কলেজের এক অনুষ্ঠানে করা বক্তব্য ঘিরে বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। গত শনিবার মেদিনীপুরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে কমার্স কলেজের নবগঠিত টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা হলে নিজের বক্তব্যের গোড়াতেই টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে সামাজিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন! কমার্স কলেজ আমার রাজনৈতিক জীবনে বড় অ্যাচিভমেন্ট! এই কলেজ আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দিতে পেরেছি!” তিনি এও বলেন, “তোমরা সঙ্গে থেকো। টিএমসিপি-র সঙ্গে থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকা হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে থাকতে চাই। কলেজ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৮০ শতাংশ ভোট আমরা পেয়েছি। এটা বড় ব্যাপার।” এই মন্তব্যকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। টিএমসিপি জেলা সভাপতির মন্তব্য নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। দলের একাংশ জেলা নেতৃত্ব মানছেন, এমন মন্তব্য না- করলেই ভাল হত।
ঘটনাটি ঠিক কী? গত শনিবার মেদিনীপুর কমার্স কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের উদ্যোগে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে কী বলেছিলেন তৃণমূলের এই ছাত্র নেতা? অনুষ্ঠানে মিনিট কুড়ির বক্তব্যের একেবারে শেষ দিকে রমাপ্রসাদ বলেন, “তোমরা (ছাত্রছাত্রীরা) সরস্বতী পুজো, ভ্যালেন্টাইনস্ ডে কাটিয়েছ। যাঁদের সরস্বতী পুজোয় প্রেম হয়নি, ভ্যালেন্টাইনস্ ডে- তে প্রেম হয়নি, তাঁদের প্রতি আশীর্বাদ রইল! নিশ্চয়ই কাউকে কাউকে পাবে! আর যাঁরা হারিয়েছ (প্রেমের সম্পর্ক), সামনে এগিয়ে যাও! নিশ্চয়ই কাউকে পাবে! আমার আশীর্বাদ রইল!” টিএমসিপি জেলা সভাপতির এই মন্তব্য নিয়েই সরব হয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো। ছাত্র পরিষদের নেতা মহম্মদ সইফুলের কথায়, “কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এ সব কী মন্তব্য? ভাবা যায়? তৃণমূলের ছাত্র নেতা ঠিক কী বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন?” এসএফআইয়ের নেতা সৌগত পণ্ডার কথায়, “ওদের (টিএমসিপি) সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি মানায় না। এমন মন্তব্য ওরাই করতে পারে!”
মেদিনীপুর কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদ আগে ছাত্র পরিষদের দখলে ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর বহু চেষ্টা করেও সংসদের দখল নিতে পারেনি টিএমসিপি। এ বার অবশ্য ছাত্র সংসদ সিপি-র হাতছাড়া হয়। মাস দুয়েক আগেই সংসদের ক্ষমতায় আসে টিএমসিপি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের উদ্যোগে এটাই ছিল প্রথম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পাশে থাকার জন্য অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি রমাপ্রসাদ। ছাত্র সংসদের অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েছে টিএমসিপি, এই অভিযোগে মঙ্গলবারই কলেজে স্মারকলিপি দিয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। একই অভিযোগে বুধবার স্মারকলিপি দিয়েছে সিপি। সিপি নেতা অমিত সিংহ, শুভাশিস পণ্ডাদের বক্তব্য, “শিক্ষাঙ্গনের একটা পবিত্রতা রয়েছে। সেই পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থেই আমরা কলেজ- কর্তৃপক্ষের দারস্থ হই।”
টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদের অবশ্য দাবি, তিনি কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করেননি! বুধবার তৃণমূলের এই ছাত্র নেতা বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ওরা (সিপি) বুঝে উঠতে পারছে না কী করবে! তাই কুত্সা- অপপ্রচার করছে! তবে এ সব করে লাভ হবে না! ছাত্রছাত্রীরা আমাদের পাশেই রয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy