চলছে জমি তৈরির কাজ। দাসপুর থানার চককৃষ্ণবাটিতে তোলা ছবি।
জুলাই মাস শেষ হতে চলল। এখনও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। ভাল বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের বীজতলা তৈরি নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চাষিরা।
চলতি মাসে বৃষ্টিপাতের গড় ১৫৮.৭ মিলিমিটার। বিগত ২৯ বছরের নিরিখে তা অর্ধেক! বৃষ্টির এই পরিমাণে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষি দফতরও। তবে কৃষি দফতরের মতে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেও যদি দু’একদিন খুব ভারী বৃষ্টিপাত হয় তাহলে দুশ্চিন্তা থাকবে না।জেলা কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলালদাস অধিকারীর কথায়, “কিছু সময় প্রথমের দিকে বৃষ্টিপাত কম হলেও জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ভারী বৃষ্টি হলে চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অসুবিধে হয় না। তবে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহেও দু’একদিন খুব ভারী বৃষ্টি না হলে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”
চলতি বছরে খারিফ মরসুমে (আউস ৬০৮১৫ হেক্টর ও আমন ৫০১০০ হেক্টর) ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৮১৫ হেক্টর। অর্থাৎ যা গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর বেশি। কিন্তু গত বছরে যেখানে ২০ জুলাই পর্যন্ত আউস ধানের চাষ হয়েছিল ৩১ হাজার ৭১৬ হেক্টর, সেখানে আবার চাষ হয়েছে ৩০ হাজার ৬৮০ হেক্টর। ফলে আউস ধান নিয়ে দুশ্চিন্তার তেমন কারণ নেই। কারণ, এমনিতেই জেলায় আউস ধানের চাষ কম হয়। কিন্তু দুশ্চিন্তায় রয়েছে আমন ধানের চাষ নিয়ে। গত বছর যেখানে এই সময়ে আমন ধানের চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬ হেক্টর, এবার সেখানে চাষ হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর। অর্থাৎ ১২ হাজার ৫৩৬ হেক্টরে পিছিয়ে! গত বছর বৃষ্টির পরিস্থিতি খুব একটা খারাপ ছিল না। ২০ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩৮৩.৩ মিলিমিটার। সেখানে চলতি মাসের ২০ জুলাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ১৫৮.৮ মিলিমিটার। অর্থাৎ ২২৫ মিলিমিটার কম!
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, সাধারণত জুন মাসের মধ্যেই নব্বই ভাগ জমির বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। আর জুলাই মাসের শুরুতেই চাষিরা ধান রোঁয়ার জন্য জমি প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেন। কিন্তু এবার চিত্রটা অন্যরকম। এখনও পর্যন্ত জেলায় ২৮ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। দফতর সূত্রের খবর, জেলার মোট ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ২১০ হেক্টর চাষ যোগ্য জমির মধ্যে চলতি মরসুমে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে খরিফ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। জেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ কৃষকই এই খারিফ চাষের উপর নির্ভরশীল। চলতি বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে জলের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে জমিতে জলের জোগানের অভাবে আটকে রয়েছে বীজতলা তৈরির কাজ। এরপর বৃষ্টি হলেও সময়ের মধ্যে বীজতলা তৈরি করে কবে ধান রোঁয়ার কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে সংশয়ে চাষিরা।
সেচের সমস্যার কথা মানছে কৃষি দফতরও। জানা গিয়েছে, সাধারণত জেলায় দু’ধরনের বীজতলা তৈরি হয়। শুকনো বীজতলা ও কাদা বীজতলা। জেলায় শুকনো বীজতলা তৈরির কাজ প্রায় সবই হয়ে গিয়েছে। সেই বীজতলায় তৈরি চারায় ধান রোঁয়াও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জেলায় শুকনো বীজতলার চেয়ে কাদা বীজতলাই বেশি তৈরি হয়। আর কাদা বীজতলাতে জল বেশি লাগে। ফলে এই সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা রয়েছে।
গোয়ালতোড়ের পিংবনির চাষি সমীর রায়, গড়বেতার ধাদিকার চাষি অনিমেষ পাল বলেন, “এবার আদৌও সব জমিতে ধান রোয়া হবে কি না সন্দেহ। এখনও বীজতলাই পুরোপুরি তৈরি হয়নি। অনেক জায়গায় আবার দেরিতে বীজতলা তৈরি করায় এখনও জমি ধানের চারা রোঁয়ার উপযুক্ত হয়নি।” এই পরিস্থিতিতে চাষের কাজ কীভাবে শেষ হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরাও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির জন্য বীজতলাতে নানা ধরনের রোগ-পোকার উপদ্রব শুরু হয়েছে। চারা গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চাষিরা ফের বীজতলা তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ফলে চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাড়া থাকা আর কোনও উপায় নেই কৃষককূলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy