হাবিব মণ্ডল
রেলের ‘হল্ট’ স্টেশনগুলিতে যাত্রী নিরাপত্তার যে কোনও বালাই নেই তা ফের প্রমাণিত হল। বুধবার রাতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দাশনগর হল্ট স্টেশনের কাছে রেললাইনের উপরে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন এক ব্যবসায়ী। তাঁকে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।
গত মাসে প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল দাশনগরের পরের স্টেশন রামরাজাতলায়। সেখানে দিনের বেলা ট্রেনের ধাক্কায় আহত এক যাত্রী প্রায় এক ঘণ্টা রেললাইনে পড়ে ছটফট করলেও তাঁকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত সেখানে পড়ে থেকেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। রেলের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, রামরাজাতলা একটি হল্ট স্টেশন। সেখানে রেলের কোনও কর্মী, রেলপুলিশ বা রেলরক্ষী বাহিনী থাকে না। সাহায্য আসে বড় স্টেশন থেকে। এটাই দস্তুর।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, সন্ধ্যায় বালিচক-হাওড়া ট্রেনে উলুবেড়িয়া থেকে হাওড়ায় ফিরছিলেন সমুদ্রগড়, কালনার বাসিন্দা হাবিব মণ্ডল। বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী। সমুদ্রগড় থেকে তাঁতের শাড়ি এনে তিনি কলকাতা, হাওড়া ইত্যাদি জায়গায় বিক্রি করেন। তাই সপ্তাহে প্রায় তিন-চার দিন তাঁকে হাওড়ায় আসতে হয়। পুলিশ জানায়, বুধবারও তিনি উলুবেড়িয়া গিয়েছিলেন বিক্রি হওয়া শাড়ির টাকা নিতে। কাজ সেরে একটা কালো ব্যাগে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি ট্রেনে হাওড়ায় এসে সেখান থেকে সমুদ্রগড় যাওয়ার ট্রেন ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন।
পুলিশ জানায়, সিগন্যাল না মেলায় টিকিয়াপাড়া ও দাশনগর স্টেশনের মাঝে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পড়ে। ওই সময় শৌচকর্ম করতে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন হাবিব। ইতিমধ্যেই ট্রেন ছেড়ে চলে যায়। অগত্যা হাবিব অন্ধকার রেলপথ দিয়ে দাশনগর স্টেশনের দিকে এগোতে শুরু করেন। তখনই আচমকা পিছন থেকে দুই দুষ্কৃতী তাঁর ডান হাতে ধরে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। শুরু হয় টানাটানি, ধস্তাধস্তি। আচমকা এক দুষ্কৃতী কোমর থেকে অস্ত্র বার করে হাবিবের বাঁ হাতে পরপর দু’টি কোপ মারে। যন্ত্রণায় তিনি রেললাইনের উপরে বসে চিৎকার করতে থাকেন। অভিযোগ, বারবার ডেকে কারও সাড়া না পাওয়ায় তিনি কোনও রকমে দাশনগর স্টেশনে এসে পৌঁছন। কিন্তু সেখানেও কোনও রেল কর্মীর দেখা না পেয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাওড়া-আমতা রোডে এসে দাঁড়ান। তাঁর অবস্থা দেখে স্থানীয় দোকানদারেরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তিনি দাশনগর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
হাওড়ার এসিপি (দক্ষিণ) গুলাম সারোয়ার বলেন, ‘‘ঘটনাটি রেলের এলাকায় হলেও যে হেতু আক্রান্ত ব্যক্তি দাশনগর থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন তাই আমরা ফেরাইনি। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, প্রতি বাজেটে রেল যখন যাত্রী নিরাপত্তার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে তখন হল্ট স্টেশনগুলিতে যাত্রী সুরক্ষার সামান্যতম ব্যবস্থাও থাকবে না কেন?
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘হল্ট স্টেশনগুলিতে ব্যবস্থা এ রকমই। রেলের কোনও কর্মী থাকেন না। সাহায্যের প্রয়োজন হলে ওই ব্যক্তিকে দু’টি স্টেশন পরে সাঁতরাগাছি স্টেশনে যেতে হত। সেখানে গেলে সব সাহায্য মিলত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy