তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ‘খাসতালুকেও’ মাথা তুলছে পদ্ম। শুক্রবার ভোট ছিল তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নৈছনপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির। ফল বেরোতে দেখা যায়, ন’টি আসনের সব কটি’তেই জিতেছেন বিজেপি সমর্থিতেরা। তৃণমূলের ঝুলি শূন্য।
তমলুক ব্লকের অনন্তপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নৈছনপুর সমবায়ের সদস্য ১২৩ জন। ছোট সমবায় হওয়ায় গত তিন দশক ধরে এখানে আলোচনার মাধ্যমে পরিচালন সমিতি গড়া হয়েছে, ভোটাভুটি হয়নি। গত বার যেমন সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থিতেরা মিলিজুলি ভাবে পরিচালন সমিতি গড়েছিলেন। এ বার ভোটাভুটি হতেই ফল গেল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে সমবায় ভোটের এমন ফলে শোরগোল পড়েছে। জেলায় বিজেপি-র কার্যত কোনও সংগঠন নেই। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির পালে হাওয়া লাগলেও এই জেলায় দলের সংগঠন চোখে পড়ার মতো ভাবে বাড়েনি। তা হলে শুভেন্দুর খাসতালুক, যেখানে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি সর্বত্র তৃণমূলের একাধিপত্য, সেখানে বিজেপি দাঁত ফোটাল কী করে?
শুভেন্দু বলেন, “যা বলার, আমাদের স্থানীয় নেতৃত্ব বলবেন।” শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তমলুক ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধক্ষ্য সোমনাথ বেরার বক্তব্য, “ওই সমবায় সমিতি একটা সময় সিপিএমের দখলে ছিল। সিপিএমের লোকেরা এখন বিজেপিতে ভিড়েছে। তারা এ বার বিজেপিকে ভোট দেওয়ায় ওই সমবায়ে এমন ফল হয়েছে।” জেলার সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সিহি অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁদের ভোট বিজেপি-র দিকে যায়নি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ রাশ নিয়ে অধিকারী শিবির বনাম জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরির অনুগামীদের বিরোধের ছায়া এই ভোটেও পড়েছে। পাশাপাশি, জেলার তৃণমূল নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, যে শুভেন্দু একাধিক সমবায়ের চেয়ারম্যান, যিনি রাজ্যের শহরাঞ্চলের সমবায়গুলির মধ্যে বার্ষিক ফলাফলের নিরিখে কাঁথি সমবায় দ্বিতীয় হওয়ায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন, তাঁর এলাকায় সমবায় ভোটে এমন প্রার্থী দেওয়া হল কেন, যাঁরা বিজেপি-র কাছে হেরে যাবেন! যেখানে দলের তরফে এই ভোট পরিচালনার ভার ছিল শুভেন্দু-অনুগামী সোমনাথের হাতে।
অখিল গিরির কটাক্ষ, “নৈছনপুর সমবায় শুভেন্দুবাবুর নিজের লোকসভা এলাকায় পড়ে। উনি সমবায়টা ভাল বোঝেন। তার পরেও কেন ওখানে আমাদের হার হল বুঝতে পারছি না। নিশ্চয়ই এমন প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল, যাদের সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নেই।”
বিজেপি এই জয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদের প্রতিফলন দেখছে। দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অসিত পট্টনায়েক বলেন, “ওই সমবায় নির্বাচনের প্রচারে স্থানীয় কোনও বিষয় ছিল না। আমাদের মূল বক্তব্য ছিল, রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের দুর্নীতি। মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমাদের জয়ী করেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy