নাগালে: প্রত্নসামগ্রীর প্রদর্শনী গোপ কলেজে। —নিজস্ব চিত্র।
এ যেন চোখের সামনে ইতিহাসের এক-একটা পর্বের জীবন্ত হয়ে ওঠা। মৌর্যযুগের প্রস্তরলিপি ফলক থেকে প্রাগৈতিহাসিকযুগের বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী— এতদিন যা পাঠ্যবইয়ে পড়েছেন, তাই চোখের সামনে দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ইতিহাসের ছাত্রী সায়ন্তী দাস, নৈঋতা বারুইরা। সায়ন্তী বলছিলেন, “বইয়ে প্রত্নসামগ্রীর ছবি দেখেছি। তবে প্রত্নসামগ্রীগুলো এত কাছ থেকে দেখে অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে।” নৈঋতার কথায়, “অনেক কিছু জেনেছি। প্রদর্শনীটি সত্যি দারুণ।”
নানা সময়ের প্রত্নসামগ্রী নিয়ে দু’দিনের এই প্রদর্শনী হল মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা কলেজে (গোপ কলেজ)। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার এবং কলেজের যৌথ উদ্যোগে এই আয়োজন। প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকারের ভ্রাম্যমাণ সংগ্রহশালাটি কলেজে আসে বৃহস্পতিবার। ওই দিনই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। শুধু মেদিনীপুরের এই মহিলা কলেজের ছাত্রীরাই নয়, শহরের অন্য কলেজের পড়ুয়ারাও প্রদর্শনী দেখে গিয়েছেন। মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা জয়শ্রী লাহা বলছিলেন, “প্রদর্শনীটি সকলের ভাল লেগেছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের। এটাই প্রাপ্তি।” প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকারের তরফে কলেজে এসেছিলেন গৌতম কর্মকার। তাঁর বক্তব্য, “গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্র ও প্রত্নসৌধগুলো সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করতেই এই উদ্যোগ। এ বার আমরা কলকাতার এক স্কুলে যাব। সেখানে প্রদর্শনী হবে।”
আরও পড়ুন: অন্য রকম বসন্তোৎসবে প্রস্তুত শাল-পিয়াল বন
প্রাগৈতিহাসিকযুগ থেকে তাম্রপ্রস্তরযুগ, আদি ঐতিহাসিকযুগ থেকে গুপ্তোত্তরযুগ— খননে প্রাপ্ত বিভিন্ন সময়ের প্রত্নসামগ্রী ঠাঁই পেয়েছিল এই প্রদর্শনীতে। গোপ কলেজের ইতিহাসের শিক্ষিকা রিনা পাল জানালেন, এখানে মৌর্যযুগের প্রস্তরলিপি ফলক ছিল। যার প্রত্নস্থল বাংলাদেশের মহাস্থানগড়। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ- পশ্চিম উচ্চভূমি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও উত্তরে হিমালয়, দার্জিলিংয়ের মতো নানা জায়গা থেকে প্রচুর সংখ্যক পাথরের কুড়ুল, হাতকুঠার, ছেদনাস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। এক সময়ে মানুষের হাতে তৈরি পাথরের হাতিয়ারগুলো ছিল সাধারণত তিনকোণা। এই তিনকোণা হাতিয়ারও প্রদর্শনীতে ছিল। পাশাপাশি, আদি- ঐতিহাসিকযুগের প্রত্নসামগ্রীও প্রদর্শিত হয়। কলেজের এক শিক্ষিকার কথায়, “সাধারণভাবে পশ্চিমবঙ্গে আদি-ঐতিহাসিক পর্বের কালক্রম খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ-তৃতীয় শতক থেকে তৃতীয় খ্রিস্টাব্দ। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে শুরু করে খ্রিস্টোত্তর ষষ্ঠ-সপ্তম শতক পর্যন্ত ভারতীয় শিল্পসাধনার বিভিন্নস্তরে ও পর্যায়ে একটি মৌলিক ঐক্য স্পষ্ট ছিল। প্রদর্শনীতেও সেই ঐক্য দেখা গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy