Advertisement
১১ মে ২০২৪

পাইপ ফুটো করে জল চুরি, সঙ্কটে জামুড়িয়ার গ্রাম

ভোট আসে, ভোট যায়। শাসক-বিরোধী দু’পক্ষের তরফেই আশ্বাস মেলে সমস্যা সমাধানের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোথাও মূল পাইপলাইনের বিভিন্ন জায়গায় কল লাগিয়ে জল নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

জলের অপেক্ষায়। সার্থকপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জলের অপেক্ষায়। সার্থকপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

ভোট আসে, ভোট যায়। শাসক-বিরোধী দু’পক্ষের তরফেই আশ্বাস মেলে সমস্যা সমাধানের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোথাও মূল পাইপলাইনের বিভিন্ন জায়গায় কল লাগিয়ে জল নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দাদের একাংশ। কোথাও বা আবার পাইপ লাইন থাকলেও শুরু হয়নি জল সরবারহের কাজ— আর এই দুই সমস্যার গেরোয় পড়ে গরমের শুরুতেই ফি বছর জল সঙ্কটে জেরবার হওয়া কার্যত দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে জামুড়িয়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সার্থকপুর ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালানপুর গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে।

বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেল, প্রায় এক দশক আগে আসানসোলের কালাঝড়িয়া জল প্রকল্প থেকে পাইপলাইন পেতে বালানপুর গ্রামে দু’টি কল বসানো হয়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবত ওই কল দু’টি থেকে জল পড়ে না। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মূল পাইপলাইনের বিভিন্ন জায়গায় ফুটো করে বাসিন্দাদের একাংশ প্লাস্টিকের কল লাগিয়ে বাড়ির জন্য জল নিয়ে যাচ্ছেন। জল নেওয়া হয়ে গেলে কলগুলি খুলে নেওয়া হয়। বাউরি পাড়ার বাসিন্দা অমিত বাউরি ও সিংহ পাড়ার সুবল সিংহদের অভিযোগ, ‘‘এর জেরে গ্রামের অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলে যাঁরা থাকেন, তাঁরা জলই পান না।’’ বর্ষাকালে আবার অন্য সমস্যাও দেখা যায়। পাইপ লাইনের বিভিন্ন ফুটো দিয়ে বাইরের আবর্জনাও ঢুকে যায়। এর জেরে এলাকায় প্রতি বছর ডায়েরিয়া-সহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ দেখা দেয় বলে জানান বাসিন্দারা। অমিতবাবুরা জানান, জল সমস্যা মেটাতে জামুড়িয়া পুরসভার তরফে মাঝিপাড়ায় রাস্তার পাশে একটি চাপাকল বসানো হয়। ওই একটিমাত্র কলের উপরেই ভরসা করতে হয় মাঝিপাড়া ও বাউরি পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দাদের। ওই কলটি ছাড়া ভরসা বলতে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের একটি কুয়ো। জল সংযোগের কোনও লাইন না থাকায় পড়ুয়াদেরও ওই কুয়োর জলই পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। ২০১৪ সালে সিংহ পাড়ায় চাপাকল বসানো হলেও সেটিও মাসখানেক ধরে বিকল। দুর্গামন্দিরের সামনে বসানো চাপাকলটিও বছর দু’য়েক ধরে খারাপ। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, হরি মন্দিরের সামনের চাপাকলটির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ায় জলের গতি অত্যন্ত ধীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের এক আধিকারিকেরও অভিযোগ, আসানসোল থেকে বালানপুরে জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বালানপুরের জল পৌঁছনোর আগেই বীজপুর ও কাটাগড়িয়ায় মূল পাইপলাইন থেকে অবৈধভাবে পাম্প লাগিয়ে জল টেনে নেন অনেকেই। ওই আধিকারিকের আরও দাবি, পুরসভা উদ্যোগ না নিলে সমস্যার সমাধান করা কার্যত অসম্ভব।

পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সার্থকপুরেও জল সঙ্কটের ছবিটা মোটামুটি একই রকম। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের সাহায্যে অজয়ের পাড়ের জল প্রকল্প থেকে গ্রাম পর্যন্ত পাইপ লাইন বসায় পুরসভা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই পাইপ লাইন থেকে জল মেলে না বলে জানান সার্থকপুরের বাসিন্দাদের একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দা অঞ্জন কাঞ্জিলালের অভিযোগ, ‘‘গ্রামে সাতটা চাপাকল রয়েছে। কিন্তু গরমের শুরু থেকেই ৫টা কলে আর জল পড়ে না। শীতের শেষ থেকে এলাকার পুকুরগুলিও শুকিয়ে যায়।’’ পুরসভা সপ্তাহে দু-তিন দিন জলের ট্যাঙ্কার পাঠালেও চাহিদার তুলনায় তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি বাসিন্দাদের। এই অবস্থায় গ্রামের সীমান্তে পরিত্যক্ত একটি খনিমুখের জলের উপরেই বাসিন্দাদের ভরসা করতে হয় বলে জানান অঞ্জনবাবু।

জামুড়িয়ার পুরপ্রধান রাজশেখর মুখোপাধ্যায়ের যদিও আশ্বাস, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই ওই ২ এলাকায় জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE