Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

৪৮ ঘণ্টা পরেও অধরা ঘাতক বাবা

ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও হদিস মিলল না শিশুপুত্র খুনে অভিযুক্ত বাবা বিশ্বজিৎ রাণা ওরফে বিশুর। স্ত্রী-র সঙ্গে অশান্তির জেরে বিশ্বজিৎ ছোট ছেলে দেড় বছরের বিকাশের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। শনিবার ভোরে খড়্গপুরের নিমপুরার চুনাবস্তিতে বিশ্বজিতদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের মাঠে বিকাশের মুণ্ডহীন দেহ মেলে। স্বামী বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন তার স্ত্রী বর্ণিতা রাণা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪৪
Share: Save:

ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও হদিস মিলল না শিশুপুত্র খুনে অভিযুক্ত বাবা বিশ্বজিৎ রাণা ওরফে বিশুর। স্ত্রী-র সঙ্গে অশান্তির জেরে বিশ্বজিৎ ছোট ছেলে দেড় বছরের বিকাশের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। শনিবার ভোরে খড়্গপুরের নিমপুরার চুনাবস্তিতে বিশ্বজিতদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের মাঠে বিকাশের মুণ্ডহীন দেহ মেলে। স্বামী বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন তার স্ত্রী বর্ণিতা রাণা।

অভিযোগ পেয়েই বিশ্বজিতের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, ছেলের কাটা মুণ্ড ব্যাগে ভরে মালঞ্চ এলাকায় মামা অজিত রাণার বাড়িতে গিয়েছিল সে। পুলিশকে অজিতবাবু জানিয়েছেন, ভাগ্নেকে মারধর করেন। কিন্তু এক ফাঁকে সে পালিয়ে সাহাচকের দিকে চলে যায়। এরপর বর্ণিতাকে নিয়ে পুলিশ মেদিনীপুরের রাজাবাজারের বিশ্বজিতের পিসির বাড়ি, কোতবাজারে বিশ্বজিৎদের পরিত্যক্ত বাড়ি, খড়্গপুর গ্রামীণের ডিমোলিতে আর এক পিসির বাড়ি, সালুয়ার মেটিয়ায় মাসির বাড়িতে তল্লাশি চালায়। তবে কোথাও পাওয়া যায়নি বিশ্বজিৎকে। ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় বিশ্বজিতের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী-র বাড়িতেও পুলিশ হানা দিয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। নিহত বিকাশের কাটা মুণ্ডটিও মেলেনি।

শনিবার ভোরে বিকাশকে বাড়ি থেকে নিয়ে বিশ্বজিৎ চলে যায় বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন বর্ণিতা। তিনি পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, নেশার টাকা চেয়ে তাঁকে মারধর করত বিশ্বজিৎ। অভিযোগ করত, বিকাশ তার সন্তান নয়। প্রথমে গাড়ি চালকের কাজ করলেও ইদানীং কিছু করত না বিশ্বজিৎ। বর্ণিতার মায়ের পাঠানো সামান্য টাকাতেই সংসার চলত।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিয়মিত নেশার করার পাশাপাশি নানাবিধ কু-সংস্কারে জড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজিৎ। সম্প্রতি নিজেকে তন্ত্রসাধক বলে পরিচয় দিচ্ছিল সে। রাতে স্থানীয় বাঁশপুকুর শ্মশানে দেখা যাচ্ছিল তাকে। ঢেকিয়ায় গিড্ডু জমিদারের পরিত্যক্ত বাড়ি সংলগ্ন এলাকাতেও শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বিশ্বজিৎকে। শনিবার রাতে শ্মশান ও গিড্ডু জমিদারের বাড়ি সংলগ্ন এলাকাতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। স্থানীয় এক মহিলার কথায়, “মাস কয়েক আগেই হাড়গোড় নিয়ে এসেছিল বিশু। বলছিল, তিনটে মাথা পেলে ও নাকি তান্ত্রিক হতে পারবে। আমরা সব পুলিশকে জানিয়েছি।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এই ঘটনা পারিবারিক অশান্তির পরিণতি। তবে পিছনে অন্য কোনও বিষয় রয়েছে কিনা, তা অভিযুক্তকে পেলে জানা যাবে।” তিনি জানান, বিশ্বজিতের মোবাইলও নেই যে টাওয়ার লোকেশন থেকে সে কোথায় আছে জানা যাবে।

বিশ্বজিতের খোঁজ না পাওয়ায় তিন বছরের যমজ ছেলেকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বর্ণিতা। দুই ছেলেকে নিয়ে দিদি গীতা কালিন্দির বাড়িতে থাকছেন তিনি। এলাকায় পুলিশ পাহারা রয়েছে। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বর্ণিতা বলছিলেন, “আমি আর ওই বাড়িতে ফিরতে পারব না। বিশু বাকি দু’টো ছেলেকেও মেরে ফেলবে।” আতঙ্কিত এলাকাবাসীও। বস্তির অদূরে মালঞ্চর বাসিন্দা গৌরব মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্ত ধরা না পড়ায় আতঙ্ক থাকছেই। নেশার ঘোরে তান্ত্রিক হওয়ার বাসনায় তিনটে মাথা খুঁজছে বিশ্বজিৎ। তাই যে কোনও অঘটন ঘটতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khagragpur acused father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE