Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষোভ পুলিশের ভূমিকায়

শীতে পাড়া ‘দুয়ার এঁটে’, চুরি চলছেই

 শীত পড়লেই যেন সক্রিয় হয় ওরা। গত চার বছর ধরে কালনা মহকুমার বেশ কিছু মন্দিরে বারবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বারেও শীত পড়তে না পড়তেই সাত দিনের মধ্যে পূর্বস্থলী ২-র চারটি মন্দিরে চুরি হয়েছে।

এই মন্দিরেও হয়েছিল চুরি। পূর্বস্থলীতে। ফাইল চিত্র

এই মন্দিরেও হয়েছিল চুরি। পূর্বস্থলীতে। ফাইল চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share: Save:

শীত পড়লেই যেন সক্রিয় হয় ওরা। গত চার বছর ধরে কালনা মহকুমার বেশ কিছু মন্দিরে বারবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বারেও শীত পড়তে না পড়তেই সাত দিনের মধ্যে পূর্বস্থলী ২-র চারটি মন্দিরে চুরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। পুলিশের দাবি, শীতকালের কিছু সুবিধাকে কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা।

গত ২২ নভেম্বর বুড়োরাজ ও রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে রাতের অন্ধকারে তালা ভাঙে দুষ্কৃতীরা। এই দু’টি মন্দির থেকেই চুরি যায় প্রণামীর বাক্স। ২৫ নভেম্বর দুষ্কৃতীরা হানা দেয় চুপি কালীতলার একটি মন্দিরে। সেখান থেকে প্রতিমার বেশ কিছু গয়না চুরি যায়। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই মন্দিরে গেলে বাসিন্দারা দাবি জানান দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বুধবার রাতে ফের একটি মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। এ বার দুষ্কৃতীরা রাতের অন্ধকারে তালা ভাঙে বেলেরহল্ট এলাকার রাধাগোবিন্দ মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। চুরি যায় প্রতিমার সোনার মুকুট, রুপোর বাঁশি-সহ নানা জিনিসপত্র।

এই চুরির ঘটনাগুলির তদন্তে নামলেও কোনওটিরই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এলাকার বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশ এখনও দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পারেনি। এমনটা চলতে থাকলে এলাকার ঐতিহ্যের জন্যও তা ক্ষতিকর।’’

তবে শীত পড়তেই চুরির ঘটনা প্রথম নয় কালনা মহকুমায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লোহার গেট বা কাঠের দরজার তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা প্রতিমার গয়না ও প্রণামীর বাক্স হাতিয়ে চম্পট দেয়। গত বছর পূর্বস্থলী ১-এ একটি মন্দিরে চুরির দৃশ্য সিসিটিভি-তে দেখা যায়। ওই ছবি দেখেও দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা যায়নি বলে পুলিশ জানায়। বছর তিনেক আগে মন্তেশ্বর ব্লকে প্রায় ৩৫টি মন্দিরে চুরি হয়। পুলিশ জানায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা প্রণামীর বাক্স চুরি করে নিয়ে যায় কাছাকাছি কোন ফাঁকা মাঠে। সেখানে ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’ করার পরে বাক্স ফেলে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ঘটনাগুলির বেশির ভাগেরই কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

কিন্তু শীত পড়তেই কেন চুরির প্রবণতা বাড়ে? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, গ্রামীণ এলাকায় সাধারণত সন্ধ্যা আটটা-ন’টার মধ্যেই বেশির ভাগ বাসিন্দা ‘দুয়ার এঁটে’ ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দুষ্কৃতীরা সুবিধা পায়। পারিবারিক মন্দিরগুলির ক্ষেত্রেও একই সুবিধা পায় দুষ্কৃতীরা। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পারিবারিক মন্দিরগুলি বসতবাড়ির চৌহদ্দির থেকে খানিকটা দূরে থাকে। এই পরিস্থিতিতে মন্দিরে গ্যাস কাটার বা লোহার রড দিয়ে তালা ভাঙার বা দরজা খোলার আওয়াজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাসিন্দারা পান না বলে জানান এক পুলিশকর্তা। শুধু তাই নয়, দু-চার জন যারা এই সব চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। ফলে পুলিশের অনুমান, গ্রামের এই পরিস্থিতির ‘খবর’ দুষ্কৃতীদের কাছে ভালমতোই থাকে। এ ছাড়া অধিকাংশ মন্দিরেই সিসি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তে সমস্যা হয় বলে পুলিশ জানায়।

পুলিশের দাবি, এই চুরির ঘটনাগুলিতে একাধিক দলও যুক্ত রয়েছে বলে দেখা যায়। পূর্বস্থলীতে চুরির ঘটনাগুলি নিয়ে শুক্রবার এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায় অবশ্য বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। আশা করি, দ্রুত তারা ধরা পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stealing Police Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE