জাঁক: রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডে জগন্নাথ মন্দিরের সামনে রথ। ফাইল চিত্র
রথের দড়িতে হাত না ছোঁয়ালে অনেকেরই মনবাসনা পূর্ণ হয় না। তাই রথের দিন শতকাজ ফেলে রেখেও রথের দড়িতে টানতে যাওয়া চাই। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে জাঁকজমকের সঙ্গেই হয়ে থাকে রথযাত্রা। কোথাও বসে মেলা, আবার কোথাও লোক সংস্কৃতির উৎসব।
দুর্গাপুরের ইস্পাতগরীর রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডের জগন্নাথ মন্দির থেকে রথ যায় রাজীব গাঁধী মেলা ময়দানে। সেখানে উল্টো রথ পর্যন্ত সেটি রাখা থাকে। রথযাত্রা উপলক্ষে রাজীব গাঁধী মেলা ময়দানে একটি বিশাল মেলাও বসে। রথ দেখার পাশাপাশি মেলার আনন্দ উপভোগ করেন মানুষজন। রথ দেখতে শুধু যে দুর্গাপুরের মানুষ আসেন, তা নয়। শহর ছাড়িয়ে কাঁকসা, বুদবুদ এমনকী বাঁকুড়া, বীরভূম জেলা থেকেও বহু মানুষ আসেন। এই উৎসবকে অন্য মাত্রা দেয় লোক সংস্কৃতি উৎসব। যেখানে প্রতিদিন বিকেল থেকে কীর্তন, বাউলগান, কবিগান, যাত্রানুষ্ঠানের আসর বসে।
দুর্গাপুরের এ-জোনের ইসকন মন্দিরেও রথযাত্রার আয়োজন হয়। এ-জোন মন্দির থেকে রথটি ইস্পাতনগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে সিটি সেন্টারের চতুরঙ্গ মাঠে যায়। সেখানে নানা ভক্তিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। প্রচুর ভক্ত-সমাগম হয় রথযাত্রায়। মামরা বাজারের জগন্নাথ মন্দির থেকেও একটি রথ বেরোয়। মামরা এলাকার পাশাপাশি এমএএমসি কলোনির বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে রথটি। মন্দির চত্বরে একটি মেলাও বসে। বহু মানুষের সমাগম হয় এই রথযাত্রায়। রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ মন্দিরটিও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়।
কাঁকসাতেও বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী রথ রয়েছে। বনকাটি এলাকায় প্রায় দু’শো বছর আগে পিতলের রথ তৈরি করে উৎসব শুরু করেন বনকাটির তৎকালীন জমিদার রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এই রথটি তৈরি করতে তিনি খোদ ওড়িশা থেকে শিল্পীদের নিয়ে এসেছিলেন বলে বাসিন্দারা জানান। পিতলের রথের চার দিকে খোদাই করা রয়েছে পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী। অযোধ্যার বাসিন্দারা জানান, এই রথের চার দিকে যে চিত্র রয়েছে তা নন্দলাল বসু তাঁর ছাত্রছাত্রীদের এখানে নিয়ে এসে দেখিয়ে গিয়েছেন। এই তথ্য গবেষক পরেশচন্দ্র দত্ত তাঁর রাঢ় এলাকার পুরাতত্ত্ব গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ভারত সরকারের তরফে এই রথটি সংরক্ষতিও করা হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানান। বর্তমানে গ্রামের বাসিন্দারা একটি পরিচালন কমিটি গঠন করে রথযাত্রা পরিচালনা করেন। একটি গ্রামীণ মেলাও বসে অযোধ্যা হাটতলায়।
কাঁকসা রথতলা এলাকাতেও রথযাত্রা হয়। এই রথ কাঁকসার বিভিন্ন এলাকা, পানাগড় বাজার-সহ নানা জায়গা পরিক্রমা করে। আশপাশের গ্রামগুলি থেকে বহু মানুষ এই রথযাত্রায় যোগ দেন। সজ্জিত রথটির দড়ি ধরার জন্য মানুষের মধ্যে থাকে চরম উৎসাহ। এই উপলক্ষে রথতলায় একটি মেলাও বসে। মেলা দেখতে বুদবুদ থেকে অনেকে আসেন। কাঁকসার বিরুডিহা লালবাবা আশ্রমেও রথযাত্রার আয়োজন হয়। বিরুডিহা গ্রাম পরিক্রমা করে রথটি। আশ্রম প্রাঙ্গণে কয়েক দিন ধরে মেলাও চলে।
অন্ডালের উখড়ায় জমিদার পরিবার লালসিংহ হান্ডাদের রথ তৈরি হয়েছিল ১২৫৭ বঙ্গাব্দে। জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামের জায়গায় রথে কুলদেবতা গোপীনাথ জিউ এবং শ্রীরাধার যুগল মূর্তি থাকে। পিতলের রথে বিষ্ণু-সহ নানা দেবতার প্রতিকৃতি খোদাই করা আছে। কয়েক বছর ধরে রথ চলছে ট্রাক্টরের সাহায্যে। তবে পুণ্যার্থীদের জন্য রথে দড়ি লাগানো থাকে। রানিগঞ্জের সিহারসোলের রাজবাড়ির রথ প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। রথে অধিষ্ঠিত থাকে কুলদেবতা দামোদর চন্দ্র-সহ ১৭টি দেবমূর্তি। রথ উপলক্ষে মেলাও বসে। কুলটির বেলরুই রাজবাড়ির রথ, নিয়ামতপুরের সিঙ্গরাই বাবার রথযাত্রা, কুলটির শিমূলগ্রামের রথ এবং বার্নপুরের উৎকল সমাজের রথও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy