রাঙামাটি সর্বজনীনের মণ্ডপে দর্শণার্থীদের ঢল। —নিজস্ব চিত্র।
ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল পঞ্চমীতেই। ষষ্ঠীতে দুই শহরের রাস্তায় একেবারে উপচে পড়া ভিড়। উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে আট থেকে আশি।
এক পঞ্জিকা মতে দুর্গাপুজো এ বার তিন দিনের। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন না। উল্টে পঞ্চমীতেই শুরু হয়ে যায় ঠাকুর দেখা। এ বছর বহু পুজোরই উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে চতুর্থীতে। তখন অবশ্য অনেক মণ্ডপেরই কাজ বাকি ছিল। তবে ষষ্ঠীতে সব মণ্ডপের সাজই সারা হয়ে যায়। সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখা।
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই মেদিনীপুর শহরে পুজো দেখার ভিড় হতে শুরু করে। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড়ও তত বেড়েছে। বিভিন্ন ব্লক থেকেও এদিন অনেকে পুজো দেখতে শহরে আসেন। সারা বছরের দিন যাপনে অন্য মাত্র যোগ করে শারদ্যোৎসব। এখন মেদিনীপুর শহরের পুজো মানেই নতুন কিছু। নতুন ভাবনা। নতুন চিন্তা। শহরে থিম পুজোই বেশি হয়। নানা সাজের মণ্ডপ, প্রতিমা, আলোকসজ্জা। আগে বড় বাজেটের পুজোগুলোয় বেশি ভিড় হত। এখন সেই ছবিটা বদলেছে। ভিড় টানার নিরিখে পিছিয়ে নেই ছোট বাজেটের পুজোগুলোও। ভিড় টানতে উদ্যোক্তারা পুজোর মাধ্যমে নানান বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এ বারও পুজোর শহরে ছবিটা একই। দর্শকদের নজড় কাড়তে চেষ্টার কোনও কসুর বাকি রাখেননি কেউই। এদিন দুপুরের পর থেকেই রাঙামাটি, বার্জটাউন, রবীন্দ্রনগর, অরবিন্দনগর প্রভৃতি পুজোয় ভিড় হতে শুরু করে। বিকেলের পর ভিড় হতে থাকে অশোকনগর, কেরানিতলা, বটতলাচক প্রভৃতি এলাকায়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বেড়েছে। কেউ সপরিবার পুজো দেখতে বেরিয়েছেন। কেউ বা বন্ধুদের সঙ্গে। বাবা- মায়ের সঙ্গে পুজো দেখতে বেরোয় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও।
মিশ্র-সংস্কৃতির শহর খড়্গপুরের বিভিন্ন মণ্ডপে এ দিন সকাল থেকেই সাউন্ড বক্সে বেজেছে বাংলা, হিন্দি, তেলুগু গান। কোথাও আবার ছিল সানাই, আর অবশ্যই ঢাকের বোল। চতুর্থীতেই উদ্বোধন হয়েছে সাউথ-ইস্ট ডেভেলপমেন্টের সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের পুজো। কাঞ্চনজঙ্ঘায় পর্বতারোহী ছন্দা গায়েনের অন্তর্ধানের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। ষষ্ঠীতে জমাটি ভিড় ছিল এই মণ্ডপে। অবাঙালী এলাকা মথুরাকাটিতে নেপালের মন্দিরের আদলে মণ্ডপও দর্শক টেনেছে। আর বাঙালি পল্লি প্রেমবাজারে তাইল্যাণ্ডের শ্বেত বুদ্ধ মন্দির দেখতে ভিড় জমিয়েছেন গাঁ-গঞ্জের বহু মানুষ। খড়্গপুর গ্রামীণের গোপীনাথপুরের অলোক দেব ছেলে সায়ন ও স্ত্রী মনিকাকে নিয়ে দুপুরেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। ঠিকা সংস্থার কর্মী অলোকবাবু বলেন, “ষষ্ঠীতে পথঘাট ফাঁকা থাকবে বলে বেরিয়েছি। কিন্তু এখনই তো দেখছি ভিড় হয়ে গিয়েছে!
প্রতিবছরের মতোই কৌশল্যা সংলগ্ন সাউথ ডেভেলপমেন্ট ‘অভিযাত্রী’-র পুজোতেও ছিল ভিড়। দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মণ্ডপে পিতলে মোড়া প্রতিমা এ বার এখানে আকর্ষণ। ৩০ জন কলেজ ছাত্রের একটি দল মোটরবাইকে শহর পরিক্রমায় করেছে। অনিকেত সেনগুপ্ত, সৌরভ সরকারদের কথায়, “আমরা সকলে এক জায়গায় থাকি না। তাই ষষ্ঠীতে একসঙ্গে ঠাকুর দেখলাম। কলকাতায় পুজো দেখারও প্ল্যান রয়েছে।”
এ দিন মণ্ডপে এসেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা-র ‘শারদ অর্ঘ্যে’র বিচারকরাও। অভিযাত্রীর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয়ন্ত জোয়াদ্দার বলেন, “ষষ্ঠীর সকালে আনন্দবাজার পত্রিকার পাতায় সেরা পাঁচে আমরা এসেছি বলে দেখেছি।” ৯০ বছরের পুরনো গোলবাজার দুর্গামন্দিরের পুজোতেও এ দিন জনসমাগম দেখা গিয়েছে। কর্মকর্তা স্বপন শিকদার জানালেন, যাবতীয় আচার মেনে নিষ্ঠাভরেই পুজো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy