Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানকে পরিচালনার লিখিত নির্দেশ শাসক দলের নেতাকে

একেবারে চিঠি লিখে পঞ্চায়েত প্রধানকে ‘পরিচালনা’ করার দায়িত্ব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির হাতে তুলে দিলেন দলের ব্লক সভাপতি। সেই চিঠির প্রতিলিপি হাতে পেয়ে দলের এমন ‘অনধিকার হস্তক্ষেপ’ দেখে হতবাক এবং ক্ষুব্ধ বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিমা পাত্র।

এই সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

এই সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

একেবারে চিঠি লিখে পঞ্চায়েত প্রধানকে ‘পরিচালনা’ করার দায়িত্ব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির হাতে তুলে দিলেন দলের ব্লক সভাপতি। সেই চিঠির প্রতিলিপি হাতে পেয়ে দলের এমন ‘অনধিকার হস্তক্ষেপ’ দেখে হতবাক এবং ক্ষুব্ধ বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিমা পাত্র।

পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই এ রাজ্যের দস্তুর। ফলে পঞ্চায়েত স্তরে নির্বাচিত প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির উপরেই তাঁর নিজের রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণ থাকেই। তবে একেবারে চিঠি লিখে পঞ্চায়েতে দলতন্ত্রের সিলমোহর বসিয়ে দেওয়া তৃণমূল জমানারই অভিনবত্ব। দলতন্ত্রের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা তৃণমূল কার্যক্ষেত্রে কতটা উল্টো পথে চলছে, এই ঘটনা তারই প্রকট নজির এমনই দাবি করছেন সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি নেতারা।

তৃণমূলের প্যাডে বিনপুর ১ (লালগড়) ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় ১ নম্বর অঞ্চল সভাপতি যদুনাথ কিস্কুকে লিখেছেন, “বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মহাশয়কে পরিচালনার দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হইল।” গত শনিবার দলের বৈঠকে সব অঞ্চল সভাপতি মিলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। এতেই অসন্তুষ্ট তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান প্রতিমাদেবী। তাঁর বক্তব্য, “আমি জনগণের প্রধান। নিরপেক্ষ ভাবে এলাকাবাসীর উন্নয়ন করতে এসেছি। কিন্তু নানা ভাবে অনধিকার হস্তক্ষেপের সম্মুখীন হচ্ছি।” যদিও ব্লক সভাপতির নির্দেশ সম্পর্কে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি প্রতিমাদেবী।

বনবিহারীবাবু অবশ্য এই নির্দেশিকায় কোনও সমস্যা দেখছেন না। তাঁর কথায়, “উন্নয়নের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্যগত ২৪ জানুয়ারি ব্লকের ১০ জন অঞ্চল সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সেই মতো বিনপুর অঞ্চল সভাপতিকে লিখিত ভাবে তাঁর এলাকার প্রধানকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছি।” আর অঞ্চল সভাপতি যদুনাথবাবুর দাবি, “আমাদের এলাকায় পঞ্চায়েতের কাজে কিছু ভুল-ভ্রান্তি হচ্ছে।

সেই কারণেই প্রধানকে পরিচালনা করার দায়িত্ব ব্লক সভাপতি আমাকে দিয়েছেন।”

পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কিন্তু তাঁরই দলের ব্লক এবং অঞ্চল সভাপতিদের এই কাণ্ড অনুমোদন করছেন না। তিনি বলেন, “এ রকম ভাবে কোনও পঞ্চায়েতে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যায় না। কারণ, সংবিধানের ৭৪ তম সংশোধনীর পরে কেন্দ্রের আইন তো রয়েছেই, রাজ্যেরও আইন রয়েছে। পঞ্চায়েতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন। তার বাইরে গিয়ে কাজ করা যাবে না।” সুব্রতবাবু জানান, তাঁর কাছে অভিযোগ এলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

পঞ্চায়েতের কাজকর্মে দলের নিয়ন্ত্রণ অবশ্য নতুন নয়। বাম আমলে প্রধানের উপর লোকাল কমিটির সম্পাদকের আধিপত্য ছিল। নেতাই কাণ্ডে অভিযুক্ত লালগড়ের সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে দলের লোকাল ও শাখা স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধানদের। তবে এমন লিখিত নির্দেশিকা নজিরবিহীন। এ বিষয়ে সিপিএমের বিনপুর জোনাল সম্পাদক সুশান্ত কুণ্ডু বলেন, “আমাদের সময়ে পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা প্রস্তাব দিলেও এ ভাবে অনধিকার হস্তক্ষেপ করতেন না।”

তৃণমূল সূত্রে খবর, গত ২৪ জানুয়ারি লালগড়ে তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে সংশ্লিষ্ট এলাকার তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির কথামতো কাজ করতে হবে। ওই বৈঠকে দলের বিনপুর ১ নম্বর অঞ্চল সভাপতি যদুনাথবাবু দাবি করেন, এ ব্যাপারে ব্লক সভাপতি লিখিত নির্দেশ না দিলে বিনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাঁর কথা না-ও শুনতে পারেন। এর পরই ওই চিঠি দেন ব্লক সভাপতি।

লিখিত নির্দেশের বিষয়টি জানাজানি হতেই দলের মধ্যে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন বনবিহারীবাবু। তবে দলের একাংশের মত, লালগড় ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েতকে কেন্দ্র করে শাসক দলের একাধিক গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়ে পড়েছে। তাতে লাগাম পরাতেই বনবিহারীবাবু প্রতিটি এলাকার অঞ্চল সভাপতিদের এমন দায়িত্ব দিয়েছেন।

এই সুযোগে শাসক দলকে বিঁধছে বিজেপি-ও। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েতগুলিতে উন্নয়নের টাকা লুঠ হচ্ছে। সেই টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়েই শাসক দলে যত গোলমাল। বনবিহারীবাবুর নির্দেশেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kingshuk gupta jhargram letter tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE