Advertisement
১১ মে ২০২৪

উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি মঞ্জুরের নির্দেশ আদালতের

উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি মঞ্জুর করেননি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী শুভব্রত পাল। হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ছুটি মঞ্জুরের নির্দেশ দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:১০
Share: Save:

উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি মঞ্জুর করেননি বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী শুভব্রত পাল। হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ছুটি মঞ্জুরের নির্দেশ দিলেন। শুভব্রতর আইনজীবী শামসুল আরেফিন বলেন, “কোনও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান তাঁর কর্মীকে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না। তাই বিচারক শুভব্রত পালকে ছুটি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।” আদালতের নির্দেশে খুশি শুভব্রত বলেন, “আমি আরও পড়তে চাই। আদালত, সেই সুযোগ
দেওয়ায় কৃতজ্ঞ।”

শুভব্রত পাল বর্তমানে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র পিওনের পদে চাকরি করেন। বাবার মৃত্যুর পর অল্প বয়সেই ওই চাকরি পান তিনি। চাকরি পেলেও উচ্চশিক্ষা লাভের ইচ্ছেটা রয়েই গিয়েছিল। তাই এম টেক এ ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। পরীক্ষায় পাশের পর সুযোগও পান কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। কিন্তু এম টেক করার জন্য দু’বছর ছুটির প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে, বেতন ছাড়াই দু’বছরের ছুটির আবেদন জানান শুভব্রত। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কমিটি ছুটি মঞ্জুর করেনি। শুভব্রতকে তা জানিয়েও দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা ওই যুবক। কর্তৃপক্ষকে বোঝানোরও চেষ্টা করেন। কিন্তু সুরাহা না হওয়ায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। ১৯ তারিখ হাইকোর্ট তাঁর ছুটির বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ পাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যেই কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্তের কথা জানাতেও বলেছে আদালত।

কেন শুভব্রতর ছুটি মঞ্জুর করা হল না? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ দু’বছর চাকরি করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি চাইলে নিতে পারেন। শুভব্রতর চাকরি দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কারণ, ২০১৩ সালের ২৯ অগস্ট চাকরিতে যোগ দেন তিনি। কর্তৃপক্ষের দাবি, আগেও চাকরি করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে তিনি এমসিএ করেছিলেন। তখন পরীক্ষার সময়গুলিতেও তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। দু’বার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করার জন্য একজনকে বারবার সুবিধে দেওয়া যাবে না। তাছাড়াও কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় যুক্তিটি হল, বর্তমানে উনি যে পদে রয়েছেন তাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রয়োজনও নেই। ভবিষ্যতে যদি পদোন্নতির দিকেও তাকানো হয় তাহলেও চিন্তার কারণ নেই। কারণ, বর্তমান শিক্ষাগত যোগ্যতাই পদোন্নতির জন্য যথেষ্ট। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী সঙ্কট রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি। একজনকে ২ বছরের জন্য ছুটি দিতে হলে কাজেরও সমস্যা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীর কথায়, “এই সব কারণেই এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল অনুমতি দেয়নি। হাইকোর্ট যদি এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দিয়ে থাকে তাহলে তা এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে জানানো হবে। কমিটিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।” শুভব্রতর কথায়, “আমি যখন চাকরি পেয়েছিলাম তখন আমার এমসিএ-র তৃতীয় সেমিস্টার চলছিল। এ ক্ষেত্রে আমার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছিলাম। আবারও উচ্চশিক্ষার জন্য সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের কাজে অবশ্য সন্তুষ্ট নন অনেক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীই। যদিও প্রকাশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষকদের অভিযোগ, শুধু শুভব্রত নন, আগেও অনেক কর্মীকে উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি দেওয়া হয়নি। শিক্ষকদেরও বিভিন্ন পাঠ্যক্রমের জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হলেও ছুটি দেওয়া হয় না। ওই শিক্ষকদের কথায়, “উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে যে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এত কুণ্ঠা থাকতে পারে তা আবে ভাবতেই পারতাম না। এখন সেটাই চোখের সামনে
ঘটে চলেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE