Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে নয়, রুখে দাঁড়াল নাবালিকা

স্কুল সূত্রের খবর, ওই দিন ষষ্ঠ পিরিয়ডে পড়াচ্ছিলেন অপরাজিতাদেবী। সেই সময় আচমকাই শ্রীপ্রিয়া ওই শিক্ষিকার কাছে গিয়ে একটু আলাদা করে সময় চায় কিছু কথা বলার জন্য।

শ্রীপ্রিয়া ঘোষ।

শ্রীপ্রিয়া ঘোষ।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

ক্লাস শেষের পরে স্কুলের দিদিমণিকে সব খুলে বলেছিল সে। জানিয়েছিল, বাড়িতে তার বিয়ে ঠিক করা হচ্ছে। এমনকী পাত্রের মোটা মেয়ে অপছন্দ বলে রাতে বরাদ্দ হয়েছে একটা করে রুটি। কিন্তু বিয়ে করতে নয়, সে পড়তে চায়। এ জন্য স্কুলের সাহায্য চেয়েছিল ষোলো বছরের মেয়েটি। অবশেষে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সহায়তায় আটকাল তার বিয়ে।

স্কুল সূত্রের খবর, বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের কলা বিভাগে একাদশ শ্রেণির শ্রীপ্রিয়া ঘোষ মঙ্গলবার দুপুরে সব জানায় সমাজতত্ত্বের শিক্ষিকা অপরাজিতা মজুমদারকে। কিশোরীর কথা শুনে অবাক হয়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে জানান অপরাজিতাদেবী। স্কুলের কাছে লিখিত ভাবে সহযোগিতার আবেদনও করে ওই নাবালিকা। স্কুলের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। মহিলা পুলিশ এসে শ্রীপ্রিয়াকে বালি থানায় নিয়ে যায়। ডেকে পাঠানো হয় তার বাবা-মাকে। ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করবেন না বলে রীতিমতো মুচলেকা দিয়ে তবেই থানা থেকে নিস্তার মেলে শ্রীপ্রিয়ার বাবা ঝন্টু ঘোষ ও মা সীমাদেবীর।

স্কুল সূত্রের খবর, ওই দিন ষষ্ঠ পিরিয়ডে পড়াচ্ছিলেন অপরাজিতাদেবী। সেই সময় আচমকাই শ্রীপ্রিয়া ওই শিক্ষিকার কাছে গিয়ে একটু আলাদা করে সময় চায় কিছু কথা বলার জন্য। এর পরে সব শুনে ওই শিক্ষিকা ক্লাস টিচার বেদশ্রী রায়কে জানান। বুধবার ওই দুই শিক্ষিকাই বলেন, ‘‘শ্রীপ্রিয়া কান্নাকাটি করে বলে, যে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িতে প্রবল চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকী কথা না শুনলে মা আত্মহত্যারও হুমকি দিতেন।’’

শিক্ষিকাদের থেকে বিষয়টি জানতে পেরে শ্রীপ্রিয়াকে ডেকে কথা বলেন প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী বসু। তার পরেই তিনি বালি থানায় খবর দেন। সেখানে ওই ছাত্রীকে নিয়ে যাওয়ার পরে ওসি বিকাশ দত্ত তার সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই ডেকে পাঠানো হয় ঝন্টুবাবুদের। এক প্রস্থ বকাবকি করার পরে ওসি তাঁদের বোঝান নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা কতটা অপরাধ।

বালির নিশ্চিন্দা পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা, বালি টোল প্লাজার কর্মী ঝন্টুবাবুর বড় মেয়ে শ্রীপ্রিয়া। সে জানায়, পাত্র পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। চেন্নাইতে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করেন তিনি। শ্রীপ্রিয়ার এক আত্মীয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ওই ২৮ বছরের যুবকের সঙ্গে পরিচয় ঝন্টুবাবুদের। এর পরে শ্রীপ্রিয়ার বোনের চিকিৎসার জন্য ফের চেন্নাই গেলে ঝন্টুবাবুদের দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্যও করেন ওই যুবক। এর পরেই বড় মেয়ের সঙ্গে ওই যুবকের বিয়ের সম্বন্ধ করে বসেন সীমাদেবীরা।

শ্রীপ্রিয়া বলে, ‘‘আমরা কেউ কাউকে সামনাসামনি দেখিনি। তা-ও মায়ের ফোন থেকেই ওঁর সঙ্গে আমায় কথা বলতে হতো। এক দিন রেগে বলেই দিয়েছিলাম বিয়ে করতে রাজি নই।’’ সে জানায়, এর পরেই ওই যুবক শ্রীপ্রিয়ার মাকে সব জানিয়ে দেন। তাতেই মেয়ের উপর আরও চাপ দিতে শুরু করেন সীমাদেবী। এমনকী সোমবার রাতে মারধরও করেন। শ্রীপ্রিয়া আরও বলেন, ‘‘প্রথমে বাবা-মা বলেছিলেন ১৮ বছর হলে বিয়ে দেবেন। কিন্তু আমি তাতেও আপত্তি করি। তখনই বাড়ির লোকজন তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। সামনের মাঘ-ফাল্গুনেই হয়তো বিয়ে দিয়ে দিতেন।’’

গত মাস দেড়েক ধরে এই বিয়ের আতঙ্কই তাড়া করে বেড়াচ্ছিল ওই কিশোরীকে। বান্ধবীদের কাছে কান্নাকাটি করত সে। এ দিন তার বান্ধবীরা বলে, ‘‘শ্রীপ্রিয়া সব সময় বলত ওর আপত্তি কেউ শুনছেন না। তাই শেষে বিয়েতে রাজি হতে হলে আত্মহত্যা করবে ও।’’

এ দিন বিকেলে ওই ছাত্রী ও তার বাবা-মাকে ডেকে কথা বলেন ডোমজুড়ের যুব সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ দে। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে সরকার কন্যাশ্রী দিচ্ছেন সেখানে পড়াশোনা না করিয়ে বিয়ে দেওয়া চিন্তা করাটাও ভুল। ঝন্টুবাবুদের সতর্ক করেছি। যাতে তাঁরা আর ভুলেও এমন চিন্তা না করেন।’’

এ দিন অবশ্য ঝন্টুবাবু বলেন, ‘সম্বন্ধ পাকা হয়নি। ছেলেটার সঙ্গে আলাপের পরে শুধু বিয়ের কথা হয়েছিল মাত্র। তাতেই মেয়ে ভয় পেয়েছিল। স্নাতক না করে বিয়েই দেব না।’’ আর সীমাদেবীর কথায়, ‘‘ভুল হয়েছিল ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলাটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage নাবালিকা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE