Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এক্সচেঞ্জ অফারে রক্ত

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে রক্তের অপেক্ষায় বসে ছিলেন রিঙ্কু দলুই। পুরনো ঝাড়গ্রামের যুবক রিঙ্কু দলুইয়ের জেঠামশাই ষাটোর্ধ্ব রবি দলুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবাবুর ‘বি’ পজিটিভ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম। তাই ডায়ালিসিসের সময় রক্ত প্রয়োজন।

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জন্য অপেক্ষা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জন্য অপেক্ষা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে রক্তের অপেক্ষায় বসে ছিলেন রিঙ্কু দলুই। পুরনো ঝাড়গ্রামের যুবক রিঙ্কু দলুইয়ের জেঠামশাই ষাটোর্ধ্ব রবি দলুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবাবুর ‘বি’ পজিটিভ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম। তাই ডায়ালিসিসের সময় রক্ত প্রয়োজন। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে কোনও ডিসপ্লে-বোর্ড নেই। ফলে, বোঝার উপায় নেই কত রক্ত মজুত রয়েছে।

জানা গেল, ১০ ইউনিট ‘বি’ পজিটিভ রক্ত আছে। তাহলে রবিবাবুকে রক্ত দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে কেন? ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী থমথমে মুখে জানালেন, “এখন রক্ত দেওয়া হচ্ছে এক্সচেঞ্জ অফারে। না-হলে ভাঁড়ার তো শূন্য হয়ে যাবে।” এক্সচেঞ্জ অফার! ততক্ষণে ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক আলো হাঁসদা কাগজপত্রে সইসাবুদ করে রিঙ্কুকে ডেকে বলেন, “আপনার জেঠুকে রক্ত দিচ্ছি। কিন্তু বিনিময়ে আপনাকেও ভাই এক ইউনিট রক্তদান করতে হবে।”

থতমত রিঙ্কু রক্তদানে সম্মত হন। এরপরই রিঙ্কুর উদ্দেশে ধেয়ে আসে আলোদেবীর প্রশ্নবাণ, ‘সদ্য জনডিস, ম্যালেরিয়া বা টাইফয়েড রোগ হয়নি তো? নেশা করেন না তো? গত রাতে ঘুম হয়েছিল? টিবির বা হার্টের সমস্যার ওষুধ খেতে হয় কী?’ সব প্রশ্নের জবাবে ‘না’ শুনে খুশি হন আলোদেবী। তাঁর নির্দেশে ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী রিঙ্কুকে বগলদাবা করে রক্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য পাশের ঘরে নিয়ে যান। এমন দৃশ্য দেখে রক্তের অপেক্ষায় বসে থাকা আর এক প্রৌঢ় উসখুস করে বলে ওঠেন, “এই রে! আমি তো নেশা করি। তাহলে রক্ত দিতে পারব না। যাই ছেলেকে ডেকে নিয়ে আসি।”

সঞ্জিত গিরির ছেলে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘‘ ছেলের থ্যালেসেমিয়া। মাসে দু’বার রক্তের প্রয়োজন হয়। এ বার রক্তের সঙ্কট খুব বেড়েছে। দেখি কী হয়।’’ একইভাবে, মতিলাল বেরারও বক্তব্য, ‘‘অসুস্থ মায়ের জন্য ‘এ’ পজিটিভ রক্ত নিতে এসেছি। কিন্তু ওই গ্রুপের রক্ত বাড়ন্ত। জানি না কী হবে।’’

চিকিৎসক আলোদেবী বলছেন, “কী করব বলুন তো। ভাঁড়ারে মাত্র কয়েক ইউনিট রক্ত। শিবিরের সংখ্যা হাতে গোনা। রক্ত গ্রহীতার পরিজন-শুভানুধ্যায়ীদের কাছে অনুরোধ করছি। প্রয়োজনীয় এক ইউনিট রক্তের বিনিময়ে আপনাদের যাই গ্রুপ হোক না কেন, এক ইউনিট রক্তদান করুন।” তবে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ পলিসি নেই। প্রতি মাসে ১২৬ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে নিয়মিত একাধিক বার করে রক্তের যোগান দেন ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এ জন্য প্রতি মাসে গড়ে দু’শো ইউনিট রক্ত দিতে হয়।

এ ছাড়া ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল ও বেসরকারি নার্সিংহোমগুলি মিলিয়ে নিয়মিত রক্তের চাহিদা দৈনিক প্রায় ১০ ইউনিট। ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ভোটের জন্য রাজনৈতিক দল ও ক্লাবগুলি ব্যস্ত থাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন খুবই অনিয়মিত। জঙ্গলমহলে ভোট মিটলেও এখন তীব্র গরমে রক্তদান শিবির কার্যত হচ্ছেই না। গত দু’মাসে চারটি শিবির করে পর্যায়ক্রমে মোট ১২১ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই রক্তের ভাঁড়ারে টান পড়ায় এখন এক ইউনিট রক্তদান করলে তবে প্রয়োজনীয় গ্রুপের এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হচ্ছে।

তবে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ মানছেন, বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ গুরুতর আহত হলে তখন চাহিদা মতো রক্তের যোগান দেওয়া কার্যত অসম্ভব। এক সরকারি চিকিৎসক বলেন, ঘাটাল, খড়্গপুর গ্রামীণ ও বাঁকুড়ায় অনেক বেশি রক্তদান শিবির হয়। আপাতত, ওইসব এলাকার শিবিরে গিয়ে ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রক্ত সংগ্রহ করছেন। কিন্তু ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কের নিজস্ব গাড়ি নেই। ফলে, গাড়ির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভরসায় থাকতে হয়।

ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, ‘‘এ বার প্রবল গরমের জন্য শিবির কিছুটা কম হচ্ছে। ঘাটাল ও বাঁকুড়ার শিবির থেকে রক্ত এনে জোগান স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। শিবিরের সংখ্যা বাড়াতে বিএমওএইচ ও ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE