একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অন্তত ৫০ শতাংশ মহিলার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা। রাজ্য থেকে জেলাকে সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারছে না পশ্চিম মেদিনীপুর। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম সাড়ে চার মাসে একশো দিনের কাজে জেলায় মহিলাদের কাজ পাওয়ার হার মাত্র ৩৯%। অর্থাৎ, প্রকল্পে যদি ১০০ জন কাজ করেন, তার মধ্যে ৩৯ জন মহিলা, বাকি ৬১ জনই পুরুষ।
সরকারের লক্ষ্য এই প্রকল্পে অন্তত ৫০ শতাংশ মহিলার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, সেখানে মেয়েদের কাজ পাওয়ার হার কম কেন? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “প্রকল্পে মহিলাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জেলার পরিস্থিতি খারাপ নয়! তবে এটা ঠিক, আরও বেশি সংখ্যক মহিলার যোগদান দরকার।” সিপিএমের প্রাক্তন সভাধিপতি, বর্তমানে বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, “একশো দিনের প্রকল্প জেলায় ধুঁকছে! প্রচুর শ্রমিক কাজ করেও মজুরি পাননি। মহিলাদের কাজের হার বাড়াতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার। কিন্তু তা চোখে পড়ছে না!”
বকেয়া মজুরির দায় অবশ্য কেন্দ্রের ঘাড়েই চাপিয়েছে জেলা পরিষদ। সভাধিপতির কথায়, “একশো দিনের প্রকল্পের টাকা আসে কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্র টাকা বকেয়া রাখার ফলেই কাজ করেও বেশ কিছু শ্রমিক মজুরি পাচ্ছেন না। ফলে, প্রকল্প রূপায়ণেও উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে।”
একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুরে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম সাড়ে চার মাসের পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। জেলায় জব কার্ড ইস্যু হয়েছে ৯,১৭,১৭৯টি। অথচ কাজ পেয়েছে ৪,৭৪,৪৬৩টি পরিবার। গড়ে কাজ মিলেছে ২৩ দিন। ১৫ অগস্ট পর্যন্ত ১০০ দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ১,৮৫৬টি পরিবারকে। ১,৪৭,৬৯১টি প্রকল্প অনুমোদন পেলেও মাত্র ৪,৪৯২টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আর বহু ক্ষেত্রেই কাজের পর মেলেনি মজুরি। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, বকেয়া অর্থের পরিমাণ ২৭০ কোটিরও বেশি।
মহিলাদের স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে এখন বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। একশো দিনের প্রকল্পেও সেই একই লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সে জন্যই অন্তত ৫০ শতাংশ মহিলার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে প্রকল্পে। আর সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মহিলা কেন্দ্রিক প্রকল্প নিতে বলা হয়েছে। সেখানে শুধু মহিলারাই কাজ করবে। সেই মতো জেলায় কিছু কর্মসূচি করা হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়, গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে হবে। প্রয়োজনে মাইকে প্রচার হবে।
তাতেও পরিস্থিতি যে বিশেষ বদলায়নি, তা কাজ পাওয়ার পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ২৯টি ব্লক। একশো দিনের প্রকল্পে মেয়েদের কাজের হারে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে কেশপুর। কেশপুরে মহিলাদের কাজ দেওয়ার হার মাত্র ২৬ শতাংশ। মাত্র ৩টি ব্লক লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পেরেছে। দাসপুর-২, ডেবরা এবং খড়্গপুর-১। দাসপুর- ২ ব্লকে এই হার ৫৯ শতাংশ। ডেবরায় ৫০ শতাংশ। এবং খড়্গপুর-১ ব্লকে ৫২ শতাংশ। অন্য দিকে, পরিবার পিছু কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে সবং। পিছিয়ে রয়েছে মোহনপুর। গোটা জেলায় এখনও পর্যন্ত ৪,৭৪,৪৬৩টি পরিবার কাজ পেয়েছে। সবংয়ে কাজ পেয়েছে ৩০,৮২৬টি পরিবার আর মোহনপুরে কাজ পেয়েছে ৭,২১৮টি পরিবার।
কেন প্রকল্পে মহিলাদের কর্মসংস্থান বাড়ছে না? জেলা পরিষদের এক কর্তার মতে, সামাজিক পরিস্থিতিই এর জন্য দায়ী। বাড়ির মহিলাদের তো জোর করে কাজে আনা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ওই কর্তার কথায়, “একশো দিনের প্রকল্পে বেশিরভাগ কাজই মাঠেঘাটে করতে হয়। তাই অনেকে বাড়ির মহিলাদের কাজে পাঠাতে চান না। পরিস্থিতির পরিবর্তনে এমন কিছু প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, যেখানে কাজ করা অনেক বেশি সহজ, অন্তত মহিলাদের পক্ষে। এ জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে বৃক্ষরোপণ, মোরাম রাস্তার কাজ, জমি সমতলীকরণ, সেচ খাল তৈরির উপর। দরকারে আরও বেশি সংখ্যক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাহায্য নেওয়া হবে।” জেলা পরিষদের ওই কর্তার দাবি, আগে মেয়েদের কাজ পাওয়ার হার ৩৫-৩৭%-এর মধ্যে থাকত। এখন বেড়ে ৩৯% শতাংশ হয়েছে। এ ভাবে এগোলে ৫০%-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ খুব একটা সমস্যার হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy