আবাসিক সংখ্যা বেশি দেখানোয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল প্রশাসন। প্রায় ন’লক্ষ টাকা ফেরত চেয়ে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে ওই হোম কর্তৃপক্ষকে। চিঠি পাওয়ার পনেরো দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেও প্রশাসন সূত্রে খবর। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “তদন্তে আবাসিক সংখ্যায় গরমিল ধরা পড়ে। তাই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, টাকা ফেরত চেয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদিকা রিনা ঘোষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট মাস এডুকেশন এক্সটেনশন অফিসার দেবমাল্য বসু। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী, মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভবাবুকে। দেবমাল্যবাবুরও বক্তব্য, “তদন্তের পরই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।” বেসরকারি এই হোমটি রয়েছে কেশপুরের মহিষদায়। এটি পরিচালনা করে ‘কেশপুর প্রগতিশীল ভগবতী শিক্ষাসদন’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থাটি গড়ে ওঠে অনেক আগেই। নব্বইয়ের দশকের শেষে সংস্থার উদ্যোগে মহিষদায় এই হোম তৈরি হয়। এখানে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীরা থেকে পড়াশোনা করে। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে একশোজন ছাত্রছাত্রী থাকতে পারে।
কর্তৃপক্ষ অবশ্য আবাসিক সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদিকা রিনাদেবীর দাবি, “আমরা আবাসিক সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাইনি। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “এই সময়ের মধ্যে কেউ কেউ হোমছুট হয়ে যায়। শরীর খারাপের জন্য বাড়ি ফিরে যায়। আর হোমে ফিরে আসেনি। এটা প্রশাসনও জানে।” তাহলে কেন এমন অভিযোগ উঠছে? কর্তৃপক্ষের একাংশ এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুঁজে পাচ্ছেন। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের অনেকেই সিপিএমের নেতা-নেত্রী। সংস্থার সম্পাদিকা রিনাদেবী সিপিএমের মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কেশপুর জোনাল সম্পাদিকা। কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণেই এখন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। শাসক তৃণমূলের অলিখিত নির্দেশেই প্রশাসন এ নিয়ে পদক্ষেপ করছে। রিনাদেবী বলেন, “যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মেনে নেওয়া কঠিন। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।”
হোমের আবাসিকদের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ হয়। এক সময় মাথাপিছু ন’শো টাকা করে বরাদ্দ হত। পরে তা বেড়ে সাড়ে বারোশো টাকা হয়। একাংশ বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ ওঠে। কোথাও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আবাসিকদের রাখা হয়। মশারিও মেলে না, নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। কোথাও আবার বঞ্চনার প্রতিবাদ করলে আবাসিকদের শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। কেশপুরের এই হোমের ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কোনও অভিযোগ নেই। প্রশাসন সূত্রে খবর, হোমে যে সংখ্যক ছাত্রছাত্রী রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ খাতায়-কলমে দেখিয়েছিলেন, তদন্তে দেখা গিয়েছে হোমে সেই সংখ্যক ছাত্রছাত্রী থাকে না। অথচ, কর্তৃপক্ষের দেখানো সংখ্যা অনুযায়ী মাথাপিছু সরকারি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ২০১১-’১২ থেকে ২০১৩-’১৪, এই তিন বছরের ক্ষেত্রে মোট ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার ২৪৪ টাকা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনের দাবি, এই অর্থের সদ্ব্যবহার হয়নি। যেখানে একশোজন আবাসিকের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে, সেখানে ওই হোমে আবাসিকের সংখ্যা এই সময়ের মধ্যে ছিল ৭৬।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১১-’১২ আর্থিক বছরের ক্ষেত্রে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা, ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরের ক্ষেত্রে ৩ লক্ষ ৮ হাজার ১০০ টাকা এবং ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরের ক্ষেত্রে ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৪৪ টাকা ফেরত চেয়েই হোম কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy