ভবনের সামনে বাগান।
এক চিলতে ঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পড়াশোনা। জঙ্গলমহলের বেশিরভাগ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এই চিত্রটা এবার বদলাতে চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে এবার মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত জেলার ১১টি ব্লকে ৩১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করা হচ্ছে। ওই ৩১টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেরই নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। ওই ৩১টির মধ্যে ১১টি কেন্দ্রে পুরো ভবনটিই হবে শিক্ষাগার (বিল্ডিং অ্যাজ লার্নিং এইড)। এর মধ্যে কয়েকটির কাজ হয়ে গিয়েছে। সাধারণত, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। কেন্দ্রগুলিতে তিন থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাও দেওয়া হয়। শিশু ও মায়েদের সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করা হয়। সেই সঙ্গে কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের নিয়মিত টিকাকরণও করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বলতে এক চিলতে ঘর, কিছুটা দূরে শৌচাগার ও রান্নার জায়গা। কোথায় আবার উপযুক্ত ভবনের অভাবে কেন্দ্রের কাজকর্মই ঠিকমত পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু প্রশাসন সূত্রে দাবি, মডেল কেন্দ্রগুলি চিরাচরিত কেন্দ্রগুলির থেকে একেবারেই আলাদা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “প্রথম পর্যায়ে ১১টি ব্লকে ৩১টি মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে আরও বেশি মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি করার ভাবনা রয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আইএপি’ প্রকল্পে ওই ৩১টি মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্র তৈরি করতে খরচ হচ্ছে দশ লক্ষ টাকা। বেলপাহাড়ি, লালগড়, ঝাড়গ্রাম, জামবনি, গোপীবল্লভপুর ১, গোপীবল্লভপুর ২, নয়াগ্রাম, গোয়ালতোড় ও শালবনি ব্লকের প্রতিটিতে ৩টি করে মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। সাঁকরাইল ব্লকে দু’টি ও সদর ব্লকে দু’টি মডেল কেন্দ্র হচ্ছে। উত্তরাদেবীর দাবি, “জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় শিশু এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টি ও সার্বিক স্বাস্থ্যবিধানে জোর দেওয়ার পাশাপাশি, আদর্শ পরিবেশে শিশুমনের বিকাশ ঘটানোর জন্যই এই উদ্যোগ। এ জন্য বাছাই করা ওই ৩১টি কেন্দ্রকে মডেল কেন্দ্রে উন্নীত করা হচ্ছে।” বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধরমপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি মডেল কেন্দ্র হিসেবে নতুন ভবনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। কেন্দ্রের কর্মী সারদা মাণ্ডি বলেন, “সুসজ্জিত নতুন কেন্দ্রটি শিশু ও অভিভাবকদের মধ্যে আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে। অভিভাবকেরা নিয়মিত শিশুদের পাঠাচ্ছেন। কেন্দ্রে শিশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মডেল কেন্দ্রে ভবনের মধ্যেই এক ছাদের তলায় শৌচাগার, রান্নাঘর, স্টোর রুম থাকছে। মডেল কেন্দ্রগুলির শৌচাগার ও রান্নাঘরের উপযুক্ত জল নিকাশির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যাতে কোথাও জল জমে না থাকে। মডেল কেন্দ্রের ভবনের ভিতরের দেওয়ালে শিশুদের নানা রকমের রং চেনানোর ব্যবস্থা থাকছে। ব্যবস্থা থাকছে পশু, পাখি, যানবাহন ও বিভিন্ন বর্ণমালা খেলার ছলে শেখানোরও। সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা মূলক দেওয়াল চিত্র থাকবে আদর্শ কেন্দ্রগুলিতে। প্রতিটি মডেল কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক আলো-পাখার ও পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকছে। কেন্দ্রের সামনে এক চিলতে বাগান ও কিচেন গার্ডেন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের বাগানে মরশুমি ফুল লাগানো হবে শিশুদের চেনানোর জন্য। খাদ্য তালিকায় সুষম ও পুষ্টিকর খাবার রাখার জন্য কিচেন গার্ডেনে শাকসব্জি ফলানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy