Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাহুলের সভার দিন জেলা জুড়ে মিছিল তৃণমূলের

আগামী বুধবার মেদিনীপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সভা রয়েছে। ওই দিনই জেলার সব অঞ্চল এবং ওয়ার্ডে মিছিল সংগঠিত করার নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। রবিবার মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় নেতৃত্ব এই নির্দেশ দিয়েছেন। বিজেপির সভায় যাতে জমায়েত বেশি না হয়, সে জন্যই তৃণমূল এই কৌশল নিয়েছে বলে জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪৭
Share: Save:

আগামী বুধবার মেদিনীপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সভা রয়েছে। ওই দিনই জেলার সব অঞ্চল এবং ওয়ার্ডে মিছিল সংগঠিত করার নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। রবিবার মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় নেতৃত্ব এই নির্দেশ দিয়েছেন। বিজেপির সভায় যাতে জমায়েত বেশি না হয়, সে জন্যই তৃণমূল এই কৌশল নিয়েছে বলে জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় অবশ্য বলছেন, “এটা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। এ দিন সভায় আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রের বঞ্চনা, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এবং রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা-সম্প্রীতি-উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই ওই দিন আমরা পথে নামব।” তৃণমূল জেলা সভাপতির আরও সংযোজন, “বিজেপি সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে। আমাদের প্রতিবাদ এর বিরুদ্ধেও।”

বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের এই কর্মসূচি নিয়ে সেই ভাবে ভাবতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ সবই আমাদের সভা ভেস্তে দেওয়ার কৌশল। তবে ওরা (তৃণমূল) যা ভাবছে তা হবে না। রাহুল সিংহের সভায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষের জমায়েত হবে।”

কেন বিজেপির সভার দিনই জেলা জুড়ে মিছিলের সিদ্ধান্ত নিতে হল তৃণমূলকে? রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের ব্যাখ্যা, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না শাসক দলের। কারণ, তৃণমূলনেত্রীর সভা বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশই ঝিমিয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পথে নামার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারিয়েছেন।

দুই মেদিনীপুরের কর্মীদের নিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর খড়্গপুর গ্রামীণের রূপনারায়ণপুরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক সভা হবে। গোড়ায় ঠিক ছিল, এই সভা হবে ২৪ নভেম্বর। পরে ঠিক হয়, সভা হবে ১৯ ডিসেম্বর। তারও পরে ঠিক হয়, সভা হবে ২০ ডিসেম্বর। গত সপ্তাহে ফের সভার দিন পরিবর্তন হয়। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, সভা হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। তৃণমূলনেত্রীর সভা এতবার পিছনোয় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলের একাংশে। এ দিন বর্ধিত সভায় যোগ দিতে এসে কয়েকজন নেতা অসন্তোষ গোপনও করেননি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা তো বলেই দেন, “এ বার সভা পিছোলে আর এলাকায় মুখ দেখাতে পারব না! কর্মীদের কাছে সভা পিছনোর কারণ দর্শাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি!”

মমতার সাংগঠনিক সভায় ৫০ হাজার জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সভার খরচ তুলতে ইতিমধ্যে প্রতিনিধি ফি বাবদ মাথাপিছু ২০ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা তৃণমূল। পাশাপাশি এ-ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রতিটি ব্লক কমিটি সভার জন্য ৩০ হাজার টাকা, বিধায়কেরা ২০ হাজার টাকা এবং কাউন্সিলররা ২ হাজার টাকা করে দেবেন। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২০টি ব্লক ইতিমধ্যে টাকা দিয়েছে। সাঁকরাইলের মতো কিছু ব্লক আবার বেশি টাকা দিয়েছে। লালগড়ের মতো কিছু ব্লক আবার কম টাকা দিয়েছে। দলের বিধায়কদের মধ্যে মাত্র তিনজন টাকা দিয়েছেন। সাংগঠনিক সভার জন্য গঠিত অর্থ উপ-সমিতি এ দিনের সভায় জানিয়েছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সকলকে টাকা দিয়ে দিতে হবে।

এ দিনের সভায় জেলা সভাপতির ছাড়াও ছিলেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতি, দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, নির্মল ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী। ছিলেন মহিলা নেত্রী তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, জেলা পরিষদের দলনেতা অজিত মাইতি প্রমুখ। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, আগামী বুধবার জেলা জুড়ে মিছিল সংগঠিত করার নির্দেশ দিয়ে একদিকে যেমন বিজেপির সভায় ভিড় ঠেকাতে চাইতেন তৃণমূল নেতৃত্ব অন্যদিকে জনসংযোগও বাড়াতে চাইছেন তাঁরা। কারণ, ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় মানুষের সঙ্গে দলের কর্মীদের সংযোগ শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত মাসেই দুর্গাপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের চার নেতাকে ডেকে এক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সভায় কিছু কাজকর্ম নিয়ে নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি তৃণমূলনেত্রী। একাধিক নেতাকে সতর্কও করে দেন তিনি। সাংগঠনিক সভায় নেত্রী কী বার্তা দেন, এখন তারই অপেক্ষায় কর্মীরা। বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি যে আগামী দিনে দলের কাছে বিপদ হয়ে দেখা দিতে চলেছে, তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না শাসক দলের জেলা নেতৃত্বের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc medinipur bjp rahul sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE