Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ইন্দ্র বেঁচে নেই, মানতে পারছেন না পড়শিরা

পড়শিরা এখনও ভাবতেই পারছেন না, ইন্দ্রজিৎ নেই। সকালে চা খেয়ে বেরোল যে ছেলেটা, বিকেলে তার রক্তাক্ত দেহ দেখে থম মেরে গিয়েছিলেন তাঁরা। শনিবার, পুরভোটের দিন সকাল থেকেই বেনজির সন্ত্রাস দেখেছে কাটোয়া। লাগামহীন বোমা, গুলি ছুটেছে শহরের পথে। ভোটের সকালে রাস্তায় ভোটারদেরই দেখা মেলেনি। এই সন্ত্রাসেরই বলি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী ইন্দ্রজিৎ সিংহ।

গুলিতে জখম কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

গুলিতে জখম কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৯
Share: Save:

পড়শিরা এখনও ভাবতেই পারছেন না, ইন্দ্রজিৎ নেই। সকালে চা খেয়ে বেরোল যে ছেলেটা, বিকেলে তার রক্তাক্ত দেহ দেখে থম মেরে গিয়েছিলেন তাঁরা।

শনিবার, পুরভোটের দিন সকাল থেকেই বেনজির সন্ত্রাস দেখেছে কাটোয়া। লাগামহীন বোমা, গুলি ছুটেছে শহরের পথে। ভোটের সকালে রাস্তায় ভোটারদেরই দেখা মেলেনি। এই সন্ত্রাসেরই বলি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী ইন্দ্রজিৎ সিংহ। ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী ইলা হাজরার বাড়ি থেকে ফেরার সময় সকাল ৮টা নাগাদ পাড়ারই প্রাথমিক স্কুলের বুথের কাছে একটি মাঠে দুষ্কৃতীরা ইন্দ্রজিতের রাস্তা আটকায়। তাঁর মাথায় ও পেটে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বছর চৌত্রিশের ওই যুবককে। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য জুড়ে এ দিনের পুরভোটের একমাত্র বলি তিনিই।

এ দিন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ইমারজেন্সির সামনে রক্তাক্ত দেহ দেখেও ইন্দ্রজিতের ভাই সুরজিৎ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না দাদা নেই। বারবার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলছিলেন, ‘‘এ হতে পারে না।’’ একই কথা প্রতিবেশীদেরও। তাঁরাই জানান, কাটোয়ার পঞ্চবটিপাড়ায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। বিপদে-আপদে সকলের পাশে থাকতেন। সম্প্রতি কাটোয়া স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি স্টলও দেন তিনি। স্টেশনের বাকি হকারদেরও প্রিয় ছিলেন। ইন্দ্রজিতের মা সুষমাদেবী এ দিন বারবারই ছেলের মৃত্যুর জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর গলায় ধরা দিয়েছে হাহাকার। কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘‘আমার সোনা ছেলেটার প্রাণ নিয়ে নিল কংগ্রেস। চা খেয়ে সকাল ছ’টার সময়ে বেরিয়ে গেল। আর ফিরল না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সকালেই কংগ্রেস আমাকে বলে ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই। গোলমাল হবে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই খবর পাই।’’ সুষমাদেবীকে সান্তনা দিতে দিতে এক পড়শি বাচ্চু মণ্ডল চৌধুরীও বলেন, ‘‘ইন্দ্র নেই ভাবতেই পারছি না।’’

দলীয় কর্মীর মৃত্যুতে শোক স্তব্ধ তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও। গুসকরার তৃণমূল নেত্রী মল্লিকা চোঙদার বলেন, ‘‘এ বারের পুরভোটে ইন্দ্রজিতের বাইকে চড়ে প্রচারে গিয়েছি। বিনয়ী ছেলেটার যে এমন পরিণতি হবে ভাবিনি।’’

তৃণমূল সূত্রে খবর, তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভোটের দিন তাঁকে ‘টার্গেট’ করেছিল কংগ্রেস। যদিও কংগ্রেস তা মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা যখন বুথ দখল করছিল, তখন কংগ্রেসের এক কর্মীর হাতে গুলি লাগে। ওই বহিরাগতদের গুলিতেই প্রাণ হারান ইন্দ্রজিৎ।

কংগ্রেস যদিও এই দাবি মানছে না। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, প্রবীণ কৃষ্ণচন্দ্র সাহাও গুলিতে আহত হয়েছেন। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ির সামনেই ঘটনাটি ঘটে। কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ইন্দ্রজিতের কপালে ও পেটে গুলি করে। আমারও কান ঘেঁষে গুলি বেরোয়। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE