শিয়রে লোকসভা। ভোট-প্রচারে ঝড় তুলেছে সব রাজনৈতিক দলই। এই পরিস্থিতিতে প্রচারের স্রোতে কার্যত ব্যতিক্রম রেলশহর খড়্গপুরের রেলকলোনি। তেমন ভাবে প্রচারই শুরু হয়নি এই এলাকায়। বিস্তীর্ণ কলোনি এলাকার পথের দু’ধারে নেই কোনও রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন। ওড়েনি ফ্লেক্স-দলীয় পতাকা। শুরুই হয়নি মিছিল-পথসভা। এক কথায়, ভোট যেন থমকে রয়েছে রেলকলোনির ওপারে। কেন?
রেলশহরের প্রায় ৩৯ ভাগ এলাকা জুড়ে রয়েছে রেলকলোনি। এর অধিকাংশই বাসিন্দারই বদলির চাকরি। ফলে তাঁদের সকলেই স্থায়ী ভোটার নন। তার উপরে, প্রায় সব জায়গা সরকারি এলাকা হওয়ায় কমে গিয়েছে লেখার মতো দেওয়াল। তবে, প্রচার তেমন শুরু না হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক দলগুলির অন্য কৌশলও রয়েছে। সকলেই চাইছেন প্রত্যন্ত এলাকার প্রচার শেষে তারপর তুলনায় কাছের এলাকায় প্রচার সারতে। সময় হাতে পেয়ে প্রথমে গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে চললেও এখন শেষলগ্নে রেলকলোনি এলাকায় মিছিল-পথসভায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সব দলই।
১৮৯৮ সালে খড়্গপুরে রেলের কারখানা গঠনের পর থেকেই ক্রমশ আড়ে-বহড়ে বেড়েছে এই শহর। প্রথম পর্যায়ে ইংরেজ আধিকারিকেরা থাকলেও পরে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাডু, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র থেকে আসা বহু লোক রেলের কাজে যোগ দেন খড়্গপুরে। গড়ে ওঠে বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের (বিএনআর)। রেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জংশন স্টেশনে আধিকারিকদের থাকার জন্য শহরে বেশ কিছু বাংলো নির্মিত হয়। যা এখন সাউথ সাইড বা বাংলো সাইড এলাকা বলে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে কারখানা সম্প্রসারণের সঙ্গেই বাড়তে থাকা রেলকর্মীদের থাকার জন্য নিমপুরা, গোলবাজার, ট্রাফিক, নিউ সেটলমেন্ট, ওল্ড সেটলমেন্ট, পোর্টারখলি, মথুরাকাটি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় গজিয়ে ওঠে রেল-আবাস। এখন এই সব এলাকা-সহ বাংলো সাইড এলাকা সারা ভারতের রেলকর্মীদের আস্তানা। তাঁরা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নন, সারা ভারতের ভোটার। মূল এলাকা ছাড়াও সংলগ্ন নানা জায়গায় গজিয়ে উঠেছে ঝুপড়ি বস্তি। তবে, তাঁরা এখন এই শহরেরই ভোটার।
সাউথ সাইডের বাসিন্দা রেলকর্মী অসীম নাথের কথায়, “সব নির্বাচনেই দেখেছি একটা গমগমে মেজাজ। এ বার দেওয়াল লিখন তেমনটা দেখলাম কই। প্রার্থীদেরও এলাকায় দেখিনি। প্রচারও তেমন নজরে আসেনি।” তিনি বলেন, “অনেকেই হয়তো প্রার্থীর নামই জানেন না! সব মিলিয়ে ভোট-উৎসব থেকে অনেক দূরে আমাদের রেল এলাকা।”
কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি? শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বক্তব্য, “রেল কোয়ার্টারের তুলনায় রেলের বস্তি এলাকায় বেশি প্রচার হয়েছে। কেননা, কোয়ার্টারের রেলকর্মীরা স্থায়ী না হওয়ায় ভোট দেওয়ায় তাঁদের অনীহা থাকে।” তবে রেল এলাকায় সব দলেরই যথেষ্ট কর্মীর অভাব থাকায় প্রচার জমেনি বলে তাঁর অভিমত। রেলএলাকা যে ধারাবাহিক প্রচার থেকে দূরে রয়েছে তা মানছেন শহর সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মনোজ ধরও। তিনি বলেন, “মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের গ্রামীণ এলাকায় সন্ত্রাস চলছে। সেখানে প্রার্থীকে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। নির্বাচনী বিধিতে রেল এলাকায় দেওয়াল লিখন, ফ্লেক্সে প্রচার কম হলেও আমরা বাড়ি বাড়ি প্রচার করেছি।”
এ বারের নির্বাচনে প্রচারে অতিরিক্ত সময় মেলায় শেষ দিকেই জোরদার তা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সব রাজনৈতিক দলের। কিন্তু হাতে আর মাত্র ১৬ দিন। তার মধ্যেই এই বিশাল এলাকায় প্রচার কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। সব দলই দিন দু’য়েকের ব্যবধানে মিছিল-পথসভায় নামার পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছে। আবার শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “ইতিমধ্যেই আমরা পাড়া বৈঠক ও কর্মিসভা সেরেছি। শহরের বাকি এলাকার সঙ্গে রেল এলাকাতেও ২২ এপ্রিল থেকে লাগাতার পথসভা করব।”
বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় আবার ‘মোদী হাওয়ায়’ বাজিমাত করার কথা বলছেন। তিনি বলেন, “রেল এলাকায় এখনও তেমন প্রচার জমেনি তা ঠিক।
আমরা বিধানসভা এলাকাগুলির গ্রামে-গঞ্জে প্রচারে জোর দিয়েছি। দ্রুত রেল এলাকায় প্রচার চলবে।” কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির সদস্য রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “রেল এলাকায় নির্বাচনী নিয়মে দেওয়াল লিখন করা যায়নি। তবে এখনও হাতে সময় রয়েছে। দলের তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার কর্মসূচি চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy