প্রায় দশ বছর আগে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু স্কুলে ঢুকে দাদাগিরি বন্ধ হয়নি। ২০১১ সালে ফের ওই শিক্ষক, মালেক রহমানের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক)। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে। তবে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের লোকলস্কর নিয়ে স্কুলে ঢুকে তিনি গোলমাল করছেন বলে অভিযোগ। এমনকী, নিয়মিত স্কুলে গিয়ে ক্লাস নেওয়ার জন্য পরিচালন সমিতির উপর জোরও খাটাচ্ছেন বলেও বলছে লোকে। তাঁর দৌরাত্ম্যে স্কুলে আসছেন না ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তার জেরে স্কুলের প্রশাসনিক কাজকর্মও শিকেয় উঠেছে বলে দাবি কেতুগ্রামের আমগোড়িয়া-গোপালপুর আরজিএম ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষের।
এমনিতেই গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের আধিপত্য। সেই সুযোগ নিয়েই বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা মালেক রহমান নামে ওই বহিষ্কৃত দৌরাত্ম্য চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মণীন্দ্রনাথ দত্ত জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, এসডিও এবং এসডিপিও (কাটোয়া)-র কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, ২৮ ডিসেম্বর ওই শিক্ষক এক দল স্থানীয় বাসিন্দা ও দুষ্কৃতীদের নিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েন। তারপরে হুমকি দিয়ে পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে নিজের বেআইনি নিয়োগ নিয়ে জোর দেন। মণীন্দ্রবাবুর অভিযোগ, “আমাকে ও পরিচালন সমিতির সভাপতি শরৎ রায়কে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়। হুমকি দিয়ে স্কুলে ঢোকানোর দাবি করেন উনি। কোনও ভাবে বিকেলে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসি আমরা।’’ তাঁর আরও দাবি, বারবার এ ধরণের হুমকির মুখে পড়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছেন তিনি। নিরাপত্তার অভাবেও ভুগছেন। এমনকী সোমবারও ওই বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক স্কুলে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। ফলে মঙ্গলবার অন্য শিক্ষকেরাও বেশির ভাগই স্কুলে আসেননি। ফলে স্কুলে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
আমগোড়িয়ার এই স্কুলে ১২০০ পড়ুয়ার জন্য ২২জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। বার্ষিক পরীক্ষার পরে গত শনিবার থেকে স্কুল শুরু হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই এই গোলমালে আটকে রয়েছে পড়ুয়াদের বই দেওয়া থেকে ভর্তি সবই। এমনকী নতুন হাজিরা খাতা তৈরি হয়নি বলে শিক্ষকেরা সই করতেও পারছেন না। মণীন্দ্রবাবুর দাবি, “স্কুলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। পড়ুয়াদের স্বার্থে দ্রুত একটা বিহিত হওয়া দরকার।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পরিচালন সমিতি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মালেক রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েও হেরে যান তিনি। পরে ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তাঁকে বরখাস্তের নির্দেশ দেয়। পরিচালন সমিতি নির্দেশ কার্যকর করে। তবে এর পরেও মালেক রহমান স্কুলে ঢুকে দাদাগিরি চালিয়ে যান। সে জন্য ২০১১ সালের ২৩ অগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৎকালীন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আব্দুল হাই। তার ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে। এরপর বরখাস্ত হওয়া ওই প্রধান শিক্ষক শিক্ষা দফতরের অ্যাপিল কমিটিতে আবেদন করেন। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই সেই আবেদনও খারিজ করে দেয় কমিটি।
তাহলে কীসের ভিত্তিতে স্কুলে গিয়ে জোর খাটাচ্ছেন তিনি? মালেক রহমানের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও প্রতারণা করা হয়েছে। যা অভিযোগ করা হয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমার আবেদনের ভিত্তিতে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তদন্তও করেছেন।” ওই স্কুলের শিক্ষকদের একাংশও জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর মালেক রহমানকে সঙ্গে করে তদন্তে আসেন পরিদর্শক। তারপরেই স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন নিয়ে এসে স্কুলে দাপাদাপি শুরু করেন তিনি। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “তদন্তের স্বার্থেই বরখাস্ত শিক্ষককে ডাকা হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্ট শিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনকে বলা হয়েছে।” স্কুলের শিক্ষকরা তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি রথীন মল্লিকের সঙ্গেও দেখা করেছেন। রথীনবাবু বলেন, “দলের বা সংগঠনের নাম নিয়ে কেউ স্কুলে ঢুকে দাদাগিরি করবে তা মানা হবে না।” কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ অবশ্য জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনও ভাবেই তৃণমূলের কেউ যুক্ত নয়। এসডিপিও (কাটোয়া) শচীন মাঁকড় বলেন, “ওই শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy