Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
নজরে বর্ধমান

দিদি বৃহন্নলা, শ্বশুরবাড়িতে ‘ব্রাত্য’ কালনার গৃহবধূ

দিদি বৃহন্নলা। সেই ‘অপরাধে’ শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই হচ্ছে না বোনের। বর্ধমানের কালনায় এমনই অভিযোগে প্রশাসন-পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন এক বধূ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১২
Share: Save:

দিদি বৃহন্নলা। সেই ‘অপরাধে’ শ্বশুরবাড়িতে ঠাঁই হচ্ছে না বোনের। বর্ধমানের কালনায় এমনই অভিযোগে প্রশাসন-পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন এক বধূ।

বধূর দাবি, তাঁর দিদির কথা শ্বশুরবাড়িতে জানিয়েই বিয়ে হয়েছিল। হঠাৎ দিদি শ্বশুরবাড়িতে যেতে তাঁর বৃহন্নলা হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বধূটিকে ‘অপমান ও অত্যাচার’ করা হয়। বলা হয়, ‘দিদির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে শ্বশুরবাড়ির দরজা বন্ধ’। এখন দিদির জন্য সার্বিক সামাজিক স্বীকৃতির সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতেও ফিরতে চান তিনি।

তৃতীয় লিঙ্গের সমান মর্যাদার দাবি নতুন নয়। ভোটাধিকার, তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে লেখাপড়ার অধিকার আদালত দিলেও সমাজ থেকে এ নিয়ে মানসিক অস্বস্তি যে কাটেনি, তা এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে বলে মনে করেন ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার বোর্ড’-এর সদস্য রঞ্জিতা সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নিয়ে সামাজিক বিভাজনটা মনের গভীরে ঢুকে যায়। হতে পারে, মেয়েটির দিদিকে শুরু থেকেই মানতে পারেনি শ্বশুরবাড়ি। সুযোগ পেতেই সেই অস্বস্তির বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।’’

কালনার ওই পরিবারে চার মেয়ে। পরিবারটির দাবি, বড় মেয়ে অন্য বৃহন্নলাদের সঙ্গে থাকেন। তবে নিয়মিত বাড়িতে আসেন। সে কথা জানিয়েই মেজ এবং সেজ মেয়ের বিয়ে দিয়েছে তারা। গত জুলাইয়ে হুগলির ত্রিবেণীর পাত্রের সঙ্গে ছোট মেয়ের বিয়ের সময়েও তার অন্যথা হয়নি। গোল বাঁধে মাস পাঁচেক পরে।

বছর আঠাশের বধূটির দাবি, ডিসেম্বরে শ্বশুরবাড়িতে তিনি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দেখতে মা, দাদার সঙ্গে যান ‘বড়দি’ও। তাঁর অভিযোগ, ‘বৃহন্নলাকে বাড়িতে এনে কেন অমঙ্গল ডেকেছে বাড়ির বউ’—এমন প্রশ্ন তোলেন শ্বশুরবাড়ির কিছু সদস্য। দিদি ফিরে যেতে ঘরে গঙ্গাজলের ছিটে দেওয়া হয়। বধূটিকে ঘরে আটকে ‘নির্যাতন’ করা হয়। দিদির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে জোরাজোরি করা হয়। জাতীয় মহিলা কমিশন, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, কালনার মহকুমাশাসক এবং বর্ধমান ও হুগলির পুলিশ সুপারদের লেখা চিঠিতে বধূটি জানিয়েছেন, শ্বশুরবাড়ির ‘চাপাচাপি’তে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও, পরে তিনি বলেন, ‘যত দিন বাঁচব দিদির সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। দিদি আমার শ্বশুরবাড়িতেও আসবে। আমার দুই দিদির শ্বশুরবাড়িতে তো বড়দিকে নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি’!

‘বড়দি’র সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জেদে এর পরেই বাপেরবাড়িতে চলে আসেন বধূটি। তাঁর ক্ষোভ, তার পর থেকে তাঁকে ফেরত নিতে চাইছেন না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তিনি বলেন, ‘‘দিদি আমাদের তিন বোনকে সন্তান-স্নেহে মানুষ করেছেন। ওঁর শারীরিক গঠনে তো ওঁর হাত নেই। আমি শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সে কথাটাই বোঝাতে চাই। সেখানে ফিরতেও চাই, তবে দিদিকে হারিয়ে নয়।’’ বধূটির ‘বড়দি’ বলেন, ‘‘আমাদের বেশির ভাগ মানুষই আলাদা চোখে দেখেন। কিন্তু আমরাও মানুষ। আমার জন্য বোনের সংসারে অশান্তি হলে মানতে পারব না।’’ বধূটিকে ঘরে আটকে নির্যাতন বা ‘বড়দি’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে জোর করার অভিযোগ মানেননি তাঁর স্বামী। পেশায় ঠিকাদার ওই যুবকের দাবি, ‘‘প্রথমে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে সব মিটিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করি। কিন্তু ওদের বাড়ির তরফে সাড়া পাইনি।’’

মহকুমাশাসক (কালনা) নিতীন সিংহানিয়া জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে দু’পক্ষকেই ২০ ফেব্রুয়ারি (আগামী সোমবার) ডেকে পাঠানো হয়েছে। দু’পক্ষের সমস্ত কথা শুনে পরের পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sister Housewife eunuch Ostracized
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE