Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের টক্কর, তবু বন্‌ধে সাড়া দু’জেলাতেই

বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে মিশ্র সাড়া পড়ল পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। জেলার সব সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ খোলা ছিল। তবে তমলুক প্রধান ডাকঘর, অধিকাংশ ব্যাঙ্কের শাখা, বাজারগুলিতে দোকানপাট বন্ধ ছিল।

ঝাড়গ্রাম শহরে বামেদের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

ঝাড়গ্রাম শহরে বামেদের মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটে মিশ্র সাড়া পড়ল পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। জেলার সব সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ খোলা ছিল। তবে তমলুক প্রধান ডাকঘর, অধিকাংশ ব্যাঙ্কের শাখা, বাজারগুলিতে দোকানপাট বন্ধ ছিল। হলদিয়া কলকাতা, দিঘা কলকাতা মিলে কয়েকটি রুটে হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস চললেও কোন রুটেই বেসরকারি বাস, লরি চলেনি। কর্মস্থলে যেতে দুর্ভোগের শিকার হন সাধারণ বাসিন্দারা। ধর্মঘটকে ঘিরে জেলায় অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাম সমর্থক ও ধর্মঘট বিরোধী তৃণমূল সমর্থকদের মিছিল ঘিরে চাপা উত্তেজনা ছিল।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনিক অফিসে ৯০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল। জেলার অন্যান্য সরকারি বিভিন্ন দফতরের অফিস, মহকুমা, ব্লক অফিসগুলিতে গড়ে ৮০ শতাংশের বেশী কর্মী উপস্থিত ছিলেন। স্কুল-কলেজগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক ছিল। জেলায় কোনও গোলমালের ঘটনা ঘটেনি।’’

বাম শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘট রুখতে সরকারিভাবে প্রশাসনিক প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি কড়া পুলিশি নিরপত্তার ব্যবস্থা করায় তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে কতটা সাড়া পড়ে তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই জেলার কোন সড়কেই বেসরকারি চলাচল না করায় যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে জেলার প্রায় সব এলাকায়। এ দিন সকালে মেচেদা রেলস্টেশনে বাম সমর্থকরা পুরীগামী জগন্নাথ এক্সপ্রেস আটকে বিক্ষোভ দেখানোর সময় রেলপুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। রাতুলিয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক, চণ্ডীপুর বাজারে দিঘা-কলকাতা সড়ক ও ব্রজলালাচক, রামতারক, নেতাজিনগর বাজারে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, কাঁথি-এগরা রাজ্য সড়কের ভবানীচকে অবরোধ করেন বাম সমর্থকরা।

কাঁথি স্টেশনে রেল অবরোধ করার ফলে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ-সহ ১৮ জন সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার, কাঁথি স্টেট ব্যাঙ্ক ও বড় ডাকঘরে কর্মীদের সঙ্গে বন্ধ বিরোধীদের বিরোধকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে সৈকত শহর দিঘা, মন্দারমণি পর্যটনকেন্দ্রে সাধারন ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি নির্মল জানা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে নানাভাবে হুমকি ও পুলিশ- প্রশাসনিক তৎপরতা সত্বেও জেলার শহর-গ্রামাঞ্চলে বন্ধ সর্বাত্মক হয়েছে।’’ সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়েও জেলার পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে না পারা গেল না কেন? পূর্ব মেদিনীপুর ডিসট্রিক্ট বাস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘গোলমালের বাসের ক্ষতি হলেও বিমার টাকা পাওয়া যাবে না। তাই ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।’’

ঝাড়গ্রাম শহর-সহ জঙ্গলমহলের বেশ কিছু এলাকায় ধর্মঘটের ভালই প্রভাব পড়েছিল। সকাল থেকেই সুনসান ছিল অরণ্যশহর। দোকানপাট বন্ধ ছিল। গোলমালের আঁচ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব। ধর্মঘটের সমর্থনে বামেরা মিছিল করেন শহরে। তৃণমূলও পাল্টা মিছিল করে। দু’দলের মিছিল কাছাকাছি আসতেই উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বামেদের মিছিল চলাকালীন বারে বারে বাঁশ নিয়ে তেড়ে যান তৃণমূল কর্মীরা। বামেদের মিছিল লক্ষ্য করে অশ্লীল গালিগালাজও করতে থাকেন তাঁরা। দলীয় কর্মীদের আটকাতে গিয়ে হিমসিম খান তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি প্রশান্ত রায়। শিলদা, আঁধারিয়া, দহিজুড়ির মতো এলাকাগুলি সুনসান ছিল। দুপুরে গোপীবল্লভপুরের বাবুডুমরো হাইস্কুলে সিপিএমের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অভিযোগ, “সিপিএমের লোকেরা চড়াও হয়ে ওই স্কুলের অফিস রুমের আসবাপত্র ভাঙচুর করে। তিন জন শিক্ষককে মারধর করা হয়। শিক্ষকদের মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়।” সন্ধ্যায় গোপীবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আহত শিক্ষকদের দেখতে যান দীনেনবাবু। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন বলেন, “আমাদের কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন।’’ সিপিএমের নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা রুজু করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে।”

বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ছাড়া ঘাটাল মহকুমায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট মিটল শান্তিতেই। পাঁচটি ব্লকেই সরকারি অফিস খোলা ছিল। মহকুমাশাসক জ্যোতিন্দ্রবিমল করের দাবি, “ঘাটাল মহকুমায় কোনও অশান্তি হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE