বোকার মতো প্রেমে পড়েঠিল মেয়েটি। ভেবেছিল ফোনে কথা বলা ও-পারের মানুষটি হয়তো হয়ে উঠবে তার আশ্রয়। বলাই বাহুল্য ভেঙেছে সে বিশ্বাস। তবে প্রেমের বোকামি কাটিয়েও তার নিজের বুদ্ধির জয় হয়েছে। একটু অন্য রকম হলেও এই মেয়েটি হয়ে উঠতেই পারে দৃষ্টান্ত, মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
ঘটনার সূত্রপাত মাস তিনেক আগে। খবরের কাগজে যেমন খবর বের হয়, ঠিক তেমনই। ফোনে এসেছিল ‘মিসড কল’, তা থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেম। তারপর পরিণতির আশা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বছর সতেরোর কিশোরীটি বুধবার ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল নতুন সংসার করতে। পাত্র পবিত্র হলদিয়ার সুতাহাটা এলাকার বাসিন্দা বলেই তার জানা ছিল।
পবিত্র বুধবার সকালেই চলে এসেছিল প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে। সারাদিন তার সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছে ওই কিশোরী। প্রথমে ডায়মন্ড হারবারের একটি হোটেলে খেয়ে তারা সিনেমা দেখে ওই এলাকারই একটি হলে। তারপর হুগলি নদী পেরিয়ে সোজা পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটায়। এ দিনের যাবতীয় খরচ-খরচা হয়েছে ওই কিশোরীর কাছ থেকে টাকা নিয়েই। হোটেলে খাওয়া দাওয়া, সিনেমার টিকিট, বাসের ভাড়া— সব মিলিয়ে মোট চারশো টাকা কিশোরী দিয়েছিল।
তারপর কথা ছিল বিয়ে করার। কিন্তু সিঁদুর কোথায়? সিঁদুর আনতেই যুবক তার বাড়ির পথ ধরে। কিশোরী বসে থাকে অপেক্ষায়। সে অপেক্ষার শেষ নেই। কিন্তু রাত বাড়তেই সম্বিত ফেরে মেয়েটির। প্রেমিক পবিত্রর মোবাইলও তত ক্ষণে ‘সুইচড অফ’ হয়ে গিয়েছে। আর দেরি করেনি সে। সোজা ফোন করে বাসন্তী থানার ওসি কৌশিক কুণ্ডুকে, ‘‘স্যার, আপনি তো রায়দিঘির ওসি, আমার খুব বিপদ। আমাকে বাঁচান।’’
এমন ফোন আগে কখনও পাননি কৌশিকবাবু। তবে দু’একজন নাবালিকা যে বিয়ে রুখতে ফোন করেন না পুলিশের কাছে তেমন নয়। কিন্তু, এ যে অন্য কথা। মেয়েটি নিজেই বেরিয়েছিল, আবার ভুল বুঝে নিজেই ফোন করেছে পুলিশে।
আসলে বছর তিনেক আগে কৌশিকবাবু ছিলেন রায়দিঘি থানার ওসি। সে সময় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন। স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে সেই আলোচনা সভায় নিজের ফোন নম্বর দিয়ে কৌশিকবাবু বলেছিলেন, বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে বা যে কোনও বিপদে পড়লেই যেন তাঁকে ফোন করে ছাত্রীরা। সে দিনের সভায় উপস্থিত ছিল এই কিশোরীও। এত দিন ধরে সেই নম্বর নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে সে। শুধু তাই নয়, বিপদ বুঝে ঠান্ডা মাথায় ফোনও করেছে।
এতেই খুশি কৌশিকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি ভুল করেছিল। কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে পুলিশে ফোনও তো করেছে। এই সচেতনতাটাই দরকার। তবে আগেই বোঝা উচিত এ ভাবে বাড়ি ছাড়াটা ভুল।’’
বুধবার রাতে কিশোরীর ফোন পেয়ে বাসন্তি থানার ওসি ফোন করেন আলিপুর কন্ট্রোল রুমে। সেখান থেকে খবর পান সিআই মহিষাদল শুভঙ্কর দে। তিনিই এ দিন রাত প্রায় ১২টা নাগাদ সুতাহাটা থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কুকড়াহাটি থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেন। খবর যায় মেয়েটির বাবা-মার কাছে। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে উপস্থিত করা হয় কিশোরীকে। আপাতত তাকে হোমে রেখে তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এ দিকে ওই পবিত্রকে খুঁজে পাওয়া নিয়ে সন্দিহান সুতাহাটা থানার পুলিশ। তাদের বক্তব্য আদৌ ওই যুবকের নাম পবিত্র কিনা, তাই বা কে বলতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নাম ঠিকানা ভুল বলেই এ ধরনের প্রতারণা ঘটে থাকে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই মেয়েটির পরিবার কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy