Advertisement
০৩ মে ২০২৪

স্মার্ট অ্যাপে সুরাহা খুঁজছেন অনেকেই

সাত দিন কেটে গিয়েছে। হাঁটি-হাঁটি পা-পা চলতে শুরু করেছে ‘স্মার্ট বর্ধমান’ মোবাইল অ্যাপ। জেলার মানুষ যাতে সরাসরি নানা সুযোগ-সুবিধার কথা জানতে পারেন, অভিযোগ করতে পারেন, পরিষেবা পেতে পারেন তার জন্য রাজ্যে এই প্রথম এ রকম একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যদিও কেবল মাত্র স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরাই এই সুবিধা পাবেন।

অ্যাপটি আপগ্রেড হওয়ার আগে (বাঁ দিকে)  ও পরে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

অ্যাপটি আপগ্রেড হওয়ার আগে (বাঁ দিকে) ও পরে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

সাত দিন কেটে গিয়েছে। হাঁটি-হাঁটি পা-পা চলতে শুরু করেছে ‘স্মার্ট বর্ধমান’ মোবাইল অ্যাপ।

জেলার মানুষ যাতে সরাসরি নানা সুযোগ-সুবিধার কথা জানতে পারেন, অভিযোগ করতে পারেন, পরিষেবা পেতে পারেন তার জন্য রাজ্যে এই প্রথম এ রকম একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। যদিও কেবল মাত্র স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরাই এই সুবিধা পাবেন।

বর্ধমান জেলা প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই অ্যাপটি জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। কী করে সেটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা যায়, গুগল প্লে-তে গিয়ে সে বিষয়ে নানা পরামর্শও দিচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও যাতে অ্যাপটি ব্যবহার করা যায়, সেই আবেদন যেমন আসছে, দেওয়া হয়েছে বানান ভুলের দিকে নজর রাখার পরামর্শও।

জেলা প্রশাসন সূত্রেরক খবর, এর মধ্যেই অ্যাপটির ‘নিবারণ’ বিভাগে ১১৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেগুলির সমাধানের জন্য যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি গোপন রাখা হচ্ছে অভিযোগকারীর নাম। কেউ অভিযোগ করার পরেই এসএমএস মারফত রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাটানো হচ্ছে তাঁকে। পরে সেই নম্বর দিয়ে করে অভিয়োগকারী খোঁজ নিতে পারবেন, প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে। এখন পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজ থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনা, জমির দাগ নম্বর থেকে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে।

জেলা প্রশাসন বলছে, এই অ্যাপে তিন রকম পরিষেবা মিলতে পারে। সেগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিবারণ’, ‘অধিকার’ ও ‘সেবা’। ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে নানা পরিষেবার সমস্যা কী ভাবে সমাধান করা যায়, তার দিশা মিলবে ‘নিবারণ’-এ। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কী-কী সুবিধা পাওয়া যায়, তা জানা যাবে ই-এনটাইটেলমেন্ট বা ‘অধিকার’-এ। এ ছাড়াও প্রশাসনের নানা রকম পরিষেবার কথা জানা যাবে ‘সেবা’য়।

জরুরি পরিষেবা হিসাবে দেওয়া থাকছে জেলার সব থানার গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ আধিকারিকদের ফোন নম্বর। চাইলে অ্যাপ মারফত অভিযোগও জমা দেওয়া যাবে, যা থেকে পরবর্তী সময়ে মামলা রুজু করতে পারে পুলিশ। তেমনই, দমকলের অনুমতি সংক্রান্ত ফর্মও মিলবে। জমা দেওয়া যাবে বিদ্যুতের বিল, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অভিযোগও জানানো যাবে। ‘বুক’ করা যাবে রান্নার গ্যাস। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং আসানসোল জেলা হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা এবং বিনামূল্য কী-কী ওষুধ পাওয়া যায়, সরকারি সুবিধা কী আছে— জানা যাবে সবই। মিলবে বারোয়ারি পুজোর অনুমতি সংক্রান্ত ‘এক জানালা পদ্ধতি’র সুযোগ। এ ছাড়া নিরুদ্দিষ্টদের ব্যাপারে তথ্য দিতে ও পেতে আলাদা ‘পোর্টাল’ও রয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই, যাঁরা কর্মসূত্রে জেলার বাইরে থাকেন, তাঁদের খুবই কাজে লাগছে অ্যাপটি। কাটোয়ার বাসিন্দা, বর্তমানে পুণেতে কর্মরত শীর্ষেন্দু মজুমদার বা গুজরাতে গাঁধীনগর আইআইটি-র অধ্যাপক বীরেশ্বর দাস, বর্ধমানের বাসিন্দা, নিউইয়র্কে একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত সোমা মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “পরিজনরা বাড়িতে একাই থাকেন। সব সময় চিন্তায় থাকি। এখন এই অ্যাপ মারফত রাতবিরেতেও পুলিশ, চিকিৎসক বা অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে সমস্যার কথা জানাতে পারছি। আশা করি, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “মোবাইল অ্যাপটিকে সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে সব রকমের পরামর্শ স্বাগত। এর মধ্যেই গুগল প্লে-তে দেখা যাচ্ছে, ‘স্মার্ট বর্ধমান’-এর রেটিং ৪.৫। অর্থাৎ ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অ্যাপটি।” আরও জনপ্রিয় করে তুলতে নিয়মিত ভাবে নকশার পরিবর্তন ও ‘আপগ্রেড’ করা হবে সেটিকে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দু’বার সেটি ‘আপগ্রেড’ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিকের দাবি, “আমরা তৃতীয় বার আপগ্রেড করতে গেলে গুগল থেকে জানানো হয়েছে, মাসে এক বারের বেশি আপগ্রেড করা যাবে না। তাই ইচ্ছা থাকলেও বেশি আপগ্রেড করতে পারছি না।”

অ্যাপটিকে আরও কার্যকর এবং জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নানা রকম পরামর্শও আসছে। যেমন সায়ন কুমার নামে এক জনের পরামর্শ, ‘অভিযোগের সঙ্গে ছবি পাঠানোর ব্যবস্থা থাকলে খুবই ভাল হত। তা হলে অভিযোগের সত্যতা কতটা তা বুঝতে পারতেন প্রশাসনের কর্তারা।’ দীপক সিংহ, সুজিত কুমার ঠাকুরেরা গুগল অ্যাপে লিখেছেন, “ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা সংস্করণ থাকলে অ্যাপটি আরও জনপ্রিয় হবে।”

জেলা প্রশাসনের কর্তারাও মানছেন, বহু জনই মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার জানেন, কিন্তু ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে অ্যাপটি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে ইংরেজিতে অভিযোগ করছেন, কিন্তু তার মধ্যে এত ভুল থাকছে যে তাতে অভিযোগের অর্থই পাল্টে যেতে পারে।

সে না হয় ব্যবহারকারীদের ভুলের কথা গেল। কিন্তু অ্যাপটিতেই এত বানান ভুল রয়েছে যে অনেকেই বেশ বিরক্ত। কৌস্তভ সামন্ত, সোমনাথ ঘোষেরা জানিয়েও দিয়েছেন, বানান ভুলগুলি অবিলম্বে শুধরে নেওয়া চাই। তার উত্তরে অ্যাপ প্রস্তুত কারক সংস্থা জানিয়েছে, পরবর্তী সংস্করণে ওই সব ভুল সংশোধন করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE