মেদিনীপুর মেডিক্যালে বিধায়ক মানস ভুঁইয়া।
সুবর্ণরেখার উপর নতুন সেতুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করলেন কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিধানসভার আশ্বাসন কমিটির চেয়ারম্যান মানস ভুঁইয়া।
বুধবার মেদিনীপুরে আশ্বাসন কমিটির বৈঠক হয়। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, বৈঠকেও নতুন সেতুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি। মানসবাবুর বক্তব্য, এটা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। জেলার ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উন্নয়নের নিরিখেও সার্বিক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর প্রশাসনের প্রশংসা করেন তিনি। পাশাপাশি অবশ্য জানিয়ে দেন, কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ফাঁকফোকর রয়েছে। মানুষের স্বার্থে এগুলো পূরণ করতে হবে।
বৈঠক শেষে মানসবাবু বলেন, “১২টি দফতরের কাজকর্ম, মন্ত্রীদের আশ্বাস, কতটা কাজকর্ম হয়েছে, কোথায় ঘাটতি রয়েছে, ঘাটতি কী ভাবে পূরণ করা যায়, এই বিষয় নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পর্যালোচনা আমরা করলাম। কাল রিপোর্ট জমা দেবো।” তাঁর কথায়, “কিছু ঘাটতি ছাড়া উন্নয়নের নিরিখে জেলার কাজ সন্তোষজনক। কিছু ক্ষেত্রে যেসব ঘাটতি আছে, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি। সচিবদের সঙ্গে কথা বলব।” নতুন সেতুর প্রসঙ্গ টেনে মানসবাবু বলেন, “আগামীকাল মুখ্যমন্ত্রী ভসরাঘাটে সুবর্ণরেখা নদীর উপরে একটি দীর্ঘ সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। এটা পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম সেচ দফতরের পক্ষ থেকে ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল লালগড়ের আমকোলা সেতুর জন্য। সেটাও হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। এ জন্যও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” কংগ্রেস বিধায়কের এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে। অবশ্য জেলা কংগ্রেসের এক নেতার দাবি, “এখানে জল্পনার কিছু নেই। ভালকে ভাল বলতেই হবে। লালগড়, নয়াগ্রামে সেতু তৈরি হওয়ায় তো মানুষই উপকৃত হবে।”
বুধবার মেদিনীপুর শহরের সার্কিট হাউসে বিধানসভার আশ্বাসন কমিটির বৈঠক হয়। মানসবাবু-সহ কমিটির ১২ জন সদস্য বৈঠকে ছিলেন। ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, ডিআইজি (মেদিনীপুর) বাস্তব বৈদ্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অংশুমান সাহা প্রমুখ। স্বাস্থ্য, সেচ, জনস্বাস্থ্য, বন, বিদ্যুত্, পঞ্চায়েত সহ ১২টি দফতরের কাজকর্ম নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা হয়। একে একে এই সব দফতরের কাজকর্মের নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, কেলেঘাই- কপালেশ্বরী প্রকল্পের কাজ নিয়ে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মানসবাবু। জানিয়ে দেন, যে ভাবে কাজ হওয়ার কথা ছিল, সেই ভাবে কাজ হচ্ছে না। পরে সেচ দফতরের একাধিক কর্তাকে সতর্কও করে দেন তিনি। পাশাপাশি, মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে যে ভাবে ‘রেফার’-র সংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়েও অসন্তোষ গোপন করেননি মানসবাবু। জানিয়ে দেন, ‘রেফার’-র সংখ্যা কমাতে হবে। মেদিনীপুরে রোগী এলেই কলকাতায় ‘রেফার’ করে দিতে হবে, এটা হবে না। বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি ঘটনা ছাড়া গত তিন বছরে জেলায় কোনও মাওবাদী নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে কনস্টেবলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ শূন্য রয়েছে। প্রায় দু’হাজার গ্রেফতারি পরোয়ানা পড়ে রয়েছে। এগুলো কার্যকরী করা শুরু হয়েছে।
বৈঠকে অবশ্য খাদ্য দফতরের কাজকর্মের পর্যালোচনা হয়নি। জেলার খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় সার্কিট হাউসে গিয়েছিলেন। তবে বৈঠকে ছিলেন না। বস্তুত, রেশন ব্যবস্থা নিয়ে জেলায় নানা অভিযোগ রয়েছে। এখন আবার খাদ্য সুরক্ষার তালিকা নিয়েও নানা অসন্তোষ সামনে আসছে। কেন পর্যালোচনা থেকে খাদ্য দফতর বাদ থাকল? বৈঠক শেষে মানসবাবু বলেন, “গতকালই খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। নতুন ডিজিট্যাল রেশন কার্ড নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ ব্লকে ব্লকে বাদ পড়েছেন। ভুল ঠিকানা, ভুল নাম ধরা পড়েছে। সেগুলো খাদ্য দফতর কী সংশোধন করবে করুক। আজকালের মধ্যেই হয়তো নির্দেশ চলে আসবে। সংশোধনের পরে আমরা এই দফতরের সঙ্গে কথা বলব।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “একশো দিনের কাজে কিছু টাকা বাকি রয়েছে। তবে কাজ ভাল হয়েছে। বিদ্যুত্ দফতর অনেকটা এগিয়ে ভাল কাজ করেছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। মিটার অনেকে পাচ্ছেন না। সাব স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। বালিচকে ওভারব্রিজ, সবংয়ের বাড়জীবনপুরের অ্যাপ্রোচ রোড-সহ বেশ কিছু প্রকল্পে অনেক জায়গায় জমি কেনা হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, এ বার কাজে হাত দেওয়া হবে।”
বৈঠক শেষে দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন মানসবাবু। ছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ, হাসপাতাল সুপার যুগল কর প্রমুখ। হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখে, রোগীদের শয্যা না পেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মানসবাবু। হাসপাতালের পরিষেবা আরও ভাল করার পরামর্শ দেন তিনি। পরে মানসবাবু বলেন, “চিকিত্সকদের অনুপস্থিতিটা একটা বিশাল সমস্যা। ‘রেফার’ কমাতে হবে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ- সুপারকে তাই বলেছি। আরও কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। তাও জানিয়েছি।” বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে আশ্বাসন কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কিছু পদ শূন্য রয়েছে। যে পরিকাঠামো রয়েছে, তারমধ্যে যথাসাধ্য কাজ করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন জেলার সিএমওএইচ গিরীশচন্দ্র বেরা। ঠিক কত পদ শূন্য রয়েছে? জেলায় চিকিত্সকের ১১৩টি পদ শূন্য রয়েছে। নার্সের ১৬৫টি পদ শূন্য রয়েছে। মানসবাবু বলেন, “আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভার অধিবেশন বসছে। আমরা সেখানে আমাদের এই পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা, রিপোর্ট, জেলাশাসকের রিপোর্ট, বিভাগের রিপোর্ট, জেলা পরিষদের রিপোর্ট, এই সব রিপোর্ট জমা দেবো। যেটা মাননীয় স্পিকারের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের কাছে চলে যাবে।”
এ দিন সবংয়েও বিধানসভার আশ্বাসন কমিটির উদ্যোগে এক প্রশাসনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মানসবাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য, বিডিও বিকাশ মজুমদার। এর পরে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করে বিধানসভার আশ্বাসন কমিটির প্রতিনিধিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy