গোলবাজারে ডিলার অফিসের সামনে গ্রাহকদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই আইওসি-র এলপিজি গ্রাহকদের অন্য ডিলারের কাছে স্থানান্তরিত করায় ক্ষোভ উগরে দিলেন গ্রাহকেরা। শুক্রবার খড়্গপুরের বিভিন্ন এলাকার উপভোক্তারা সংগঠিত হয়ে এই প্রতিকার চেয়ে মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
সম্প্রতি গোলবাজার ও আইআইটি ডিলার শাখার ১৩ হাজার এলপিজি গ্রাহককে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ওই গ্রাহকদের ঝাপেটাপুরের নতুন একটি ডিলারের গ্রাহক হতে হবে। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকেই গোলমাল চলছিল। ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ভাঙচুর করেন গোল বাজারের ডিলারের অফিস। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “মঙ্গলবারের মধ্যেই সব পক্ষকে ডেকে বৈঠকে বসব।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, পুজোর আগে থেকেই খড়্গপুরে এলপিজি সিলিন্ডার কেনার ক্ষেত্রে পুরানো পদ্ধতি বদলে মোবাইল বুকিং চালু হয়। কিন্তু, চাহিদা অনুযায়ী জোগান কম থাকায় গ্যাস সরবরাহে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগছে বলে অভিযোগ। ফলে ভিড় হচ্ছিল ডিলার অফিসগুলিতে। তার মাঝেই বৃহস্পতিবার থেকে ডিলার বদলের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বাড়ে।
আইওসি নতুন ডিলার পয়েন্ট খুলেছে রেলশহরের ঝাপেটাপুরে। এর গুদাম রয়েছে খড়্গপুর গ্রামীণের রূপনারায়ণপুরে। সেই ডিলারের অধীনে গ্রাহক বাড়াতে অন্য ডিলারের থেকে গ্রাহক চাওয়া হয়েছিল বলে খবর। সেই মতো গোল বাজারের ডিলার প্রায় ২৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১০ হাজার গ্রাহককে ওই ডিলারের কাছে স্থানান্তর করে। এ ছাড়া আইআইটি সমবায়ের একটি ডিলারের প্রায় ১১ হাজার গ্রাহকের প্রায় ৩ হাজারকে নতুন ডিলারের কাছে পাঠানো হয়। আইওসি-র দুর্গাপুরের চিফ এরিয়া ম্যানেজার ডি মুরলি বলেন, “খড়্গপুরে গত ২৪ বছর ধরে দু’জন ডিলার ছিল। সমস্যার কথা ভেবেই এই নতুন ডিলার পয়েন্ট খোলা হয়েছে।” কিন্তু রেলশহরের এলপিজি গ্রাহকদের অভিযোগ, এত দিন যে ডিলার ছিল, তাঁদের গুদাম ও অফিস বাড়ির সামনে থাকায় সেখানে সহজেই সিলিন্ডার বুকিং করা যেত। সেই সঙ্গেই গুদাম থেকে সরকারি সিলিন্ডার গ্রাহক নিজে নিলে ৪২১ টাকার বদলে ৪০৬ টাকা দিতে হত। কিন্তু এখন গুদাম দূরে হয়ে যাওয়ায় ৪২১ টাকাতেই সকলকে গ্যাস নিতে হবে। আইআইটি সমবায়ের অধীনে থাকা তালবাগিচা, প্রেমবাজার, ডিভিসি এলাকার বাসিন্দাদের যেতে হবে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঝাপেটাপুরে। গোলবাজারে ডিলারের অধীনস্থ নিমপুরা, ভবানীপুরের গ্রাহকদেরও একই অবস্থা!
স্বভাবতই ক্ষোভে ফেটেছেন নাগরিকেরা। ভবানীপুরের মলয়কুমার সরকার, প্রেমবাজারের অরুণশঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “ডিলার পরিবর্তন হওয়ায় এখন এত দূরে ছুটতেই কালঘাম ছুটবে। তার উপরে সরবারহ নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।” এই ক্ষোভ নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় গোলবাজারের ডিলারের অফিস ভাঙচুর করে একাংশ গ্রাহক। এতে শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় সিলিন্ডার সরবারহ হয়নি। ফলে গ্রাহকেরাও ফিরে গিয়েছেন। ওই এলাকায় বসেছে পুলিশ পিকেট। গোলবাজারের ডিলার মনিকা বিশ্বাস বলছেন, “আমি কী কখনও চাইব, গ্রাহক কমে যাক? কিন্তু আইওসি-র নিয়ম মানতে হয়েছে।”
পুরনো পদ্ধতিতে সিলিন্ডার সরবারহ না হওয়া, আলোচনা না করে স্থানান্তর, গুদাম থেকে ন্যায্য দামে সিলিণ্ডার না পাওয়ার অভিযোগ তুলে এ দিন সরব হয়েছে গ্রাহকেরা। এ দিন তাঁরা একজোট হয়ে ডিলারের অফিসে বিক্ষোভ দেখায়। এর পর বিকেলে খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে এই পরিস্থিতি বদলের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। নেতৃত্বে থাকা গোলবাজার গ্রাহকদের পক্ষে অনিল দাস, আইআইটি সমবায়ের গ্রাহকদের তরফে প্রদীপ ধর বলেন, “১৩ হাজার গ্রাহক চরম সমস্যায় পড়েছেন। একেই সময়ে সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকদের স্থানান্তর করায় নতুন করে গ্রাহক হওয়ার সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy