Advertisement
১১ মে ২০২৪

শহরের ৪০ ওয়ার্ডে ভরাডুবি তৃণমূলের

বেহাল পুর পরিষেবার অভিযোগ তুলে বেশ কয়েক মাস আগে থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল বামেরা। বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর শহরে তারই ফল মিলেছে বলে মনে করছে বাম-কংগ্রেস জোট। শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডের ৪০টিতেই তৃণমূলের থেকে এগিয়ে থেকেছে তারা। তৃণমূলের এমন হারের পরে শহরের মেয়র পদ থেকে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে পরাজিত অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সরে দাঁড়ানো উচিত বলে দাবি তুলেছে বামেরা।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:৩৪
Share: Save:

বেহাল পুর পরিষেবার অভিযোগ তুলে বেশ কয়েক মাস আগে থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল বামেরা। বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর শহরে তারই ফল মিলেছে বলে মনে করছে বাম-কংগ্রেস জোট। শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডের ৪০টিতেই তৃণমূলের থেকে এগিয়ে থেকেছে তারা। তৃণমূলের এমন হারের পরে শহরের মেয়র পদ থেকে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে পরাজিত অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সরে দাঁড়ানো উচিত বলে দাবি তুলেছে বামেরা।

দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টি নিয়ে গঠিত পশ্চিম কেন্দ্রটি। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে বাকি ১৬টি ওয়ার্ড এবং কাঁকসার কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকা। পশ্চিমে গত বার জয়ী অপূর্ববাবুই এ বার প্রার্থী হন তৃণমূলের। বেশ কয়েক দিন ধরে টানাপড়েনের পরে এই কেন্দ্রে এ বার জোটের তরফে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েই প্রার্থী হন শহরের দীর্ঘ দিনের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। পূর্ব কেন্দ্রে দু’পক্ষই এ বার নতুন প্রার্থী দিয়েছিল— সিপিএমের সন্তোষ দেবরায়ের সঙ্গে লড়াই হয় তৃণমূলের প্রদীপ মজুমদারের।

নিজের নির্বাচনী এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দু’টিতে এ বার প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন অপূর্ববাবু। তা-ও দু’টি মিলিয়ে দু’শোর বেশি ভোটে এগোতে পারেননি তিনি। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে মাত্র একটি ওয়ার্ডেই ৫৪ ভোটে এগিয়ে থেকেছেন তৃণমূল প্রার্থী। বাকি ১৫ আসনেই পিছিয়ে পড়েন তিনি। পুর এলাকায় জোটের থেকে প্রায় ৫৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল।

বিশদ ফল বেরনোর পরে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল মাত্র ৬টি ওয়ার্ডে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। ২১টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৩০-৪০ শতাংশের মধ্যে। ২০-৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে মাত্র ১৪টি ওয়ার্ডে। ১৫ এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ২০ শতাংশেরও কম। দু’টি ওয়ার্ডই পড়ছে মেয়র অপূর্ববাবুর নির্বাচনী এলাকার মধ্যে। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে অপূর্ববাবু পিছিয়ে পড়েন প্রায় চার হাজার ভোটে। জোটের প্রার্থী বিশ্বনাথবাবু যেখান থেকে জিতে এ বার কাউন্সিলর হয়েছিলেন, সেই ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে অপূর্বাবু পিছিয়েছেন প্রায় ৫০০০ ভোটে। তাঁর নিজের ২১ নম্বর ওয়ার্ডেও তিনি প্রায় ১১০০ ভোটে পিছিয়ে। তাঁর বাড়ি যেখানে, সেই ১৯ নম্বরেও তিনি বেশ কিছু ভোট কম পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে। পাশের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। সেখানে অপূর্ববাবু পিছিয়ে গিয়েছেন প্রায় সাড়ে বারোশো ভোটে। সব মিলিয়ে ৪৪ হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গিয়েছেন তিনি। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের ১৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার ভোটে। এই কেন্দ্রে সিপিএমের সন্তোষবাবু ন’হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন।

বছর ঘুরলেই পুরভোট দুর্গাপুরে। তার আগে শহরে শাসকদলের এমন ভরাডুবিতে আশা দেখছে বামেরা। তাদের দাবি, প্রয়োজনে মেয়রকে হাতের কাছে পাওয়া যায় না। আগাম জানিয়ে বেহাল নাগরিক পরিষেবা নিয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়েও মেয়রের দেখা মেলেনি। তার পরেই শহর জুড়ে বেহাল পরিষেবা নিয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ শুরু করে বামেরা। পুরসভার সামনে কয়েক হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভও করা হয়। তার পরেও পরিষেবার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। সিপিএমের দাবি, সাধারণ মানুষের সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে ইভিএমে। এমন পরিস্থিতিতে অপূর্ববাবুর মেয়র পদে থাকা অনুচিত বলেও দাবি করেছেন সিপিএম নেতারা। শহরের সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘এর পরে পুরসভায় ক্ষমতায় আসাই আমাদের লক্ষ্য।’’

প্রচারপর্বে বিশ্বনাথবাবু ও তাঁর অনুগামীরা লাগাতার স্লোগান তুলেছিলেন, ‘পার্ট টাইম মেয়র চাই না। দুর্গাপুরের উন্নয়নের স্বার্থে ফুল টাইম মেয়র চাই।’ বিশ্বনাথবাবুর ওয়ার্ডে প্রচারে গিয়ে কার্যত বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন অপূর্ববাবু। তাঁদের জন্য কোনও কাজই করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন এক দল বাসিন্দা। পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে যে শহরবাসীর ক্ষোভ রয়েছে, ভোটের আগে দলের প্রার্থীদের সমর্থনে সভা করতে এসে তা কার্যত মেনে নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপূর্ববাবুকে পাশে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সব সময় হয়তো ওর দেখা পাওয়া যায় না। ওকে বলব এমন না করতে। অভিমান হলে অপুকে দুই চড় মেরে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘কেন দেখা করনি?’ অপু ভাল ছেলে। ওকে দয়া করে জেতান।’’ এর পরেও অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি।

পুর পরিষেবা নিয়ে নানা অসন্তোষের জেরেই কি এমন ফল? ফল ঘোষণার দিনই অপূর্বাবু বলেছিলেন, ‘‘এ নিয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। যা হয়েছে, দল তার পর্যালোচনা করবে।’’ দলের দুর্গাপুর (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘দলে থেকেও অনেকে ঠিক মতো কাজ করেননি। আমরা ওয়ার্ড ধরে পর্যালোচনা শুরু করেছি। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE