দীনবন্ধু গায়েন
ধীমান রায়
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার-ব্যানার লাগানো নিয়ে প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে জেলা তৃণমূল। গত মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এমনই কিছু অভিযোগ জানাতে গিয়ে অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায়ের উপস্থিতিতে কিছু লোক বিডিও (হাবরা ২ ব্লক) দীনবন্ধু গায়েনকে শারীরিক-মানসিক ভাবে হেনস্থা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিডিও-কে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও হয়েছে। ঘটনা গড়িয়েছে থানা-পুলিশ পর্যন্ত।
ওই ঘটনায় রবিবার অশোকনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও এ দিনই সকলে বারাসত আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। কর্তব্যরত সরকারি আধিকারিককে হুমকি, নিগ্রহের ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে জেলা সিপিএম। যদিও জেলা পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, জামিন-অযোগ্য ধারাতেও (৩৫৩) মামলা রুজু হয়েছিল। তবে জামিন মঞ্জুর হবে কি না, তা আদালতের বিচার্য বিষয়।
দলের তরফে অশোকনগরের ঘটনা তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিলেও বিডিও নিজেই নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন বেহালায় এক কর্মিসভায় তিনি বলেন, “নিয়মবিধি ভেঙে যদি ছবি লাগানো হয়েও থাকে, তা হলে বিডিওর উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট দলকে তা জানানো। তা না করে বিডিও নিজেই ছবি খুলতে গিয়ে নিয়মবিধি ভেঙেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী ছাড়া এ কাজ করা অসম্ভব!” জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে বিডিওর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ জানানো হবে।
বছর দু’য়েক হল হাবরা ২ ব্লকে কাজে যোগ দিয়েছেন দীনবন্ধু গায়েন। অশোকনগরের বিধায়কের সঙ্গে নানা সময়ে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বিধায়ক এবং বিডিও নিজেরাও মেনে নিচ্ছেন সে কথা। দীনবন্ধুবাবুর বক্তব্য, “এক জন বিধায়কের সঙ্গে স্থানীয় বিডিও-র যে ধরনের সহজ সম্পর্ক হওয়া উচিত, ওঁর (ধীমান রায়) সঙ্গে কোনও দিনই আমার সম্পর্ক তেমন নয়। ওঁর আচরণগত কিছু সমস্যা আছে। উনিই সম্পর্ক নষ্ট করেছেন।” ধীমানবাবু আবার বলেন, “বিধায়ক হওয়ার পরে একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল বিডিও-র সঙ্গে। উনি যে ভাষায় আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তা ছিল আপত্তিকর। তা ছাড়া, বিভিন্ন সময়ে সরকারি নানা প্রকল্পের কাজে ওঁর গড়িমসির জন্য আমাদের সরব হতে হয়েছে।” বিধায়কের দাবি, কিছু বলতে গেলেই বিডিও ‘হচ্ছে-হবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু, বিষয়ের সমাধান করেন না। শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতও দেন।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারি জায়গায় রাজনৈতিক ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন লাগানো যাবে না বলে আগেই সর্বদল বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কিছু জায়গায় নিয়মভঙ্গ হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে প্রশাসন সে সব ব্যানার-পোস্টার সরিয়ে ফেলে। তৃণমূলের অভিযোগ, হাবরা ২-এর বিডিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শুধুমাত্র তাদেরই পোস্টার-ব্যানার সরিয়েছেন। বামেদের ক্ষেত্রে একই বিধিভঙ্গ হলেও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই নিয়েই দু’পক্ষের গণ্ডগোলের সূত্রপাত।
দীনবন্ধুবাবুর অভিযোগ, ধীমানবাবুর উপস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ বেশ কিছু লোকজন অফিসে ঢুকে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে হেনস্থা করে। সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হুমকিও দেওয়া তাঁকে। অসুস্থ বোধ করেন দীনবন্ধুবাবু। বিডিও-র দাবি, “আমার অফিসে লোকজন নিয়ে ঢুকেছিলেন বিধায়ক। তাঁর উপস্থিতিতেই ওঁর সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে নিগ্রহ করেন। এমনকী, তর্কাতর্কির সময়ে আমাকে লক্ষ করে ঘুষি চালায় ওঁর এক সঙ্গী। আমি সরে যাওয়ায় তা লাগে অন্য এক সরকারি কর্মীর গায়ে।” তাঁর আরও দাবি, ঘটনার পর দিন, ২৬ মার্চ ই-মেলে অভিযোগ করেন অশোকনগর থানায়। ২৮ তারিখ সেই অভিযোগ থানায় লিখিত ভাবে জমা দেন। প্রতিলিপি পাঠান জেলাশাসককেও। জেলাশাসক জানান, ওই দিনই তিনি অভিযোগ পাঠিয়ে দেন পুলিশ সুপারকে। নির্বাচন কমিশনেও ঘটনার কথা জানান।
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “বিধায়কের উপস্থিতিতে গোলমাল হয়েছে কিনা, তা লিখিত অভিযোগে বলা হয়নি। আমরা বিষয়টি পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি।” জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “বিধায়কের উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটেছে বলে লিখিত অভিযোগে নেই। তবে, বিডিও এবং বিধায়কের মধ্যে ফোনে তর্কাতর্কি হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। তার মাত্রা কী ছিল, জানতে তদন্ত হচ্ছে। বিডিওকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল কি না, তা-ও লিখিত অভিযোগে স্পষ্ট নয়। আমরা বিডিও-র সঙ্গে কথা বলব।”
এই প্রেক্ষিতে দীনবন্ধুবাবু বলেন, “ওই দিন যা ঘটেছে, বিধায়কের উপস্থিতিতেই হয়েছে। হয় তো অভিযোগপত্রে ভাষাগত কোনও ত্রুটি থেকে গিয়েছে।”
বিডিও-র অভিযোগ অস্বীকার করে বিধায়কের পাল্টা বক্তব্য, “বিডিও পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন, এমন খবর পেয়ে মঙ্গলবার ওঁকে ফোন করি। কিন্তু কথার মাঝেই উনি ফোন কেটে দেন। তার পরে দলের কিছু লোকজনকে নিয়ে ওঁর অফিসে যাই। জানতে চেয়েছিলাম, কেন আমাদের সঙ্গে এমন করা হচ্ছে। রাজনীতি করতে চাইলে প্রশাসনের চেয়ার ছেড়ে করুন, এ কথাও বলি বিডিওকে। কিন্তু, কোনও ভাবে নিগ্রহ করা হয়নি ওঁকে।” ধীমানবাবুর আরও দাবি, তাঁর সঙ্গীরা উষ্মা প্রকাশ করলে তিনিই তাঁদের থামান। পরে এ জন্য বিডিওর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষের দাবি, তাঁদের দলের লোকজন বিডিওর সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার করেনি। জেলা সভাপতির অভিযোগ, “দমদম, ব্যারাকপুর, বেলঘরিয়া-সহ জেলার নানা প্রান্তে আমাদের পোস্টার-ব্যানার সরানো নিয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে প্রশাসন। তবে, আমরা পোস্টার-ব্যানার লাগানো নিয়ে সতর্ক আছি।”
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy