রিমোটে উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর। সঙ্গে দুই সাংসদ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে দিঘাকে গোয়া বানানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সেই দিঘায় প্রশাসনিক সভা করতে এসে ফের সৈকত নগরীর উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন কপ্টারে দিঘা পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেল তিনটে নাগাদ নিউ দিঘার পুলিশ হলিডে হোম মাঠে শুরু হয় প্রশাসনিক জনসভা। দিঘার প্রবেশপথে নির্মিত একটি স্বাগত তোরণের (ওয়েলকাম গেট) উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই অভূতপূর্ব স্থাপত্যকীর্তি দিঘার গর্ব। এখানে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ পর্যটক বেড়াতে আসেন। তাঁদের আকর্ষণের জন্য স্বাগত তোরণ তৈরি করা হয়েছে।” মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভের ধাঁচে দিঘা থেকে তাজপুর, শঙ্করপুর, মন্দারমণি এলাকা নিয়ে যে ৪০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। এ দিন সেই অসম্পূর্ণ রাস্তারই উদ্বোধন করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নতুন একটি রাস্তার কথাও শুনিয়েছেন মমতা আর তা নিয়ে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, “দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সমান্তরাল একটি নির্মাণের জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালেই এর কাজ শুরু হবে। এর ফলে যাতায়াতে খুব সুবিধা হবে।”
জেলার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ নিবিড় করতে রাজ্য সড়ক উন্নয়ন নিগম ইতিমধ্যে ৬টি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করেছে। এই সড়কগুলি রাজ্যের কয়েকটি প্রধান সড়ককে যুক্ত করবে। মমতা এ দিন এই রাস্তাগুলির কথাই বলেছেন না পৃথক একটি রাস্তার ঘোষণা করেছেন, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের মেচোগ্রাম থেকে হুগলির আরামবাগ হয়ে বীরভূমের মোরগ্রাম পর্যন্ত গিয়ে ওই রাস্তা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সমান্তরাল হিসেবে এগোবে।” রাজ্য সড়ক উন্নয়ন নিগম যে ছ’টি রাস্তা বানাচ্ছে, তার মধ্যেও একটি রাস্তা হবে মেচোগ্রাম থেকে মোরগ্রাম পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাঙ্ক। ফলে, মমতা এই রাস্তার কথাই বলেছেন কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
নিরাপত্তার ঘেরাটোপ দিঘার সৈকতে
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও জানান, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কাজ চলছে আর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ ২০১৫ সালে শুরু হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন, স্বাধীনতার পর থেকে ৬৬ বছরে রাজ্যে যে উন্নতি হয়নি, সেটাই হয়েছে গত সাড়ে তিন বছরে। উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আগে রাজ্যে ৩৮টি কলেজ ছিল। আমরা তিন বছরে ৩০টি সরকারি, ১৫টি বেসরকারি মোট ৪৫টি কলেজ করে দিয়েছি। তফসিলি পড়ুয়াদের জন্য উচ্চশিক্ষায় ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে।” কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে তিনি আরও বলেন, “বাম জমানার ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে আমাদের। ইউপিএ সরকারের পরে বিজেপি সরকারও এখন রাজ্যের বরাদ্দ থেকে ঋণের টাকা কেটে নিচ্ছে। এই টাকা না কাটলে আরও বেশি উন্নয়ন হত।”
এ দিন সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব মেদিনীপুরের ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৯টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। মঞ্চে বক্তব্য রাখেন দুই সাংসদ শিশির ও অধিকারী। মঞ্চে দেখা গিয়েছে জেলা তৃণমূলে অধিকারীদের বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত দুই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ও জ্যোতির্ময় করকে। ছিলেন জেলা কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরিও। তবে কোন্দল থামানোর কোনও বার্তা এ দিন তৃণমূল নেত্রী অন্তত প্রকাশ্যে দেননি। তবে বিঁধতে ছাড়েনি একাংশ সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের। কারও নাম না করেই মমতা বলেন, “চক্রান্ত করে, কুৎসা ও হিংসা দিয়ে বাংলার এই উন্নয়নকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমরা কলকাতায় বসে সরকার চালাই না। জেলায় জেলায় ছুটে আসি। তাই আমরা উন্নয়নের নিরিখে এক নম্বর।”
দিঘার সৈকতাবাসে মঙ্গলবার রাত কাটান মুখ্যমন্ত্রী। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জেলাশাসক অন্তরা আচার্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সমুদ্র তীরে বেড়াতেও যান। আজ, বুধবার হলদিয়ায় একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকেই রওনা হয়ে যাবেন কলকাতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy