শ্যামপুরের ওসি নিগ্রহ মামলার শুনানি এখনও শুরু হয়নি। তার আগেই মামলাটি উলুবেড়িয়া আদালত থেকে হাওড়া আদালতে সরাতে চেয়ে জেলা বিচারকের কাছে আর্জি জানিয়েছে পুলিশ। মামলায় মূল অভিযুক্ত উলুবেড়িয়া আদালতেরই আইনজীবী মতিয়র রহমান মুন্সি।
গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, ওসি সুমন দাসকে মারধরের ঘটনায় একাধিকবার মূল অভিযুক্ত মতিয়রের জামিনের জন্য মহকুমা আদালতে শুনানি হয়েছে। শুনানি চলাকালীন আদালতের অনেক আইনজীবী মতিয়রকে জামিন দেওয়ার জন্য বিচারকের উপরে কার্যত চাপ দিচ্ছেন। তাঁর হয়ে সওয়ালকারী আইনজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে, মূল শুনানির সময়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাই মামলাটিকে অন্য আদালতে সরানোর পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
গত ১২ মার্চ শ্যামপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর অজয় মজুমদার জেলা বিচারকের কাছে ওই আবেদন জানান। তার ভিত্তিতে জেলা বিচারক মামলার নথিপত্র আগামী ৪ এপ্রিল তাঁর কাজে জমা দেওয়ার জন্য উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বাদী ও বিবাদী— দু’পক্ষকেই ওই দিন তাঁর কাছে হাজির করাতে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদলতকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গৌরব শর্মা শুধু বলেন, ‘‘আমরা মামলাটি উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালত থেকে হাওড়া জেলা আদালতে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছি। কারণ, উলুবেড়িয়া আদালতে মামলা চললে আমাদের কিছুটা অসুবিধা আছে। তবে এ বিষয়ে জেলা বিচারক যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই মেনে নেব।’’
একটি ওয়াকফ সম্পত্তির দেখভাল করা নিয়ে একই পরিবারের দু’পক্ষের গোলমালে অভিযুক্তদের ধরতে গিয়ে গত ৬ জানুয়ারি শ্যামপুরের বাড়গড়চুমুক গ্রামে প্রহৃত হন ওসি সুমনবাবু এবং এক সাব-ইনস্পেক্টর। প্রায় আড়াই মাস সুমনবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। সপ্তাহখানেক আগে তিনি ছাড়া পেলেও এখনও কাজে যোগ দেওয়ার অবস্থায় ফিরতে পারেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মতিয়র-সহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। সকলে জেল হেফাজতে রয়েছেন।
গত ২ মার্চ ধৃত সকলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। মতিয়ারের বিরুদ্ধে ওসিকে মারধর করা ছাড়াও পকসো আইনে এক মহিলার শ্লীলতাহানি এবং বিপক্ষের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পৃথক মামলাও রুজু করা হয়। ওই দু’টি মামলায় মতিয়র জামিন পেয়েছেন। কিন্তু পুলিশকে মারধরের ঘটনায় তিনি জামিন পাননি। বুধবারেও উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে মতিয়রের জামিনের শুনানি হয়। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক রূপাঞ্জনা চক্রবর্তী তা নাকচ করে দেন। এ দিনও মতিয়ারের জামিনের আর্জি জানান অনেক আইনজীবী।
এ সব দেখে মামলা সরানোর জন্য পুলিশের যে আবেদন করেছে, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন উলুবেড়িয়া আদালতের আইনজীবীদের একটা বড় অংশ। আগামী ৪ এপ্রিল হাওড়া আদালতে হাজির হয়ে তাঁরা এই মামলা সরানোর বিরোধিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন। মতিয়রের আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমরা আইনের পথে মতিয়রের জামিনের জন্য সওয়াল করেছি। বিচারককে প্রভাবিত করার কোনও চেষ্টা করা হয়নি। প্রতিটি শুনানির শেষেই মতিয়র-সহ ১৪ জনের জামিনের আবেদন নাকচ করছেন বিচারক। তা হলে চাপের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?’’
ওই আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন (ক্রিমিন্যাল)-এর সম্পাদক খায়রুল বাশার বলেন, ‘‘মতিয়ারের জামিনের সওয়ালে একাধিক আইনজীবী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যোগ দিয়েছেন এটা সত্যি। কিন্তু তা তো বেআইনি নয়। মামলাটি স্থানান্তরের আবেদন করে বরং পুলিশই প্রমাণ করল সরকারি বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
যা শুনে গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মতিয়রের হয়ে মাঠে নামার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। এখান থেকে থেকে মামলা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করা ছাড়া উপায় ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy