Advertisement
১১ মে ২০২৪

নকল পায়ে ভর দিয়েই লক্ষ্যপূরণের স্বপ্ন

অভাবের সংসারে কিশোরী বয়সেই কয়লা কুড়োতে গিয়ে রেললাইনে কাটা পড়েছিল দুটো পা। তারপর যেন থেমে গিয়েছিল জীবনের গতি। কিন্তু প্রতিকূলতা জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য জেদ তাকে ফের সামিল করেছে লক্ষ্যপূরণের দৌড়ে।

বাড়ির দাওয়ায় বই হাতে প্রতিমা।—নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির দাওয়ায় বই হাতে প্রতিমা।—নিজস্ব চিত্র।

অমিত কর মহাপাত্র
দাঁতন শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

অভাবের সংসারে কিশোরী বয়সেই কয়লা কুড়োতে গিয়ে রেললাইনে কাটা পড়েছিল দুটো পা। তারপর যেন থেমে গিয়েছিল জীবনের গতি। কিন্তু প্রতিকূলতা জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য জেদ তাকে ফের সামিল করেছে লক্ষ্যপূরণের দৌড়ে।

দাঁতন-১ ব্লকের গড়গড়িয়া গ্রামের ২৩ বছরের প্রতিমা জানা এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বাইপাটনা বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের ছাত্রী প্রতিমার লড়াইয়ের বাস্তব কাহিনী হার মানাতে পারে যে কোনও চিত্রনাট্যকে। মা আর সাত ভাইবোনের সংসার। রাজনৈতিক সংঘর্ষে বাবা পঙ্গু হয়ে মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। মা আর দাদাদের দিন মজুরিতে সংসার চলে না। ১৩ বছর বয়সে দুর্ঘটনার পর মায়ের সঙ্গে কাজ করতেন প্রতিমা। টাকা জমিয়ে কিনে নেন নকল পা। যন্ত্রণা-রক্তক্ষরণ সহ্য করতে থাকে শুধু একটাই লক্ষ্যে, নিজের পায়ে দাঁড়ানো। পরিবারের কেউ মাধ্যমিকের উঠোন ডিঙোয়নি। প্রতিমা জানায়, ২০০৯ সালে বাড়ি ফিরে এসে সে হাতের কাজ শেখার পাশাপাশি ফের পড়াশোনা শুরু করতে চায়। কিন্তু, পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। অনেকের বিদ্রুপ তার জেদ বাড়িয়ে দেয়। দু’বেলা যেখানে অন্ন সংস্থান হয় না, সেখানে পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে এই ভেবে মা সন্ধ্যাদেবীও পাশে থাকেননি।

ছিটে বেড়ার এক কামরার জীর্ণ বাড়ির দাওয়ায় বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নিতে প্রতিমা বলে, “একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলাম গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে। বয়সের কারণে তিনি স্কুলে ভর্তি নিতে না চাইলেও আমার কান্নাকাটি ও জেদের কাছে হার মানলেন।” স্কুলে না গেলেও রীতিমতো পরীক্ষা নিয়ে শংসাপত্র দিলেন তাকে। এরপরই সে যায় বাইপাটনা হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন দাসের কথায়, ‘‘সর্বশিক্ষা মিশনের নির্দেশিকা মেনে ২০১৪ সালে আমরা ওকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করাই। আমরা অবাক হয়ে গিয়েছি পড়ায় ওর আগ্রহ দেখে।’’ প্রতিদিন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে স্কুলে যান প্রতিমা। অবাক হয়ে যায় তার সহপাঠীরাও। প্রতিমার এক দাদা কমল জানা বলেন, “ও কারোর সাহায্য নিতে চায় না। ওর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই দেখে ভাল লাগে।” স্কুল শিক্ষিকা হতে চান প্রতিমা। তিনি বলেন, “আমি নিজের পায়ে না দাঁড়ালে মাকে দেখবে কে। তাছাড়া উপার্জন করে আমি আমার মতো অসহায়দের পাশে
দাঁড়াতে চাই।”

প্রতিমার পরীক্ষকেন্দ্র দাঁতনের ভাগবতচরন হাইস্কুলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা পরীক্ষাকেন্দ্রের সম্পাদক অরবিন্দ দাস বাড়ি গিয়ে প্রতিমাকে উৎসাহিত করে এসেছেন। ওকে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, “ক্লাস চালু হলে প্রতিমার লড়াইয়ের কাহিনী প্রতিটি ক্লাসে শোনানোর ব্যবস্থা করব। আশা করি অনেক অমনোযোগী ছাত্রছাত্রী পথ
খুঁজে পাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE