের অভিযোগ, ‘‘একটি রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট সংগঠন অশান্তিতে মদত দিচ্ছে বলে শুনছি। পুলিশকে বিশদে খোঁজ নিতে বলব।’’ জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানান, যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্ট করছেন তাঁদের গতিবিধির উপরে নজরদারি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Police Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE