কাজ: রাস্তার অর্ধেকটাই খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি। তাই ৩ মে শহরে আসবেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে দিয়ে একটি জল প্রকল্প উদ্বোধন করানোর কথা ভাবছেন পুরপ্রধান। তাঁর দাবি, অনুষ্ঠান হবে একেবারে নজিরবিহীন।
সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ঝকঝকে একটি রাস্তা রাতারাতি খুঁড়ে ফেলেছে খড়্গপুর পুরসভা। তাও নাকি পূর্ত দফতরের অনুমতি ছাড়াই।
কেন?
রাস্তা খুঁড়ে পাইপ লাইন থেকে জল সংযোগ নিয়ে যাওয়া হবে পুরসভা সংলগ্ন ঝাপেটাপুর মাঠ পর্যন্ত। সেখানে তৈরি হবে অস্থায়ী ফোয়ারা। মাঠের মঞ্চে মন্ত্রী যখন নতুন জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করবেন, তখন ওই ফোয়ারাই জল ছেটাবে। আর সেখানেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
রেল শহরের ব্যস্ততম কৌশল্যা-ঝাপেটাপুরের সড়কের মাঝে পুরসভার অদূরে শনিবার সকাল থেকেই খোঁড়াখুঁড়ি নজরে পড়েছে বাসিন্দাদের। প্রাথমিক ভাবে সকলেই ভেবেছিলেন এলাকা উন্নয়নের স্বার্থেই হয়তো পাইপ লাইনের কাজ হচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা জানা যায় কিছু পরে। বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য এ ভাবে টাকা খরচ করে, সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে অস্থায়ী ফোয়ারা গড়তে রাস্তা ভাঙার প্রয়োজন কোথায়? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
চাপানউতোর আরও বেড়েছে, যখন জানা গিয়েছে, অনুমতি দেওয়া তো দূরের কথা, পুরসভার এমন ‘তুঘলকী’ সিদ্ধান্তের কথা পূর্ত দফতরের জানাও নেই। দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। উন্নয়নমূলক কোনও কাজে জল সংযোগের জন্য রাস্তা খুঁড়তে হলেও আমাদের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু ফোয়ারা তৈরির জন্য রাস্তা ভাঙার কোনও অনুমতি আমরা দিই না।”
পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলর কংগ্রেসের রীতা শর্মা বলেন, “কোনও বাড়িতে জল সংযোগের সমস্যা হলে ওয়ার্ডের ভিতরে রাস্তা কাটতে পুরসভা বাধা দিচ্ছে। পূর্ত দফতরের রাস্তা ফাটিয়ে মন্ত্রীর বিনোদনে অস্থায়ী ফোয়ারা করছে। এটা তো অন্যায়! আমরা এর প্রতিবাদ করব।” শুধু বিরোধী নয়, দলের কাউন্সিলরেরাও এর বিরোধিতা করছেন। প্রাক্তন পুরপ্রধান ও ঝাপেটাপুরেরই (২৮ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর তৃণমূলের রবিশঙ্কর পাণ্ডের দাবি, “প্রয়োজনে জলের ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে ফোয়ারা তৈরি করা যেত। কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে এমনটা হয়েছে বলে আমার ধারণা।”
অবশ্য তেমন কোনও ভুল বোঝাবুঝির কথা জানেন না পুরপুরধান প্রদীপ সরকার। তিনি বেশ খোশমেজাজেই জানিয়েছেন, “মন্ত্রীকে দিয়ে দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করাব। ফোয়ারা দিয়ে ওই উদ্বোধন করাতে চাইছি। তাই পাইপ লাইনের জল এনেই ফোয়ারা তৈরি করছি। আমরা ওই রাস্তা মেরামত করে দেব।” এ কথা শুনে হেসে ফেলেছেন এক কর্মীও। তিনি বলেন, ‘‘জল প্রকল্পের উদ্বোধনে ফোয়ারা গড়তে হয় এমন কথা আগে শুনিনি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তো বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এলাকায় গিয়ে অথবা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে।’’ রাস্তা মেরামতির প্রশ্নেও পুরকর্মীরা বলছেন, ‘‘আস্ত সড়ক ভাঙলে, যতই মেরামত হোক আগের অবস্থায় ফিরে আসে না।’’
বাসিন্দারা নানা রকম অসুবিধার কথা তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। প্রথমত, যত দিন না পাইপের কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন খোঁড়াই থাকবে রাস্তা। কর্মরত এক মিস্ত্রি এ দিন বলেন, ‘‘শুক্রবার রাস্তা খোঁড়া শুরু হয়েছে। একটু সময় তো লাগবেই।’’ তার উপর রয়েছে জল অপচয়ের প্রশ্নও। যাঁরা ফোয়ারা তৈরি করেন, তাঁরা জানাচ্ছেন অস্থায়ী ফোয়ারা করতে গেলে জলে ট্যাঙ্ক নিয়ে গেলই হয়। তাতে ফোয়ারার জল বার বার ফিরে যায় ওই ট্যাঙ্কে। তাতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জলেই কাজ চলে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জলের অপচয় বাড়বে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন এই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা নিয়েও। গত বছর প্রথম বর্ষ পূর্তিতেও বিতর্ক তৈরি করেছিল পুরসভার অনুষ্ঠান। সাধারণ মানুষের করের টাকায় এই জাঁকজমক নিয়ে এ বারও আরও অসন্তুষ্ট স্থানীয়রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy