Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জালে ‘জল-কেরল’ উঠবে না তো, আতঙ্ক

যুক্তিবাদী সংস্থা সুত্রে জানা গিয়েছে, জল কেরল বা ‘হুক নোসড  সি স্নেক’ নামে তীব্র বিষধর এই সাপ সাধারণত দেখা যেত আরব সাগর, পারস্য উপসাগর ও অস্ট্রেলিয়ায়। দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অংশেও এর দেখা মেলে।

এই সেই জল কেরল। ফাইল চিত্র

এই সেই জল কেরল। ফাইল চিত্র

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

দিন কয়েক আগে সুন্দরবনে মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়েছিল প্রচুর মাছ। জেলেরা সেই মাছ বিক্রি করতে এসেছিলেন ক্যানিংয়ের প্রভাস রায়ের আড়তে। মাছের সঙ্গে ‘জল কেরল’ নামে একটি তীব্র বিষধর সাপকে কুচে মাছ ভেবেছিলেন জেলেরা। সাপ নিয়ে কাজ করে যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। তাদের কর্মীরা সাপটিকে চিনতে পারেন। জানা যায়, কুচে মাছ বলে যাকে ভুল করেছিলেন মৎস্যজীবীরা, আসলে তা তীব্র বিষধর একটি সাপ।

এরপর থেকে সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের মনে জল কেরলের ভয় ঢুকেছে। জীবনতলার আঠারোবাঁকির এক মৎস্যজীবি বলেন, ‘‘আমরা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী, খাঁড়িতে মাছ ধরতে যাই। জালে বিভিন্ন ধরনের মাছ পড়ে। তার মধ্যে কোনটি বিষধর সাপ বা অন্য কিছু, তা বুঝব কী করে? হাত দিয়ে মাছ বাছতে গিয়ে সাপ না চিনে কামড় খেলেই হল আর কী!’’

যুক্তিবাদী সংস্থা সুত্রে জানা গিয়েছে, জল কেরল বা ‘হুক নোসড সি স্নেক’ নামে তীব্র বিষধর এই সাপ সাধারণত দেখা যেত আরব সাগর, পারস্য উপসাগর ও অস্ট্রেলিয়ায়। দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অংশেও এর দেখা মেলে। এ ছাড়া, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার মায়ানমার, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে আছে এই সাপ। সুন্দরবনের নদীতে কী ভাবে সে এল, সেটাই প্রশ্ন।

সাপটির মাথা সুচলো, লেজের দিক চ্যাপটা। প্রায় ৬-৭ ফুট লম্বা হয়। সারা বিশ্বে ২০টি সামুদ্রিক বিষধর সাপের মধ্যে অন্যতম হল এই ‘জল কেরল।’ একবার ছোবলে এই সাপ বিষ ঢালে প্রায় ৭-১০ মিলিগ্রাম। সুন্দরবন এলাকায় বসবাসকারী বিষধর কেউটে ও কালাচ সাপের থেকেও অনেক বেশি বিষাক্ত জল কেরল। সাধারণত, জলের প্রায় একশো মিটার গভীরে প্রায় থাকে এরা। টানা পাঁচ ঘণ্টা নিজেকে জলের গভীরে লুকিয়ে রাখতে পারে। এই সাপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, নদী বা সমুদ্রের জলের অতিরিক্ত লবণকে শরীরে অভিযোজন করে বেঁচে থাকতে পারে। এই সাপের কামড়ে নিউরোটক্সিন ও মাইট্রোটক্সিন দুই ধরনের বিষ থাকে। নিউরোটক্সিন স্নায়ু অকেজো করে। মাইট্রোটক্সিন মাংসপেশী অক্ষম করে দেয়।

ভারতে যে ধরনের এভিএস ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে নিউরোটক্সিসে তিনটি সাপের বিষের অ্যান্টিবডি থাকে। কালাচ, গোখরো, ফুরসা। চন্দ্রবোড়া সাপের ক্ষেত্রে থাকে হেমাটোটক্সিস। জল কেরল সাপের বিষ এভিএস তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না। তাই এই সাপ কামড়ালে চিকিৎসার সুযোগ নেই বলেই জানাচ্ছেন সাপে কামড়ানো নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

ক্যানিং হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমর রায় বলেন, ‘‘এই সাপ কামড়ানোর পরে সাধারণত এন্টি ভেনাম (এভিএস) কাজ করে না। কারণ, বিষের মধ্যে প্রোটিন থাকে অতি উচ্চমানের। তাই এই সাপে কামড়ালে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।’’ যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভারতের আন্দামানের দিকে সমুদ্রে এই সাপ মাঝে মধ্যে দেখা যায়। সমুদ্রের মোহনা হয়ে কোনও ভাবে সুন্দরবনের নদীতে ঢুকে পড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE