সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের মরসুম শুরু হতেই নদীপথে দুষ্কৃতীদের হামলা ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক দিনে মউলেদের (যাঁরা মধু সংগ্রহ করেন) ১২টি নৌকায় হানা দিয়ে দুষ্কৃতীরা মধু, হাঁড়ি, ড্রাম-সহ নানা জিনিস লুঠ করায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিষয়টি বন দফতর এবং প্রশাসনকেও জানিয়েছেন মউলেরা। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশি জলদস্যুরাই ভুটভুটিতে এসে নদীপথে লুঠপাট চালাচ্ছে।
সুন্দরবনের নদীতে দুষ্কৃতী হানা নতুন নয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি কুলতলির মাতলা নদীতে রানাঘাট থেকে আসা পর্যটকদের একটি লঞ্চে হানা দিয়ে দুষ্কৃতীরা গয়না, টাকা, মোবাইল লুঠ করে পালায়। পরে অবশ্য পুলিশ ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কুতুব লস্করকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় খোয়া যাওয়া বহু জিনিসপত্র। তার আগেও একাধিকবার সুন্দরবনে দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। কিন্তু এ বার যে ভাবে কয়েক দিনের মধ্যে মায়াদ্বীপ, ভোলাখালি খাল, হরিণখালি খাল, বুড়ির ডাবরিতে মউলেরা পর পর দুষ্কৃতীদের কবলে পড়ছেন, তাতে আতঙ্ক মাত্রা ছাড়িয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার জন্য মউলেদের অনুমতি দিচ্ছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। ওই দিনই গোসাবার কুমিরমারির বাসিন্দা বাচ্চু মৃধা এলাকার দশ জনের সঙ্গে মায়াদ্বীপে মধু সংগ্রহ করতে যান। ফিরছিলেন ৮ এপ্রিল। মায়াদ্বীপ ছেড়ে বেরোতেই রাতে দলটি দুষ্কৃতীদের কবলে পড়ে। বাচ্চুবাবু জানান, তিনটি ভুটভুটিতে ১৮-২০ জনের দলটি এসে নৌকায় চড়াও হয়। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, রড ছিল। ওরা মারধরও করে। একই ভাবে দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েন গোসাবার ছোট মোল্লাখালির সন্তোষ মুণ্ডা এবং তাঁর মতো আরও কয়েক জন। একটি নির্দিষ্ট দলই লুঠপাট চালাচ্ছে বলে তাঁদের অনুমান।
সুন্দরবনের জঙ্গলে যাঁরা মাছ, কাঁকড়া বা মধু সংগ্রহ করতে যান, তাঁদের সংগঠন, ‘সুন্দরবন জন শ্রমজীবী মঞ্চ’-এর সম্পাদক পবিত্র মণ্ডল বলেন, “গত ৮ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশি জলদস্যুরা মউলেদের নৌকায় আক্রমণ করে মধু-সহ সমস্ত জিনিস লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। এ পর্যন্ত ১২টি নৌকায় লুঠপাট চালিয়েছে। দস্যুরা মউলেদের থেকে প্রায় ৫০ কুইন্টাল মধু লুঠ করেছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এবং প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর কিশোর মানকর বলেন, “মউলেদের নৌকায় লুঠপাটের অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ও বিএসএফের সাহায্য নিয়ে ওই সব এলাকায় অভিযান চালানো হবে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতর থেকে লুঠপাটের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। পুলিশের একটি দল ওই সব এলাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে, বন দফতর ওই সব এলাকার কোথাও আমাদের জায়গা দিলে পুলিশ ক্যাম্প করে নজরদারি চালানো সহজ হয়। এ কথা বন দফতরকে জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy