Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পার্টি অফিসে তৃণমূলের তাণ্ডব, খেসারত ওসি-র

সদ্য হুগলিতে এসে প্রশাসনের কাজ সম্পর্কে মোটামুটি সন্তোষই প্রকাশ করেছিলেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। দু’দিনের মধ্যে জেলার দুই অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এল। দুই অফিসারকে সরতে হল হাওড়া থেকেও। তাতে প্রশাসন তথা শাসকদলের উপরে কিছুটা চাপ বাড়লেও বিরোধীরা খুশি। কিছু ক্ষেত্রে আবার এই নির্দেশের কারণ নিয়ে ধন্দ রয়েছে জেলা পুলিশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০০:২২
Share: Save:

সদ্য হুগলিতে এসে প্রশাসনের কাজ সম্পর্কে মোটামুটি সন্তোষই প্রকাশ করেছিলেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। দু’দিনের মধ্যে জেলার দুই অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এল। দুই অফিসারকে সরতে হল হাওড়া থেকেও। তাতে প্রশাসন তথা শাসকদলের উপরে কিছুটা চাপ বাড়লেও বিরোধীরা খুশি। কিছু ক্ষেত্রে আবার এই নির্দেশের কারণ নিয়ে ধন্দ রয়েছে জেলা পুলিশে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, উদ্বোধনের রাতেই সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় হুগলির ধনেখালির ওসিকে সরিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সিঙ্গুরের বড়া এলাকায় একটি নির্দিষ্ট অভিযোগের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ না করাতেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতার রদবদলের পর থেকেই ধনেখালিতে সিপিএম অভিযোগ করে আসছে, তৃণমূলের সন্ত্রাসে তারা কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিই চালাতে পারছে না। হুগলির এই এলাকায় অস্থিরতার ইতিহাস বস্তুত দীর্ঘদিনের। ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের বাবা পূর্বতন শাসকদলের হাতে খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বস্তুত তাঁর পরিবারের উপর সিপিএমের ‘অত্যাচার’ই অসীমাকে টিকিট পেতে সাহায্য করেছিল।

মাসকয়েক আগে আবার ধনেখালির মদনমোহনতলায় সিপিএমের জোনাল অফিস তছনছ করে তৃণমূলের লোকজন। সম্প্রতি সেই ভাঙাচোরা অফিসই সারিয়ে ফেরে উদ্বোধন করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু ওই রাতেই ফের তাণ্ডব চলে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু ওই ঘটনা নিয়ে সরাসরি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে অভিযোগ জানান। বুধবার জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুূরী বলেন,“উদ্বোধনের পরেই ফের ভাঙা হল অফিস! নির্বাচন কমিশনের যে ভাবে পদক্ষেপ করার কথা তা হচ্ছে কোথায়? এখনই আধাসেনাকে দিয়ে প্রতিটি জায়গায় ‘এরিয়া ডমিনেশন’ করানো উচিত।” বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তো নির্বাচন কমিশন দুই ওসিকে সরাল? সিপিএমের শিক্ষক নেতা অভিযোগ করেন, “মঙ্গলবার রাতেই গোঘাটে আমাদের জেলা কমিটির সদস্য ভাস্কর রায়কে মারধর করা হয়েছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে পরিবারকে। সে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কোথায়?”

ব্যবস্থা নিতে গিয়ে আবার শাসকদলের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের। এ দিন আরামবাগের হরিপাল এলাকায় তৃণমূলের কিছু ফ্লেক্স এবং ঝান্ডা দেখে সেখানকার পর্যবেক্ষক রাজীব শ্রীবাস্তব এবং পদস্থ কর্তা সুধাংশু ধরমিত্র তা খুলিয়ে দেন। এর পরেই ফুঁসে ওঠেন তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, “কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। আমরা নিয়ম মেনেই দলীয় পতাকা এবং অন্য জিনিস টাঙিয়েছি। কিন্তু একতরফা ভাবে নির্বাচন কমিশনের অফিসারেরা সে সব খুলে নিয়ে গিয়েছেন।” হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না অবশ্য ঘটনার কথা জানা নেই বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। সুধাংশুবাবু বলেন, “যা করা হয়েছে তা আইন-রক্ষার্থে।”

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বুধবার বিকেলেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়া এবং বাগনানের আইসি-কে। উলুবেড়িয়ার আইসি সুব্রত ভৌমিককে বদলি করা হয়েছে সিআইডি-তে। অন্য দিকে, বাগনানের আইসি বিশ্বজিৎ ঘোষালকে বদলি করা হয়েছে হাওড়া জেলা পুলিশ (গ্রামীণ)-এর ডিআইবি-তে । তাঁদের পরিবর্তে বাগনান এবং উলুবেড়িয়ায় নিয়োগ করা হয়েছে যথাক্রমে দেবর্ষি সিংহ এবং উজ্জ্বল দাসকে। দেবর্ষি ছিলেন হাওড়া জেলা গ্রামীণ পুলিশের ডিআইবি-তে। বর্ধমানের কাটোয়া থানায় ছিলেন উজ্জ্বল। জেলার দু’জন আইসি-কে কেন সরানো হল, সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন জেলা গ্রামীণ পুলিশের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, উলুবেড়িয়ার আইসি মাত্র দু’মাস হল কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বাগনানের আইসি-র বিরুদ্ধেও তেমন কোনও অভিযোগ অন্তত তাঁদের কাছে আসেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vandalism chinsurah uttarpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE