এই অটোই চলবে শহরে। —নিজস্ব চিত্র।
তমলুক শহরে ইতিমধ্যে চালু হয়েছে ব্যাটারি চালিত টোটো গাড়ি। এ বার শহরে অটো চালানোয় উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে শহরের বাসিন্দাদের তমলুক শহরে যাতায়াতের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ ছিলই। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে পুরসভার কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের বৈঠকে তমলুক শহর ছাড়াও, হলদিয়া ও কাঁথি শহরেও অটো চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল বলেন, “জেলা পরিবহণ দফতরের বৈঠকে শহরে অটো চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আগ্রহীদের হাতে এই রুট পারমিট তুলে দেওয়া হবে।”
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা সদরের মর্যাদা পেলেও তমলুক শহরের মধ্যে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এখনও সেই রিকশা। ইদানীং শহরে কয়েকটি ব্যাটারি চালিত টোটো চলাচল শুরু করলেও তাঁর নির্দিষ্ট কোনও রুট নেই। ফলে প্রায়ই দরকারের সময় দেখা মেলে না এই গাড়ির। এই নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব মাত্র দু’থেকে আড়াই কিলোমিটার রিকশায় যেতে হলে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়। ফলে সময় বেশি লাগার পাশপাশি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। তমলুক পুরসভার তরফে শহরের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য রিকশা ভাড়ার তালিকা না থাকায় বাইরে থেকে আসা লোকের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তরফে শহরে অটোরিকশা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টোটো চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে শহরের রিকশাচালকরা উপ-পুরপ্রধানকে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেন। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাঁদের জানিয়ে দেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী টোটো গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় ওই গাড়ি চলাচল বন্ধে পুরসভা ব্যবস্থা নিতে পারবে না। বড় জোর টোটো চলাচলের জন্য রুট নির্দিষ্ট করতে পারে। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, তমলুক শহরের মধ্যে প্রায় ৭০০ টি রিকশা চললেও চলতি বছরে মাত্র ২০০টি রিকশাচালক পুরসভার কাছে অনুমতি নবীকরণ করেছে। অর্থাৎ বর্তমানে শহরের অধিকাংশ রিকশাই পুরসভার অনুমতি ছাড়া চলছে। অনুমতি না নিয়েই চলা এইসব রিকশাগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য ও অনুমতিপ্রাপ্ত রিকশাচালকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য পুরসভার তরফে ‘জকি লাইসেন্স’ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়। জেলা পরিবরণ দফতর সূত্রে খবর, তমলুক শহরের মানিকতলা, নিমতলা ও হাসপাতাল মোড় থেকে কলেজ পর্যন্ত এইসব রুটে অটো চলবে।
শহরের বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, তমলুকের শহরের আবাসবাড়ি থেকে নিমতলা কিংবা স্টিমারঘাট থেকে হাসপাতাল মোড় যেতে যাতায়াত করতে যা রিকশা ভাড়া লাগে তাতে অনায়াসে তমলুক শহরের মানিকতলা বা হাসপাতাল মোড় থেকে বাসে-ট্রেনে করে কলকাতা যাতায়াত করা যাবে। শহরের বাসিন্দাদের মতে, জেলা শহর হলেও এলাকার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। তার উপর যাতায়াতের ঠিক মাধ্যম না থাকায় শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা পড়ে রয়েছে সেই মান্ধাতার আমলে। রাজ্যের অন্য জেলা ও মহকুমা শহরগুলিতে অটো বা টোটো চালানোর জন্য পুরসভার তরফে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এ নিয়ে তমলুক পুরসভার তরফে এখনও কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। তবে উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “প্রাথমিকভাবে শহরে ২০টি অটো চলাচলের জন্য অনুমতির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর যত সংখ্যক অটো চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে তার মধ্যে ৪০ শতাংশ রিকশাচালকদের জন্য বাকি ৬০ শতাংশ সাধারণ মানুষের জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy