Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শ্মশানের জমিতে কার্যালয়, অভিযুক্ত তৃণমূল

খালের পর এ বার শ্মশান! নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় খাল বুজিয়ে দলীয় কার্যালয় তৈরিতে নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের। অভিযোগ, স্থানীয় বেথুয়াডহরি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের মনোরঞ্জন মালাকারের নেতৃত্বে খাল বোজানোর কাজে সমর্থন ছিল খোদ স্থানীয় বিধায়ক কল্লোল খাঁয়ের।

শ্মশান চত্বরে তৈরি হয়েছে তৃণমূলের কার্যালয়।—নিজস্ব চিত্র।

শ্মশান চত্বরে তৈরি হয়েছে তৃণমূলের কার্যালয়।—নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

খালের পর এ বার শ্মশান!

নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় খাল বুজিয়ে দলীয় কার্যালয় তৈরিতে নাম জড়িয়েছিল তৃণমূলের। অভিযোগ, স্থানীয় বেথুয়াডহরি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের মনোরঞ্জন মালাকারের নেতৃত্বে খাল বোজানোর কাজে সমর্থন ছিল খোদ স্থানীয় বিধায়ক কল্লোল খাঁয়ের। এ বার শ্মশানের জমির একাংশ দখল করে দলীয় কার্যালয় তৈরির অভিযোগ উঠল দুরমুঠ অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কাঁথি ৩ ব্লকের গুয়াগেছিয়া এলাকার এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা। সম্প্রতি এ বিষয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয়দের দাবি, গুয়াগেছিয়া মৌজায় খালপাড়ে ২১৭ নম্বর দাগের জমিটি দীর্ঘ দিন ধরে গুয়াগেছিয়া, চাঁদবেড়িয়া-সহ আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা শ্মশান হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। কাঁথি ৩ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বিশ্বরূপ দত্ত জানান, ভূমি দফতরের রেকর্ডেও ২১৭ নম্বর দাগে ১৬ ডেসিমেল জায়গা শ্মশান হিসেবে ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত। তিনি বলেন, “শ্মশানের জমি জবরদখল করে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের থেকে একটি অভিযোগপত্র দফতরে জমা পড়েছে। তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য রেভিনিউ ইন্সপেক্টরকে (আরআই) বলা হয়েছে।”

শ্মশানের জমি জবরদখল হয়ে যাওয়ায় রীতিমত ক্ষুব্ধ স্থানীয়েরা। যদিও শাসক দলের কোপে পড়ার ‘ভয়ে’ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না কেউই। এক প্রৌঢ়ের কথায়, “সিপিএমের সময়েও কিছু অন্যায় কাজ দেখেছি। কিন্তু, শ্মশানের জায়গা দখল করে কার্যালয়! এমনটা আগে দেখিনি।” এ দিকে, জমি দখল করে কার্যালয় তৈরির প্রতিবাদে সিপিএমের মারিশদা জোনাল কমিটি আন্দোলনে নামতে চলেছে।

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, গুয়াগাছিয়া শ্মশানে কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে সম্প্রতি লোহার পাতের চুল্লি বসানো হয়। শ্মশানযাত্রীদের জন্য পাকা বিশ্রামাগারও তৈরি করে দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পরই হঠাৎ দেখা যায়, কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য রঞ্জন মাইতির নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী বিশ্রামাগারের ঠিক পাশেই রীতিমত পাকাপোক্ত অঞ্চল কার্যালয় তৈরি করছেন। রঞ্জন মাইতির সৌজন্যেই ওই অঞ্চল কার্যালয় তৈরি হয়েছে, কার্যালয়ের দেওয়ালের ফলকও তার স্বাক্ষ্য দিচ্ছে!

সব অভিযোগের আঙুল যার দিকে তিনি কী বলছেন?

এলাকার প্রভাবশালী এই তৃণমূল নেতা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “শ্মশানের ধারে খালের খাসজমিতে কার্যালয় তৈরি করতে গিয়ে শ্মশানের কিছুটা জমি পড়লেও পড়তে পারে।” কী করে এমন ভুল হল? তৃণমূল নেতার যুক্তি, “শ্মশান ও খাস জায়গার মধ্যে কোনও সীমারেখা না থাকায়, কোনটা শ্মশান আর কোনটা খাস জমি বোঝা যায় না।” তবে তিনি কবুল করছেন কার্যালয় খাসজমিতেই হয়েছে।

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমোদন ছাড়া খাসজমিতে কার্যালয় তৈরি করাও কি জবরদখল নয়?

দুরমুঠ অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা উপপ্রধান স্বপন মাইতি কিংবা রঞ্জন মাইতি প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, “গ্রামবাসী ও দলীয় কর্মীদের থেকে সাহায্য নিয়েই কার্যালয়টি তৈরি হয়েছে, সেখানে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও রয়েছে।” তাঁদের অভিযোগ, “বিরোধীরা ছাড়াও দলেরই একাংশ বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা করছে।” তাঁরা কারা? জবাবে কিছু বলতে চাননি তাঁরা। সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা, মারিশদা জোনাল কমিটির সম্পাদক কালীপদ শীটের অবশ্য দাবি, “তৃণমূলের কার্যালয়ের গোটা জায়গাটাই শ্মশানের। মাপজোক করলেই তা প্রমাণ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subrata guha party office tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE