অমিল কেরোসিন।
পরপর দু’সপ্তাহ পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ রেশন দোকানেই কেরোসিন মিলছে না। এখনও প্রত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষ কেরোসিনের উপরেই নির্ভরশীল। ঘর আলো করতে কুপি জ্বালানো থেকে শুরু করে স্টোভে রান্না - সব ক্ষেত্রেই কেরোসিন প্রয়োজনীয়। এই ঘটনায় রীতিমতো চিন্তিত সাধারণ মানুষেরা। সমস্যায় গরিব মানুষেরাও। রেশনে যেখানে ১ লিটার কোরেসিনের দাম মাত্র ১৫ টাকা ৩১ পয়সা, সেখানে খোলাবাজারে কেরোসিনের ন্যুনতম দাম ৩০ টাকা প্রতি লিটার। যা কখনও কখনও বেড়ে ৪০ টাকাও নেয়! এত টাকা দিয়ে সবার পক্ষে কেরোসিন কেনা সম্ভব নয়। তাহলে কী উপভোক্তারা কেরোসিন পাবেন না? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “আইওসি (ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন) চলতি বছরের শুরুতে তেল না দিতে পারার কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যে সব এলাকার মানুষ কেরোসিন পাননি পরবর্তী সময়ে তাঁদের দ্বিগুণ করে কেরোসিন দিয়ে দেওয়া হবে।”
চলতি মাসের পরপর দু’টি সপ্তাহ চলে গিয়েছে। রেশনে অন্য খাদ্য সামগ্রী মিললেও এ বার মেলেনি কেরোসিন। উপভোক্তারা কেরোসিনের পাত্র নিয়ে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। কেন কেরোসিন মেলেনি? সেই ব্যাপারে রেশন ডিলারেরাও ছিলেন অন্ধকারে। ফলে উপভোক্তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন সকলে। রেশনে প্রতি সপ্তাহে মাথা পিছু ২০০ মিলিলিটার কেরোসিন দেওয়া হয়। অর্থাৎ একটি পরিবারে ৫ জন থাকলে ১ লিটার কেরোসিন মেলে। যা এক সপ্তাহের পক্ষে নিতান্তই কম। তার উপর পরপর ২ সপ্তাহ না মিললে তো সাধারণ গরিব মানুষের পক্ষে যথেষ্ট কষ্টদায়ক। কারণ, খোলা বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা লিটার কেরোসিন কেনা সাধারণ গরিব মানুষের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালানো মমতাজ বেগমের কথায়, “বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু রান্না করতে হলে তো কেরোসিনই ভরসা। গ্যাস কেনার মতো তো আর্থিক সঙ্গতি নেই। পরপর দু’সপ্তাহ কেরোসিন না মেলায় তাই খুব বিপদে পড়েছি।”
সাধারণভাবে গণবন্টন ব্যবস্থার যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে খোলা বাজারে কেরোসিন বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। ফলে কেরোসিন দিলেও সব সময় যে নিয়ম মেনে মাথা পিছু ২০০ মিলিলিটার দেওায়া হয়, এমন নয়। কিছু সচেতন গ্রাহক রয়েছেন, যাঁরা প্রতিবাদ করেন, তাঁদের চিহ্নিত করে রেখেছেন রেশন ডিলারেরা। যাতে বিষয়টি নিয়ে হইচই না হয় সে জন্য তাঁদের নিয়ম মেনে কেরোসিন দিলেও বহু গ্রাহকই প্রতি সপ্তাহে নিয়ম মতো কেরোসিন পান না। তার ওপর পরপর দু’সপ্তাহ একেবারেই কেরোসিন না মেলায় বিপাকে সাধারণ মানুষেরা। যদিও যে সব উপভোক্তা দু’সপ্তাহ কেরোসিন পাননি তাঁদের পরের দু’টি সপ্তাহে দ্বিগুণ করে কেরোসিন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা খাদ্য দফতর।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রেশন ডিলারেরা দ্বিগুণ বরাদ্দ তো নিয়ে নেবেন, সাধারণ উপভোক্তারা কী তা পাবেন? প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জানবেন কী করে যে, পরের দু’টি সপ্তাহে দ্বিগুন কেরোসিন মিলবে? এই সুযোগে তো কেরোসিন খোলাবাজারে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ, কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নয়, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের বহু জেলা আইওসি থেকেই কেরোসিন নেয়। সকলকে জানাতে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উপভোক্তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছতে দফতর যেমন প্রচার চালাবে তেমনি পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রচার করতে বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতকেও জানানোর ব্যবস্থা করা হবে। উপভোক্তারা যাতে বঞ্চিত না হন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে তা খোলাবাজারে যাতে না বিক্রি করতে পারে সে জন্য দফতরের পক্ষ থেকে নজরদারিও চালানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy