Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

পথে বেরোতেই ভয় পাচ্ছে কাঞ্চনপুর

জাতীয় সড়কে রাতে নজরদারির সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গেল এক পুলিশ কর্মীর। বছর তেতাল্লিশের পুলিশ কর্মী নবকুমার হাইতের মৃত্যু রেখে গেল অনেক প্রশ্নও। আইনের রক্ষকের নিরাপত্তারই যদি এই হাল হয়, তবে আমজনতার সুরক্ষা কোথায়, উঠল সেই প্রশ্নও।

শোকার্ত নবকুমারের স্ত্রী ও পুত্র

শোকার্ত নবকুমারের স্ত্রী ও পুত্র

আনন্দ মণ্ডল ও সুলগ্না ভট্টাচার্য
মহিষাদল শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:২৯
Share: Save:

জাতীয় সড়কে রাতে নজরদারির সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গেল এক পুলিশ কর্মীর। বছর তেতাল্লিশের পুলিশ কর্মী নবকুমার হাইতের মৃত্যু রেখে গেল অনেক প্রশ্নও। আইনের রক্ষকের নিরাপত্তারই যদি এই হাল হয়, তবে আমজনতার সুরক্ষা কোথায়, উঠল সেই প্রশ্নও। একইসঙ্গে রাতের অন্ধকারে জাতীয় সড়কে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

অন্য দিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতেও গাড়ি নিয়ে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে রুটিন টহলদারিতে বেরিয়েছিল মহিষাদল থানার পুলিশ। গাড়িতে একজন এসআই ও তিন জন কনস্টেবল মিলিয়ে ছিলেন মোট চার জন পুলিশ কর্মী। কাপাসএড়্যা সেতু পেরিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল গাড়ি। রাস্তার ধার দিয়ে যাওয়া দুই যুবককে তখন খুব একটা সন্দেহ হয়নি। ফিরতি পথে অন্য লেন ধরে যাওয়ার সময় হেডলাইটের আলো গিয়ে পড়ে সেই দুই যুবকের গায়েই। গাড়ি থামিয়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে যায় নবকুমার। সন্দেহভাজন দুই যুবকের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সে। কাছে থাকা ব্যাগ দেখতে চাইলে রাজি হয়নি ওই যুবক। নবকুমার ব্যাগ দেখতে জোরাজুরি করে। সেই সময় ওই ব্যাগ থেকেই রিভলভার বের করে গুলি চালায় ওই দুষ্কৃতী। বাকি পুলিশকর্মীরা ধরার চেষ্টা করলেও তাঁরা দু’জনেই পালায়।

হিজলি ক্যানালের কাপাসএড়্যা সেতুর পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে কাঞ্চনপুর গ্রামে যাওয়ার রাস্তা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাঞ্চনপুরের একাধিক হোটেল, লজে দীর্ঘদিন ধরেই বেআইনি কার্যকলাপের রমরমা। দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থল ওই লজগুলিতে মধুচক্র চলে বলেও অভিযোগ। পুলিশ সব জেনে চোখে ঠুলি দিয়ে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা রমেন মল্লিকদের অভিযোগ, ‘‘জাতীয় সড়কের এই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলে। জাতীয় সড়কের ধারে থাকা প্রায় ২০টি ধাবা ও হোটেলে চলে মধুচক্রও। ওই হোটেল গুলিকে কেন্দ্র করেই নানা দুষ্কর্ম চলে।’’ শুক্রবার দুপুরে ময়না-তদন্তের পর নবকুমারের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

নন্দকুমার থেকে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এগোলেই গাড়ুঘাটা। গাড়ুঘাটা আর কাপাসএড়্যার মাঝে রয়েছে একাধিক হোটেল-লজ। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ মাঝে-মধ্যে অভিযান চালায়। হোটেলের ম্যানেজার বা গ্রাহককে আটকও করা হয়। তারপরেও অবাধে চলে বেআইনি কার্যকলাপ। কাপাসএড়্যার রাজারামপুরের বাসিন্দা বনবিহারী রায় জানান, ‘‘প্রায় এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাত ৮টার পর জরুরি প্রয়োজনেও রাস্তায় বেরোতে ভয় লাগে।’’

মহিষাদলের বাসিন্দা রমেন মাইতির অভিযোগ, ‘‘রাস্তার ধারের হোটেলগুলিতে যৌন ব্যবসা চলে। পুলিশের ধরপাকড় চালালে কিছুদিন সব ঠিক থাকে। ফের একই অবস্থা।’’ স্থানীয় সন্দীপ মল্লিকেরও প্রশ্ন, ‘‘পুলিশকেই গুলি খেয়ে মরতে হল কেন? পুলিশেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE