Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফোর্স ডেকেও পাচ্ছি না, আর্তনাদ পুলিশের

সামনে বুথ। প্রিসাইডিং অফিসারের টেবিলের নীচে না-ফাটা বোমা! মাটিতে পড়ে ছেঁড়া ব্যালট পেপার। পাশের পুকুরেও ভাসছে ওই কাগজ। প্রিসাইডিং অফিসার এবং দুই পোলিং অফিসার প্রাণ বাঁচাতে দরজা বন্ধ করে স্কুলের অন্য ঘরে।

লুঠ: ব্যালট বাক্স নিয়ে পালানোর মুহূর্ত। নিউ করোলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

লুঠ: ব্যালট বাক্স নিয়ে পালানোর মুহূর্ত। নিউ করোলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

রাস্তার ছড়িয়ে অজস্র ইটের টুকরো। চারপাশে বোমার দাগ। ছড়িয়ে বোমার দড়ি।

সামনে বুথ। প্রিসাইডিং অফিসারের টেবিলের নীচে না-ফাটা বোমা! মাটিতে পড়ে ছেঁড়া ব্যালট পেপার। পাশের পুকুরেও ভাসছে ওই কাগজ। প্রিসাইডিং অফিসার এবং দুই পোলিং অফিসার প্রাণ বাঁচাতে দরজা বন্ধ করে স্কুলের অন্য ঘরে। আর মাত্র একজন পুলিশ অফিসার বাইরে দাঁড়িয়ে কার্যত ঠকঠক করে কাঁপছেন!

কিছুক্ষণ পরেই ২০-২৫ জন যুবক ঢুকল বুথে। দু’টি ব্যালট বক্স তুলে নিয়ে মুহূর্তে উধাও! পুলিশ অফিসার স্কুলের চাতালেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। বাহিনী ডাকছেন না কেন? পুলিশ অফিসারের আর্তনাদ, ‘‘ফোর্স ডেকেও তো পাচ্ছি না!’’

সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ এই ছবি হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের কোলড়া-১ পঞ্চায়েতের কোলড়া গার্লস প্রাইমারি স্কুলের। তবে, শুধু ওই স্কুলই নয়, এ দিন ডোমজুড়, বালি-জগাছা এবং জগৎবল্লভপুরের বেশ কিছু বুথে এ ভাবেই শাসকদল ভোট বানচাল করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। শাসকদল আবার পাল্টা একই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীদের দিকে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সামনে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও।

বালি-জগাছা ব্লকের চকপাড়া পঞ্চায়েতের সারদানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সামনের পানা ভর্তি খালে নেমে একের পর এক চারটি ব্যালট বাক্স তুলে আনছেন পুলিশকর্মীরা। একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসার লক্ষ্মীকান্ত দুয়া বলেন, ‘‘আচমকা ঢুকে সব কিছু ছেলে সব লন্ডভন্ড করে দিল। বাধা দিতে গেলে সজোরে ধাক্কা মারল। ভোট হবে না বলে বাক্স নিয়ে চলে গেল।’’

পোলিং অফিসারেরা তখনও কাঁপছেন। তাঁদের একজন শঙ্কর সামুইয়ের কথায়, ‘‘ওঁদের একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কোনও মতে ভিতরে বসে শুনছিলাম বাইরে চলা বোমা-ও গুলির শব্দ।’’ এই ঘটনার পরেই বাহিনী নিয়ে গোটা বালি-জগাছা ব্লক চষে লাঠি ও বন্দুক উঁচিয়ে জটলা ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করেন হাওড়ার ডিসি রাজ করণ।

জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ নম্বর পঞ্চায়েতের ১৫৩ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারের হাত থেকেও ব্যালট ছিনিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ওই তিন ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে বাঁশ, লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়ায় বহু যুবক। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা, ইটবৃষ্টি হয়। বিভিন্ন বুথে বিরোধী দলের প্রার্থী-এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘ওরা গণতন্ত্র্রের কথা কোন মুখে বলে? সন্ত্রাস চালাল দিনভর।’’ পক্ষান্তরে, শাসকদলের পক্ষে জেলা (সদর) তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায়ের দাবি, ‘‘পরাজয়ের ভয়ে বিরোধীরাই ওই তিন ব্লকে লুঠপাট চালিয়েছে।’’

তবে, এই গোলমালের মধ্যে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবি সামনে এসেছে বালি-জগাছা ব্লকেই একটি জেলা পরিষদ আসনকে কেন্দ্র করে। জগদীশপুর, চামরাইল, দুর্গাপুর-অভয়নগর-২ পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী কল্যাণ ঘোষকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এখানকার ২৬টি বুথে ভোট লুঠ হয়েছে। তাই এই পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সেও গরমের মধ্যে আমাকে ছুটতে হচ্ছে।’’ তাঁর ইঙ্গিত দলেরই একাংশের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE