চাঁদড়ার বাঘঘোরা গ্রামে সরানো হচ্ছে পোস্টার (ইনসেটে)।—নিজস্ব চিত্র।
শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিষেনজির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক আগের দিন তৃণমূল কর্মীদের সতর্ক করে মাওবাদী নামাঙ্কিত বেশ কিছু পোস্টার মিলল মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার ধেড়ুয়া ও চাঁদড়ার কয়েকটি এলাকায়। রবিবার সকালে বাঘঘোরা, চিলগোড়া ও সংলগ্ন এলাকায় গাছে, মাটির বাড়ির দেওয়ালে সাঁটানো সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা পোস্টারগুলি দেখতে পান স্থানীয়রা। রাস্তাতেও ছড়ানো ছিল কিছু পোস্টার। পুলিশ এসে গোটা পঞ্চাশেক পোস্টার উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
কী লেখা ছিল পোস্টারগুলিতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নীচে মাওবাদী (সিপিআই মাওবাদী নয়) লেখা পোস্টারগুলিতে অভিযোগ করা হয়েছে, তৃণমূল সরকার জঙ্গলমহলবাসীকে ভুলপথে চালিত করছে। সেই সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। একটি পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘জঙ্গলমহলে কোনও রাজনীতি চলিবে না। মা-মাটি সরকার কী করছ? গরিব মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? মমতা দিদির কর্মীরা সতর্ক থাকবেন।’ আর একটি পোস্টারের বয়ান হল, ‘পশ্চিমবাংলার মানুষ বুঝতে ভুল করছ কেন? মা-মাটি সরকার, কৃষক-শ্রমিকদের নেই দরকার। তৃণমূল পার্টি জঙ্গলমহলে মাও-নেতা শেখর। মাওবাদীর বিরোধিতা করিবেন না।’
পুলিশের অবশ্য দাবি, এই কাজ মাওবাদীদের নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “জঙ্গলমহলে মাওবাদী বলে কিছু নেই। ওই পোস্টারগুলোও মাওবাদীদের নয়। স্থানীয় দু’-তিনজনই এই কাজ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তারও বক্তব্য, “কিছু বাজে লোক চাঁদা আদায়ের জন্য এ সব করছে।” পুলিশের সুরেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এটা স্থানীয় কয়েকজনের কাজ।” বিজেপি-র আবার অভিযোগ, এর পিছনে হাত রয়েছে তৃণমূলের। দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ সব তৃণমূলই করাচ্ছে। মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। ওই এলাকায় মাওবাদী বলে কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে পুলিশেরও মদত আছে।” তৃণমূল ও পুলিশের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন যেখানে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিলেছে, ধেড়ুয়ার সেই বাঘঘোরা, চিলগোড়া এলাকায় এক সময় মাওবাদীদের প্রভাব ছিল। তাই জেলা পুলিশের একাংশ বিষয়টিকে হালকা করে দেখতে নারাজ। বিশেষ করে কিষেনজির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক আগে পোস্টার পাওয়ার ঘটনাটি তাদের ভাবাচ্ছে। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর মৃত্যু হয় শীর্ষ মাওবাদী নেতার কিষেনজির। তারপর থেকে আর মাওবাদী-নাশকতা ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোকে তাঁর সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব হিসেবে দেখেন। বারবার তিনি বলেন, ‘জঙ্গলমহল হাসছে’।
কয়েক মাস হল পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে। জেলা পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, পার্শ্ববর্তী ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে মাঝেমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু এলাকায় মাওবাদীরা ঢুকছে। নতুন করে ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছে। মাস কয়েক আগেই বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড়-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার-ব্যানার মেলে। সেগুলিতে সিপিআই (মাওবাদী)- র দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ’ (পিএলজিএ)-কে ‘গণমুক্তি ফৌজে’ পরিণত করতে সংগঠন বৃদ্ধির ডাক দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়ই ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলার চেকাম জঙ্গলে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক কোবরা জওয়ানের। সেই ঘটনাস্থল ছিল বেলপাহাড়ি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এরপর ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়।
এই অবস্থায় ধেড়ুয়ায় পোস্টার উদ্ধারকে উড়িয়ে দিচ্ছে না জেলা পুলিশেরই একাংশ। জেলার এক পুলিশ কর্তার কথায়, “বিষয়টি হালকা ভাবে নিলে ভুল হবে। এক সময় জঙ্গলমহলে মাওবাদী এবং জনগণের কমিটির ভাল প্রভাব ছিল। পথঘাট সবই ওদের চেনা। প্রত্যাঘাতের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দিলে তা ভুলও হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy