বিপন্ন সুরক্ষা। মোটা টাকা লাভের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই চলছে বেআইনিভাবে বাজি তৈরির কাজ। ফি বছরই অসতর্কভাবে বাজি বানাতে গিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তারপরেও সতেচনতা ফেরা তো দূরের কথা, পুলিশ-প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজি তৈরির রমরমা কমেনি। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার চিল্কা, সাধুয়াপোতা, পুলশিটা, কোলাঘাটের পয়াগ, ময়নার বাকচা, শ্রীকণ্ঠা প্রভৃতি এলাকায় নিয়মের তোয়াক্কা না করে বসতবাড়ির মধ্যেই লুকিয়ে বেআইনি বাজি তৈরির কাজ চলছে। বাজি তৈরি করতে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কিন্তু তাতে বাস্তব চিত্রটা বিশেষ বদলায় না।
সোমবার ময়নার শ্রীকণ্ঠা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উত্তমপুর গ্রামে বাড়ির মধ্যে বারুদ নিয়ে বাজি তৈরির সময় উনুনের আগুন থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় একই পরিবারের তিন জন শিশুর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত ওই পরিবারের এক মহিলা ছায়া মণ্ডল তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিসাধীন। ওই পরিবারের গৃহকর্তা দীপক মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। যদিও তাঁকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ওই এলাকায় আরও কিছু পরিবার বেআইনিভাবে বাজি তৈরির কাজ যুক্ত থাকতে পারে। এবিষয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। শ্রীকণ্ঠা এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাজি ব্যবসায়ীরা এইসব কারিগরের হাতে বারুদ-সহ বাজি তৈরির উপকরণ পৌঁছে দিয়ে যায়। আবার বাজি তৈরির পর সেগুলি বাড়ি থেকে তাঁরা নিয়ে চলে যায়। বাজি তৈরির বিনিময়ে পারিশ্রমিক পায় এইসব কারিগরেরা।
গতবছর পুজোর আগে পাঁশকুড়ার হাউর এলাকার পুলশিটা গ্রামে বাড়ির মধ্যে বাজি তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটে দু’জনের মৃত্যু হয়। আহত হন চার জন। তার আগে কোলাঘাটের পুলশিটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পয়াগ গ্রামে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর দুর্ঘটনা ঘটে চললেও ন্যূনতম সুরক্ষার ব্যবস্থা তৈরি না করেই বাজি তৈরির রমরমা চলছে। ওইসব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এইসব এলাকায় বেশকিছু পরিবার বংশপরম্পরায় বাজি তৈরির কাজ করে আসছে। কোলাঘাটের পয়াগ গ্রামের মাইতি পাড়া এলাকার মানুষের কাছে বান্দার পাড়া (বাজি কারিগর) হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর কালীপুজোর আগে এই পাড়ায় বাজি কিনতে লোকের আনাগোনাও চলে।
কিন্তু এমন বিপজ্জনক পেশা কেন ছাড়ছে না এইসব পরিবার ?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আসলে অল্প খরচ করে তৈরি বাজি অনেক বেশি দামে বিক্রি করে এইসব কারিগরেরা মোটা লাভ করতে পারেন। ফলে বিপজ্জনক জেনেও এই পেশা ছেড়ে আসতে চায় না অধিকাংশ বাজি কারিগরেরা। বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত পয়াগ গ্রামের এক প্রবীন কারিগর অবশ্য দাবি করেন, ঠাকুরদার আমল থেকে আমাদের পরিবার এই কাজ করে আসছে। দুর্ঘটনায় পরিবারের লোক মারাও গিয়েছিল। আমরা এইকাজ করলেও আমার ছেলে এই কাজ করতে চায় না। সে ভিন্ রাজ্যে সোনার কাজ করতে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাজি তৈরির পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যাওয়ার নজির খুবই কম।
পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীকণ্ঠার উত্তমপুর ছাড়াও ময়নার বাকচা, পাঁশকুড়ার চিল্কা, সাধুয়াপোতা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে বাজি তৈরির কাজ চলছে। এইসব এলাকায় মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনাও ঘটে। তা সত্বেও অধিকাংশ বাজি কারিগরেরা বাজি তৈরির কাজ ছেড়ে আসছে না। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে বাজি তৈরির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়ে থাকে। চলতি বছরেই এরকম বেশ কিছু পরিমাণ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানতে পেরেও অভিযান চালানো হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy