তুলকালাম: ট্রাকের আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। মৃত অর্পিতা পাল (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
ট্রাকের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বুধবার সকালে তেতে উঠল গোঘাটের কামারপুকুর কলেজ গেট সংলগ্ন এলাকা। ট্রাকে ভাঙচুর, আগুন, চালককে মারধর, আড়াই ঘণ্টা অবরোধ— কিছুই বাদ গেল না। বিক্ষোভকারীরা ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। র্যাফ ও পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রেফতার করা হয় ট্রাকের চালক-সহ চার জনকে। স্থানীয়দের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন এসডিপিও (আরামবাগ) কৃশানু রায়।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম অর্পিতা পাল (১৬)। বাড়ি ওই থানা এলাকার আনুড় গ্রামে। সে আনুড় হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। এ দিন কামারপুকুর থেকে টিউশন নিয়ে সাড়ে ১০টা নাগাদ সে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। কামারপুকুর কলেজ গেটের কাছে ভূতির খালের উপর অপরিসর সেতু পার হওয়ার সময় পিছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা ট্রাকটি তাকে ধাক্কা মারে। স্থানীয় লোকজন ছাত্রীটিকে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। তারপরেই তেতে ওঠে এলাকা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে কামারপুকুর কলেজ গেট সংলগ্ন কামারপুকুর-জয়রামবাটী সড়কে অবরোধ শুরু হয়ে যায়। জনতার একাংশ ধরে ফেলেছিল ট্রাক-চালককে। তাকে একটি দোকান-ঘরে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর চলতে থাকে। ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই কিছু লোকজন ট্রাকটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। সেই সময় ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ার পরিস্থিতি সামলাতে গেলে তাঁদের হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে পুলিশ বাহিনী এবং র্যাফ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও। প্রহৃত ট্রাক-চালককে উদ্ধার করে প্রথমে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবরোধ হটাতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানেনি। দুপুর ১টা নাগাদ রাস্তা অবরোধমুক্ত হয়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে।
সংশ্লিষ্ট রাস্তাটি রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলের গা দিয়ে ঘুরে (ইউ টার্ন) কামারপুকুর কলেজ গেট ছুঁয়ে জয়রামবাটীর দিকে গিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ওই রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চললেও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে না। সম্প্রতি সেই ‘ইউ টার্ন’-এর জায়গায় একটি মন্দির তৈরি হওয়ায় অন্যদিক থেকে গাড়ি এলে দেখা যায় না। বিষয়টা পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও কিছু হয়নি। দুর্ঘটনা লেগেই ছিল। এ বার প্রাণহানি হল।
দুই ভাইবোনের মধ্যে অর্পিতা বড়। তার বাবা দিলীপবাবু টুরিস্ট বাস চালান। এ দিন তিনি কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। আনুড় হাইস্কুলের শিক্ষক কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই ইউ টার্ন-এর জায়গাটি বিপজ্জনক। আমরাও ছাত্রীদের সতর্ক হয়ে পার হতে বলি। ওই জায়গায় কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরাও প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু তার আগেই অকালে আমাদের এক মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy